Newborn jaundice treatment: নবজাতকের জন্ডিস একটি সাধারণ শারীরিক অবস্থা যেখানে শিশুর ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ দেখা দেয়। জন্মের পর প্রথম সপ্তাহে ৬০-৮০% নবজাতকের মধ্যে এই সমস্যা দেখা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি স্বাভাবিক হলেও সময়মতো সঠিক ব্যবস্থা না নিলে জটিলতা দেখা দিতে পারে।
জন্ডিসের প্রাথমিক লক্ষণ চেনার উপায়
-
শিশুর ত্বক ও চোখের হলুদাভাব (মুখ থেকে শুরু হয়ে বুক, পেট ও পায়ের তলায় ছড়িয়ে পড়ে)
-
অস্বাভাবিক কান্না বা অতিরিক্ত ঘুমানো
-
বুকের দুধ ঠিকমতো না খাওয়া
-
গাঢ় হলুদ প্রস্রাব ও ফ্যাকাশে মল
-
হাতের তালু বা পায়ের তলার হলুদ দাগ
নবজাতকের জন্য রেশন কার্ড: পশ্চিমবঙ্গে অনলাইনে আবেদনের সহজ পদ্ধতি ২০২৪
জন্ডিসের ধরন ও কারণ
ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস (৫০% ক্ষেত্রে): লিভারের অপরিপক্কতার কারণে জন্মের ২-৪ দিন পর দেখা যায়, যা সাধারণত ১-২ সপ্তাহে ঠিক হয়।
প্যাথলজিক্যাল জন্ডিস: রক্তের গ্রুপ অসামঞ্জস্য (Rh/ABO ইনকম্প্যাটিবিলিটি), জন্মগত সংক্রমণ বা যকৃতের সমস্যার কারণে ঘটে।
ব্রেস্টমিল্ক জন্ডিস: মায়ের দুধের কিছু উপাদানের প্রভাবে বিলিরুবিন বিপাক বাধাগ্রস্ত হয়।
মায়ের তাৎক্ষণিক করণীয়
১. বুকের দুধ খাওয়ানোর রুটিন বাড়ান:
-
প্রতি ২-৩ ঘণ্টায় অন্তত ৮-১২ বার ফিডিং করান
-
শিশুর ওজন অনুযায়ী দিনে ৪৫০-৬০০ মিলিলিটার দুধ নিশ্চিত করুন
-
সঠিক ল্যাচিং টেকনিক শিখুন (মুখে পুরো নিপল ঢোকানো)
২. শিশুর মল-মূত্র নিরীক্ষণ:
-
প্রথম সপ্তাহে দিনে ৬-৮টি ভেজা ডায়াপার ও ৩-৪বার মল নির্গত হওয়া স্বাভাবিক
-
সবুজ বা হলুদ মল জন্ডিসের লক্ষণ
৩. রোদের ব্যবহার নয়, ফটোথেরাপি:
-
সরাসরি সূর্যালোক এড়িয়ে চলুন (অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করে)
-
চিকিৎসকের পরামর্শে ব্ল্যাঙ্কেট-ভিত্তিক ফটোথেরাপি ব্যবহার করুন
মেডিকেল হেল্পলাইনের সংকেত
-
জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জন্ডিস দেখা দিলে
-
হলুদাভাব হাত-পায়ের তলায় পৌঁছালে
-
শিশু অস্বাভাবিক নিষ্ক্রিয় বা খাওয়া বন্ধ করলে
-
২ সপ্তাহ পরেও জন্ডিস না কমলে
চিকিৎসা পদ্ধতি
পদ্ধতি | বিবরণ | কার্যকারিতা |
---|---|---|
ফটোথেরাপি | বিশেষ নীল আলোতে বিলিরুবিন ভাঙ্গা | ৮৫-৯০% ক্ষেত্রে কার্যকর |
এক্সচেঞ্জ ট্রান্সফিউশন | রক্ত পরিবর্তন (গুরুতর ক্ষেত্রে) | জীবনরক্ষাকারী |
IVIG থেরাপি | Rh অসামঞ্জস্যতায় ব্যবহৃত | ৭৫% ক্ষেত্রে ফটোথেরাপি কমায় |
প্রতিরোধের কৌশল
-
প্রসবপূর্ব রুটিন চেকআপ: মায়ের Rh নেগেটিভ হলে অ্যান্টি-ডি ইনজেকশন নিন
-
কঙ্গো মাল্টিভিটামিন: গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শে সেবন
-
জন্মের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্ক্রিনিং: বিলিরুবিন লেভেল পরীক্ষা
সচরাচর ভুল ধারণা ভাঙুন
-
“জন্ডিসে বুকের দুধ বন্ধ করতে হয়” ➜ সত্য: দুধ খাওয়ানো বাড়ালে বিলিরুবিন কমে
-
“ঘরোয়া চিকিৎসায় সারবে” ➜ সত্য: প্যাথলজিক্যাল জন্ডিসে হাসপাতালে ভর্তি জরুরি
-
“হলুদ গাঁদাফলের রস কাজে আসে” ➜ সত্য: এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে
শীতে হলুদ দুধের অসাধারণ উপকার: স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধে বিস্ময়কর!
মনোসামাজিক সহায়তা
-
পরিবারের সদস্যদের সাথে দায়িত্ব ভাগ করে নিন
-
হাসপাতালে ভর্তি থাকলে স্পর্শ-ভিত্তিক যত্ন (ক্যাঙ্গারু কেয়ার) চালিয়ে যান
-
মানসিক চাপ কমাতে প্রফেশনাল কাউন্সেলিং নিন
এই গাইডলাইন অনুসরণ করলে ৯৫% ক্ষেত্রে জন্ডিস নিরাময় সম্ভব। মনে রাখুন, সময়মাত্রই সেরা ওষুধ। শিশুর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণে কোনও অবহেলা না করে নিয়মিত পেডিয়াট্রিশিয়ানের সাথে যোগাযোগ রাখুন।