RBI new KYC rules: গত ১২ জুন, ২০২৫ তারিখে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) কেওয়াইসি (নো-ইওর-কাস্টমার) সংক্রান্ত নিয়মে বড় পরিবর্তন এনেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাঙ্কে গিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে বা বাড়তি ঝামেলা পোহানোর দিন শেষ হতে চলেছে। গ্রাহকরা এখন আরও সহজে ও দ্রুততার সঙ্গে কেওয়াইসি আপডেট এবং নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ পাবেন, বিশেষত গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জন্য এটি বড় স্বস্তির খবর।
আরবিআইয়ের নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, কেওয়াইসি আপডেটের জন্য গ্রাহকদের আর নির্দিষ্ট শাখায় যেতে হবে না। দেশের যেকোনো শাখা থেকেই কেওয়াইসি আপডেট করা যাবে। শুধু তাই নয়, ব্যাঙ্কের অনুমোদিত বিজনেস করেসপন্ডেন্ট (BC)—যেমন স্থানীয় দোকানদার, এনজিও, স্ব-সহায়ক গোষ্ঠী—এখন গ্রাহকদের কেওয়াইসি আপডেট করতে সাহায্য করতে পারবেন। এতে গ্রামীণ ও দূরবর্তী এলাকার মানুষ সহজেই নিকটবর্তী আউটলেটে গিয়ে কেওয়াইসি আপডেট করাতে পারবেন
নতুন নিয়মে সবচেয়ে বড় স্বস্তি পেয়েছেন ‘লো-রিস্ক’ বা কম ঝুঁকিপূর্ণ গ্রাহকরা। এই ধরনের গ্রাহকরা এখন কেওয়সি আপডেটের নির্ধারিত তারিখের এক বছর পর বা ৩০ জুন, ২০২৬—যেটি পরে—সেই সময়ের মধ্যে কেওয়াইসি আপডেট করতে পারবেন। এই সময়ের মধ্যে তাদের অ্যাকাউন্টে সমস্ত ধরনের লেনদেন চালু থাকবে, যদিও নিয়মিত নজরদারির আওতায় থাকবে। ফলে, অনেকেই আর হঠাৎ করে অ্যাকাউন্ট ব্লক হয়ে যাওয়ার সমস্যায় পড়বেন না।
আরবিআই আরও নির্দেশ দিয়েছে, কেওয়াইসি আপডেটের জন্য ব্যাঙ্কগুলোকে গ্রাহকদের অন্তত তিনবার অগ্রিম নোটিশ দিতে হবে, যার মধ্যে অন্তত একটি চিঠি আকারে পাঠাতে হবে। যদি গ্রাহক নির্দিষ্ট সময়ে কেওয়াইসি আপডেট না করেন, তাহলে আরও তিনবার মনে করিয়ে দিতে হবে, যাতে গ্রাহকরা যথাসময়ে তথ্য আপডেট করতে পারেন এবং অপ্রত্যাশিতভাবে অ্যাকাউন্ট বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি এড়ানো যায়।
গ্রাহকদের সুবিধার্থে ভিডিও কেওয়সি (V-CIP) পদ্ধতি চালু হয়েছে। এর মাধ্যমে গ্রাহকরা বাড়িতে বসেই ভিডিও কলের মাধ্যমে পরিচয় যাচাই ও কেওয়াইসি আপডেট করতে পারবেন। বিশেষত, প্রবীণ নাগরিক, এনআরআই এবং গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষের জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকরী। ভিডিও কেওয়সি পদ্ধতিতে ব্যাঙ্কের একজন অফিসারের সঙ্গে লাইভ ভিডিওর মাধ্যমে গ্রাহকের পরিচয় যাচাই করা হয়, যা নিরাপদ ও বৈধ।
নতুন নিয়মে আধার-ভিত্তিক ই-কে ওয়াইসি, ডিজিলকার ডকুমেন্ট, ওটিপি-ভিত্তিক ই-কে ওয়াইসি এবং সেলফ-ডিক্লারেশনের মাধ্যমে কেওয়াইসি আপডেটের সুযোগ রয়েছে। গ্রাহক যদি আধার কার্ডে থাকা ঠিকানা ছাড়া অন্য ঠিকানায় থাকেন, তাহলে একটি স্বঘোষণা (self-declaration) দিলেই চলবে, বাড়তি কোনো ডকুমেন্ট লাগবে না।
ব্যাঙ্কের বিজনেস করেসপন্ডেন্টরা গ্রাহকের বায়োমেট্রিক যাচাই, ডকুমেন্ট সংগ্রহ, সেলফ-ডিক্লারেশন গ্রহণ এবং ই-কে ওয়াইসি করার দায়িত্ব নিতে পারবেন। তবে, চূড়ান্ত যাচাই ও দায়িত্ব ব্যাঙ্কেরই থাকবে। এর ফলে গ্রামীণ ও আধা-শহুরে অঞ্চলে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা আরও সহজলভ্য হবে।
নতুন নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, কেওয়াইসি আপডেটের জন্য গ্রাহকের যদি কোনো তথ্য পরিবর্তন না হয় বা শুধু ঠিকানা পরিবর্তন হয়, তাহলে শুধু সেলফ-ডিক্লারেশন দিলেই চলবে। বাড়তি কোনো ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে না। এতে প্রবীণ নাগরিক, কর্মসূত্রে অন্যত্র চলে যাওয়া ব্যক্তি, এবং সাধারণ গ্রাহকদের ঝামেলা অনেকটাই কমবে।
আরবিআইয়ের এই পরিবর্তনগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো—ব্যাঙ্কিং পরিষেবা আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, সহজ ও নিরাপদ করা। বিশেষ করে, সরকারি সুবিধাভোগী (DBT, EBT, PMJDY) গ্রাহক, যাদের জন্য কেওয়াইসি আপডেটের জটিলতা ছিল, তারা এখন সহজেই পরিষেবা পাবেন। ব্যাঙ্কগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, গ্রামীণ ও আধা-শহুরে এলাকায় সচেতনতা ক্যাম্প এবং বিশেষ কেওয়াইসি আপডেট ক্যাম্পের আয়োজন করতে, যাতে আরও বেশি মানুষ আনুষ্ঠানিক ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার আওতায় আসেন।
কেওয়াইসি আপডেটের ক্ষেত্রে গ্রাহকের সুবিধার জন্য আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা যায়—
- কেওয়াইসি আপডেটের জন্য এখন থেকে DigiLocker, ই-ডকুমেন্ট, এবং সার্টিফায়েড কাগজপত্র গ্রহণযোগ্য হবে।
- আধার ওটিপি-ভিত্তিক ই-কে ওয়াইসি করলে নির্দিষ্ট শর্তাবলী মানতে হবে, যেমন: এক বছরের মধ্যে পূর্ণ কাস্টমার ডিউ ডিলিজেন্স (CDD) সম্পন্ন করতে হবে, না হলে অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাবে।
- কেওয়াইসি আপডেটের জন্য গ্রাহকের মোবাইল নম্বরের পরিবর্তন হলে, সেটি যাচাইয়ের জন্য ব্যাঙ্কের বোর্ড অনুমোদিত নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।
- কেওয়াইসি আপডেট বা নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার সময় গ্রাহক চাইলে ডিজিটাল কেওয়সি বা ফেস-টু-ফেস পদ্ধতি বেছে নিতে পারবেন।
সব মিলিয়ে, আরবিআইয়ের এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে দেশের কোটি কোটি ব্যাঙ্ক গ্রাহক বিশেষ করে গ্রামীণ ও সাধারণ মানুষ, প্রবীণ নাগরিক, এবং সরকারি সুবিধাভোগীরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন। ব্যাঙ্কিং পরিষেবা আরও সহজ, ঝামেলামুক্ত ও নিরাপদ হবে—এটাই আরবিআইয়ের লক্ষ্য। নতুন কেওয়াইসি নীতিমালার ফলে দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও গ্রাহক সুরক্ষা আরও মজবুত হবে, এমনটাই আশা করা হচ্ছে।