AC temperature rule 2025: সারা দেশে শিগগিরই চালু হতে চলেছে এক নতুন নিয়ম, যার ফলে আর কোনো এসি-তে তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামানো যাবে না। সরকারের এই সিদ্ধান্তের মূল লক্ষ্য বিদ্যুৎ সাশ্রয়, গ্রিডের ওপর চাপ কমানো এবং পরিবেশ রক্ষার দিকে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে বাড়ি, অফিস, হোটেল, শপিং মল, এমনকি গাড়িতেও এসি-র তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রির নিচে বা ২৮ ডিগ্রির ওপরে সেট করা যাবে না।
বর্তমানে বাজারে বেশিরভাগ এসি-তে ন্যূনতম তাপমাত্রা ১৬ বা ১৮ ডিগ্রি পর্যন্ত নামানো যায়, আবার সর্বোচ্চ ৩০ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়ানো যায়। কিন্তু নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, এসি নির্মাতাদের তাদের পণ্য ও সফটওয়্যার এমনভাবে রূপান্তর করতে হবে যাতে ব্যবহারকারীরা ২০ ডিগ্রির নিচে ঠান্ডা বা ২৮ ডিগ্রির ওপরে গরম করতে না পারেন। বিদ্যুৎ মন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর এই সিদ্ধান্তকে “সাহসী পদক্ষেপ” বলে উল্লেখ করেছেন, যা দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা সামাল দিতে এবং অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ অপচয় কমাতে সহায়ক হবে।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের শহরাঞ্চলে এসি-র ব্যবহার দ্রুত বেড়েছে, যার ফলে গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ চাহিদা রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছেছে। জুন মাসে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা ২৪১ গিগাওয়াটে পৌঁছেছে, যার প্রায় ২০% এসি-র জন্য ব্যবহৃত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসি-র তাপমাত্রা প্রতি ১ ডিগ্রি বাড়ালে বিদ্যুৎ ব্যবহার ৬% পর্যন্ত কমে যায়। অর্থাৎ, ২০ ডিগ্রি ন্যূনতম তাপমাত্রা নির্ধারণ করলে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে এবং গ্রিডে চাপ কমবে।
শুধু বিদ্যুৎ সাশ্রয় নয়, পরিবেশ রক্ষার দিক থেকেও এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ। অধিক বিদ্যুৎ ব্যবহারের ফলে কার্বন নিঃসরণ বাড়ে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। সরকার আশা করছে, এই পদক্ষেপের ফলে তিন বছরে ১৮,০০০ থেকে ২০,০০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে এবং কয়েক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রয়োজন পড়বে না।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেও ভারতের এই সিদ্ধান্ত উল্লেখযোগ্য। ইতালি, স্পেন, গ্রীস, জাপানসহ অনেক দেশেই জনসমাগমস্থলে এসি-র তাপমাত্রা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখার নিয়ম আছে। তবে ভারতের মতো এত ব্যাপকভাবে—বাড়ি, অফিস, যানবাহন—সবক্ষেত্রে এমন সীমা নির্ধারণ বিশ্বের মধ্যে বিরল। ইতালিতে জনসমাগমস্থলে এসি-র ন্যূনতম তাপমাত্রা ২৫-২৭ ডিগ্রি, স্পেনে ২৭ ডিগ্রি, জাপানে ২৮ ডিগ্রি সুপারিশ করা হয়।
বর্তমানে ভারতের ব্যুরো অফ এনার্জি এফিসিয়েন্সি (BEE) ২০২০ সাল থেকেই এসি-র ডিফল্ট সেটিং ২৪ ডিগ্রি রাখার নির্দেশ দিয়েছে, যদিও ব্যবহারকারীরা সেটিং পরিবর্তন করতে পারতেন। নতুন নির্দেশিকা কার্যকর হলে, নির্মাতাদের ডিভাইস ও রিমোট এমনভাবে ডিজাইন করতে হবে যাতে ২০ ডিগ্রির নিচে নামানো বা ২৮ ডিগ্রির ওপরে বাড়ানো সম্ভব না হয়
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই নিয়ম বাস্তবায়ন ও নজরদারির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, যদিও নির্দিষ্টভাবে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, তা এখনো চূড়ান্ত নয়। তবে নির্মাতারা নতুন এসি-তে সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে এই সীমা কার্যকর করবেন। পুরনো এসি-র ক্ষেত্রে আপাতত কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, তবে ভবিষ্যতে নির্দেশিকা আরও কঠোর হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গরমের সময় ১৬-১৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় এসি চালানো স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। আদর্শ আরামদায়ক তাপমাত্রা ২৪-২৬ ডিগ্রি, যা বিদ্যুৎ সাশ্রয় ও স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী। নতুন নিয়মের ফলে ব্যবহারকারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে এবং দায়িত্বশীল বিদ্যুৎ ব্যবহার নিশ্চিত হবে।
সার্বিকভাবে, এসি-র তাপমাত্রা সীমিত করার এই সিদ্ধান্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয়, পরিবেশ রক্ষা এবং দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি শুধু প্রযুক্তিগত বাধ্যবাধকতা নয়, বরং ব্যবহারকারীদের মধ্যে দায়িত্বশীল আচরণ গড়ে তুলতেও সহায়ক হবে।