India vs Pakistan military comparison: সামরিক শক্তি এবং কৌশলগত সক্ষমতার নিরিখে ভারত এবং পাকিস্তান উভয়ই বিশ্বের কাছে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বৈরী সম্পর্ক বিদ্যমান, যার ফলে উভয় দেশই নিজেদের সামরিক শক্তিকে ক্রমাগত আধুনিকীকরণ ও প্রসারিত করে চলেছে। এই প্রেক্ষাপটে, পরমাণু অস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধজাহাজ এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামের বিচারে ভারত পাকিস্তানের তুলনায় কোথায় দাঁড়িয়ে, তা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। Global Firepower Index 2025-এর বিচারে ভারত বিশ্বের চতুর্থ শক্তিশালী সামরিক শক্তি হিসেবে স্বীকৃত, যেখানে পাকিস্তান রয়েছে ১২তম স্থানে। এই র্যাঙ্কিং সামরিক সক্ষমতা, অর্থনৈতিক অবস্থা, ভৌগোলিক অবস্থান এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। আজকের নিবন্ধে সামরিক সরঞ্জামের বিস্তার এবং কৌশলগত গভীরতার নিরীখে ভারত-পাকিস্তান এর মধ্যেকার পার্থক্য বিশদে আলোচনা করা হলো।
ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সামরিক শক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সামরিক শক্তির বিস্তার কোনও দেশের ক্ষমতা ও সুরক্ষার অন্যতম পরিচায়ক। এই শক্তি শুধুমাত্র যুদ্ধ বা সংঘর্ষের জন্য নয়, এটি একটি দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং কূটনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সামরিক শক্তি একটি দেশকে বহির্বিশ্বের কাছে আরও বেশি প্রভাবশালী করে তোলে এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সহায়তা করে।
বিষয় | ভারত | পাকিস্তান |
---|---|---|
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার র্যাঙ্কিং | ৪র্থ | ১২তম |
সক্রিয় সামরিক কর্মী | ১৪,৫৫,৫৫০ | ৬,৫৪,০০০ |
রিজার্ভ সেনা | ১১,৫৫,০০০ | |
বিমান বহর | ২,২২৯টি বিমান (৬০০টি ফাইটার জেট অন্তর্ভুক্ত) | ১,৩৯৯টি বিমান (৩২৮টি ফাইটার জেট অন্তর্ভুক্ত) |
যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন | ১৫০টি | |
বিমানবাহী রণতরী | রয়েছে | নেই |
সাবমেরিন | ১৮টি | ৮টি |
পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা | ১৭১টি (২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত) | ১৭০টি (২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত) |
প্রতিরক্ষা বাজেট | ৫.৯৪ ট্রিলিয়ন রুপি (প্রায় $৭৩.৮ বিলিয়ন) | $৬.৩৪ বিলিয়ন |
ক্ষেপণাস্ত্র | পৃথ্বী, অগ্নি, ব্রহ্মোস, পিনাকা, নির্ভয়, প্রলয় (ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং ICBMs অন্তর্ভুক্ত) [4, 16] | শাহীন, ঘুরি, বাবুর, রাদ (MIRV প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত) |
নৌবহরের শক্তি | ১৫৫-১৬০টি যুদ্ধজাহাজ ২০৩০ সালের মধ্যে এবং ১৭৫-২০০টি ২০৩৫ সালের মধ্যে | |
সামরিক জোট | চীনের সাথে সম্পর্কযুক্ত |
ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র, যা এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (SIPRI)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ভারতের কাছে ১৭১টি এবং পাকিস্তানের কাছে ১৭০টি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে । যদিও সংখ্যার বিচারে খুব বেশি পার্থক্য নেই, তবে ভারতের পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের নীতি এবং কৌশলগত অবস্থান দেশটিকে আরও বেশি স্থিতিশীলতা প্রদান করে।
ভারত “নো ফার্স্ট ইউজ” (No First Use) নীতি অনুসরণ করে, যার অর্থ হলো ভারত প্রথম পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে না। তবে, যদি কোনো দেশ ভারতের বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করে, তবে ভারত তার জবাব দিতে প্রস্তুত। এই নীতি ভারতের দায়িত্বশীল পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি প্রতিষ্ঠা করেছে।
পাকিস্তান “নো ফার্স্ট ইউজ” নীতি অনুসরণ করে না। দেশটি কৌশলগত কারণে ছোট আকারের ট্যাকটিক্যাল পরমাণু অস্ত্র তৈরি করেছে, যা ভারতের conventional সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যেতে পারে।
নৌ-বাহিনী কোনো দেশের সামরিক সক্ষমতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভারত মহাসাগরে নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে উভয় দেশই নৌ-বাহিনীকে শক্তিশালী করতে সচেষ্ট। ভারতের নৌ-বাহিনী পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ও আধুনিক।
ভারতের নৌ-বাহিনীতে প্রায় ১৫০টি যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন রয়েছে । অন্যদিকে, পাকিস্তানের নৌ-বহরের আকার তুলনামূলকভাবে ছোট। ভারতের নৌ-বাহিনীতে বিমানবাহী রণতরী (Aircraft Carrier) রয়েছে, যা পাকিস্তানের নেই।
ভারতের নৌ-বাহিনী “ব্লু ওয়াটার নেভি” (Blue-water Navy) হিসেবে পরিচিত, যার অর্থ হলো এটি ভারত মহাসাগর এবং এর বাইরেও নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম। ভারতের নৌ-বাহিনীতে INS Vikramaditya এবং INS Vikrant-এর মতো বিমানবাহী রণতরী রয়েছে, যা সমুদ্রপথে দেশটির সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ভারত ২০৩৫ সালের মধ্যে ১৭৫-২০০টি যুদ্ধজাহাজ যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে, যা দেশটির নৌ শক্তিকে আরও বাড়িয়ে তুলবে ।
বিমান বাহিনী আধুনিক যুদ্ধের একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। আকাশপথে আধিপত্য বজায় রাখতে উভয় দেশই তাদের বিমান বাহিনীকে আধুনিকীকরণে মনোযোগ দিয়েছে। ভারতের বিমান বাহিনী পাকিস্তানের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী।
ভারতীয় বিমান বাহিনীতে ২,২২৯টি বিমান রয়েছে, যেখানে পাকিস্তানের বিমান সংখ্যা ১,৩৯৯টি। ভারতের বিমান বহরে অত্যাধুনিক রাফায়েল (Rafale), সুখোই Su-30MKI-এর মতো ফাইটার জেট রয়েছে, যা দেশটির বিমান শক্তিকে আরও শক্তিশালী করে।
ভারতের বিমান বাহিনীতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, অত্যাধুনিক রাডার ব্যবস্থা এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম রয়েছে, যা এটিকে একটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ভারত নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি তেজস (Tejas) যুদ্ধবিমান যুক্ত করার মাধ্যমে বিমান শক্তিকে আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে।
সামরিক শক্তি এবং অর্থনীতির মধ্যে একটি প্রত্যক্ষ সম্পর্ক বিদ্যমান। একটি শক্তিশালী অর্থনীতি একটি দেশকে আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি ক্রয়ে সহায়তা করে।
ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট পাকিস্তানের তুলনায় অনেক বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল ৫.৯৪ ট্রিলিয়ন রুপি (প্রায় $৭৩.৮ বিলিয়ন), যেখানে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল মাত্র $৬.৩৪ বিলিয়ন ।
ভারতের শক্তিশালী অর্থনীতি দেশটির সামরিক সক্ষমতাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ভারত সামরিক গবেষণা ও উন্নয়নে বেশি বিনিয়োগ করতে সক্ষম, যা দেশটির প্রতিরক্ষা শিল্পকে উন্নত করছে।
ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক হিসাব-নিকাশে চীন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। চীনের সাথে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, যা দেশটির সামরিক আধুনিকীকরণে সহায়তা করছে।
চীন পাকিস্তান কে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করে এবং দেশটির প্রতিরক্ষা অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা করে। চীনের সহায়তায় পাকিস্তান Joint Fighter JF-17 থান্ডার যুদ্ধবিমান তৈরি করেছে, যা দেশটির বিমান বহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
চীনের সাথে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভারতের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ। ভারত মনে করে যে চীন পাকিস্তানের মাধ্যমে দেশটির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
পরমাণু অস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধজাহাজ ও সামরিক সরঞ্জামের বিচারে ভারত পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। Global Firepower Index 2025-এ ভারতের চতুর্থ স্থান এবং পাকিস্তানের ১২তম স্থান এই পার্থক্যের সাক্ষ্য বহন করে। ভারতের বৃহত্তর সামরিক কর্মী, অত্যাধুনিক বিমান বহর, শক্তিশালী নৌ-বাহিনী, উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি এবং বিশাল প্রতিরক্ষা বাজেট দেশটির সামরিক শক্তিকে আরও সুসংহত করেছে।তবে, পাকিস্তানও চীনের সহায়তায় তার সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। কৌশলগত দিক থেকে পাকিস্তান ভারতের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ, কিন্তু সামগ্রিকভাবে সামরিক শক্তির বিচারে ভারত অনেক এগিয়ে।ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশকেই তাদের সামরিক সক্ষমতা বজায় রাখার পাশাপাশি আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করা উচিত। অন্যথায়, এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
মন্তব্য করুন