৩৬ বছর পর ভারতে টেস্ট জয়ের ইতিহাস গড়ল নিউজিল্যান্ড, ৮ উইকেটে হারল ভারত

বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে ভারতকে পরাজিত করে ৩৬ বছর পর ভারতের মাটিতে টেস্ট জয়ের ইতিহাস গড়ল। ১৯৮৮ সালের পর এই প্রথম নিউজিল্যান্ড ভারতের বিপক্ষে…

Ani Roy

 

বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে ভারতকে পরাজিত করে ৩৬ বছর পর ভারতের মাটিতে টেস্ট জয়ের ইতিহাস গড়ল। ১৯৮৮ সালের পর এই প্রথম নিউজিল্যান্ড ভারতের বিপক্ষে ভারতের মাটিতে টেস্ট জিতল।

টম ল্যাথামের নেতৃত্বে নিউজিল্যান্ড দল ১০৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করে মাত্র ২৭.৪ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে জয় নিশ্চিত করল। ম্যাচের শেষদিনে বৃষ্টির কারণে খেলা শুরু হতে দেরি হলেও উইল ইয়ং ও রাচিন রাভিন্দ্রার অপরাজিত ৭৫ রানের জুটি নিউজিল্যান্ডকে ঐতিহাসিক জয়ে পৌঁছে দেয়।

এই জয়ের মাধ্যমে নিউজিল্যান্ড তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ এগিয়ে গেল। ভারতের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের এটি মাত্র তৃতীয় টেস্ট জয়। এর আগে ১৯৬৯ সালে নাগপুরে এবং ১৯৮৮ সালে মুম্বাইয়ে তারা জয়ী হয়েছিল।

অলিম্পিক ভিলেজ: খেলা শেষে নতুন জীবনের সূচনা।

ম্যাচের প্রথম দিন বৃষ্টির কারণে কোনো খেলা হয়নি। দ্বিতীয় দিনে টস জিতে ব্যাটিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত ভারতের জন্য ভুল প্রমাণিত হয়। মেঘলা আবহাওয়ায় নিউজিল্যান্ডের পেসারদের সামনে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা ধুঁকে যায়। ম্যাট হেনরি ও উইলিয়াম ও’রোর্কের বোলিংয়ে ভারত মাত্র ৪৬ রানে অলআউট হয়ে যায়, যা তাদের ঘরের মাঠে সর্বনিম্ন টেস্ট স্কোর।

জবাবে নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ৪০২ রান করে। ডেভন কনওয়ে ৯১ এবং রাচিন রাভিন্দ্রা ১৩৪ রান করেন। টিম সাউদির ৬৫ রানের ইনিংসও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত ৪৬২ রান করে। সরফরাজ খান ১৫০ এবং ঋষভ পন্ত ৯৯ রান করেন। কিন্তু নতুন বলে নিউজিল্যান্ড বোলাররা শেষের ৭ উইকেট মাত্র ৫৪ রানে তুলে নেয়।

শেষদিনে ১০৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নিউজিল্যান্ড দ্রুত রান তোলে। জসপ্রিত বুমরাহ দুটি উইকেট নিলেও উইল ইয়ং ও রাচিন রাভিন্দ্রা দলকে জয়ের বন্দরে ভিড়িয়ে দেন। ইয়ং ৪৮ এবং রাভিন্দ্রা ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন।

এই জয়ের মাধ্যমে নিউজিল্যান্ড ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলে এগিয়ে গেল। অন্যদিকে ভারতের পথ কঠিন হয়ে গেল। আগামী বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে ভারতের ভালো করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

নিউজিল্যান্ডের এই জয় আরও তাৎপর্যপূর্ণ কারণ তাদের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান কেন উইলিয়ামসন চোটের কারণে এই ম্যাচে খেলেননি। টম ল্যাথামের অধিনায়কত্বে প্রথম টেস্টেই এই ঐতিহাসিক জয় নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের জন্য বড় পাওনা।

ভারতের হোম রেকর্ডও এই হারে ক্ষতিগ্রস্ত হলো। ২০০০ সালের পর এই প্রথম কোনো বিদেশি দল ভারতের মাটিতে ১০০+ রান তাড়া করে জিতল। ২০২৪ সালে এটি ভারতের দ্বিতীয় হোম টেস্ট হার, জানুয়ারিতে হায়দরাবাদে ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছিল তারা।

নিউজিল্যান্ডের পেস বোলিং ছিল এই জয়ের মূল চাবিকাঠি। ম্যাট হেনরি ও উইলিয়াম ও’রোর্ক দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৫টি উইকেট তুলে নেন। অন্যদিকে ভারতীয় স্পিনাররা প্রত্যাশিত সাফল্য পাননি। রবীন্দ্র জাদেজা ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন মিলে মাত্র ৬টি উইকেট পেয়েছেন।

১৯৮৭ সালের পর লজ্জাজনক ইতিহাস গড়লো নিউজিল্যান্ড

রাচিন রাভিন্দ্রার পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি এবং দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ৩৯ রান করে তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন। বেঙ্গালুরুতে জন্ম নেওয়া রাভিন্দ্রার জন্য এই পারফরম্যান্স বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

এই হারের পর ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা স্বীকার করেছেন যে প্রথম ইনিংসের ব্যাটিংই ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণ করেছে। তিনি বলেছেন, “৪৬ রানে অলআউট হওয়ার পর ফিরে আসা খুবই কঠিন। আমরা দ্বিতীয় ইনিংসে চেষ্টা করেছি কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারিনি।”

নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টম ল্যাথাম দলের প্রশংসা করে বলেছেন, “এটা অবিশ্বাস্য জয়। ভারতের মাটিতে টেস্ট জেতা সবসময়ই কঠিন। আমাদের বোলাররা দারুণ বল করেছে। ব্যাটসম্যানরাও ভালো করেছে।”

দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে ২৪ অক্টোবর পুনেতে। ভারত নিশ্চয়ই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ড চাইবে এই মোমেন্টাম ধরে রাখতে। ক্রিকেট প্রেমীদের জন্য রোমাঞ্চকর লড়াই অপেক্ষা করছে।

 

About Author
Ani Roy

অনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এডুকেশনে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। শিক্ষার প্রতি গভীর অনুরাগ এবং আজীবন শেখার প্রতি প্রতিশ্রুতি নিয়ে অনি নতুন শিক্ষামূলক পদ্ধতি ও প্র্যাকটিসগুলি অন্বেষণ করতে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তার একাডেমিক যাত্রা তাকে শিক্ষার তত্ত্ব এবং ব্যবহারিক শিক্ষণ কৌশলগুলিতে দৃঢ় ভিত্তি প্রদান করেছে। অনি অন্তর্দৃষ্টি এবং দক্ষতা তার চিন্তাশীল লেখাগুলিতে প্রতিফলিত হয়, যা শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত ও তথ্যপূর্ণ করার উদ্দেশ্যে লেখা। তিনি তার আকর্ষণীয় এবং প্রভাবশালী কাজের মাধ্যমে শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান রাখতে থাকেন।