How to apply for old age allowance: বয়স্ক মানুষদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭-৯৮ সাল থেকে বয়স্ক ভাতা কার্যক্রম চালু করেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় ৬০ লাখ ১ হাজার বয়স্ক নাগরিককে প্রতিমাসে ৬০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। এই ভাতা পেতে এখন আর দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না – অনলাইনে আবেদন করে ঘরে বসেই এই সুবিধা পাওয়া সম্ভব। চলুন জেনে নিই কীভাবে বয়স্ক ভাতার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হয়।
বয়স্ক ভাতা কী এবং এর উদ্দেশ্য
বয়স্ক ভাতা কার্যক্রম হলো বাংলাদেশ সরকারের একটি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি। এর মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের বয়োজ্যেষ্ঠ, দুস্থ এবং স্বল্প উপার্জনক্ষম বা উপার্জনে অক্ষম বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা বিধান করা এবং সমাজে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করা। প্রারম্ভিকভাবে দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটি ওয়ার্ডে ১০ জন (৫ জন পুরুষ ও ৫ জন মহিলা) বয়স্ক ব্যক্তিকে মাসিক ১০০ টাকা হারে ভাতা দেওয়া শুরু হলেও বর্তমানে এই হার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বয়স্ক ভাতার পরিমাণ ১০০ টাকা বেড়ে ৬০০ টাকা হয়েছে। বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ৬০ লাখ বয়স্ক মানুষ এই সুবিধা পেয়ে থাকেন এবং এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৪৩৫০.৯৭ কোটি টাকা।
বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা ও শর্তাবলী
বয়স্ক ভাতা পাওয়ার জন্য আবেদনকারীকে কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা পূরণ করতে হয়:
- বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে
- সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে
- জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন নম্বর থাকতে হবে
- বয়স: পুরুষের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৬৫ বছর এবং মহিলার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৬২ বছর
- আর্থিক অবস্থা: প্রার্থীর বার্ষিক গড় আয় অনূর্ধ্ব ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা হতে হবে
- বাছাই কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত হতে হবে
বয়স নির্ধারণের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন সনদ, এসএসসি/সমমান পরীক্ষার সনদপত্র বিবেচনা করা হয়। কোনো বিতর্ক দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হয়।
বয়স্ক ভাতা কারা পাবেন না?
নিম্নলিখিত ব্যক্তিরা বয়স্ক ভাতা পাওয়ার অযোগ্য:
- সরকারি কর্মচারী পেনশনভোগীরা
- দুঃস্থ মহিলা হিসেবে ভিজিডি কার্ডধারীরা
- অন্য কোনোভাবে নিয়মিত সরকারি অনুদান/ভাতা প্রাপ্তরা
- কোনো বেসরকারি সংস্থা/সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিতভাবে আর্থিক অনুদান/ভাতা প্রাপ্তরা
বয়স্ক ভাতার অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া
বয়স্ক ভাতার অনলাইন আবেদন করার জন্য নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে:
ধাপ ১: আবেদনের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন
সর্বপ্রথম, ব্রাউজারে https://mis.bhata.gov.bd/onlineApplication লিংকটি ওপেন করুন। আপনি সমাজসেবা অধিদপ্তরের বয়স্ক ভাতা আবেদন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করবেন।
ধাপ ২: আবেদনকারীর তথ্য যাচাই
ওয়েবসাইটে প্রবেশের পর:
- কার্যক্রম ড্রপডাউন মেন্যু থেকে “বয়স্ক ভাতা” অপশনটি সিলেক্ট করুন
- যাচাইয়ের ধরণে “জাতীয় পরিচিতি নম্বর” বেছে নিন
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর এবং জন্ম তারিখ প্রদান করুন
- ক্যাপচা পূরণ করে “জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করুন” বাটনে ক্লিক করুন
ধাপ ৩: আবেদনকারীর তথ্য পূরণ
এনআইডি কার্ডের তথ্য যাচাই হয়ে গেলে, আবেদনকারীর নাম এবং বয়স স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূরণ হয়ে যাবে। বাকি তথ্যগুলো নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে পূরণ করুন:
- ব্যক্তিগত তথ্য: মোবাইল নম্বর, ছবি এবং স্বাক্ষর আপলোড করুন
- অতিরিক্ত তথ্য: ধর্ম, বৈবাহিক অবস্থা, শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি পূরণ করুন
ধাপ ৪: যোগাযোগের ঠিকানা
এই অংশে আবেদনকারীর বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা পূরণ করতে হবে:
- বিভাগ, জেলা, উপজেলা/থানা সিলেক্ট করুন
- ইউনিয়ন/ওয়ার্ড/পৌরসভা নির্বাচন করুন
- গ্রাম/মহল্লা, পোস্টকোড, রাস্তা/হোল্ডিং নম্বর লিখুন
ধাপ ৫: বয়স্ক ভাতার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য
এখানে আবেদনকারীর সম্পর্কে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করতে হবে:
- জমির মালিকানা সম্পর্কিত তথ্য
- স্বাস্থ্যগত অবস্থা এবং কর্মক্ষমতা
- সরকারি বা বেসরকারি আর্থিক সুবিধা পান কিনা
- বার্ষিক আয় কত
- বাসস্থান সম্পর্কিত তথ্য
ধাপ ৬: নমিনির তথ্য পূরণ
এই ধাপে একজন নমিনির তথ্য প্রদান করতে হবে। এটি ঐচ্ছিক হতে পারে, তবে প্রদান করলে:
- নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর এবং জন্ম তারিখ দিয়ে যাচাই করুন
- নমিনির ছবি ও স্বাক্ষর আপলোড করুন
- আবেদনকারীর সাথে সম্পর্ক উল্লেখ করুন
ধাপ ৭: আবেদন সাবমিট করুন
সকল তথ্য পূরণ করার পর:
- সমস্ত তথ্য পুনরায় যাচাই করুন
- “সাবমিট” বাটনে ক্লিক করুন
- আবেদনের একটি PDF কপি ডাউনলোড করুন এবং প্রিন্ট করুন
ধাপ ৮: আবেদনের কপি জমা দিন
প্রিন্ট করা আবেদনপত্রে:
- স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান/পৌরসভার কাউন্সিলরের স্বাক্ষর নিন
- সমাজসেবা মাঠকর্মী বা উপজেলা সমাজসেবা অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জমা দিন
আবেদন করার সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
বয়স্ক ভাতার অনলাইন আবেদন করার সময় নিম্নলিখিত কাগজপত্র প্রস্তুত রাখুন:
- জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- স্বাক্ষর (ডিজিটাল ফরম্যাটে)
- ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান/মেম্বার কর্তৃক প্রত্যয়নপত্র
বয়স্ক ভাতা কতবার এবং কীভাবে বিতরণ করা হয়?
বয়স্ক ভাতা বছরে ৪ বার বিতরণ করা হয়:
- প্রথম ত্রৈমাসিক: জুলাই-সেপ্টেম্বর
- দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক: অক্টোবর-ডিসেম্বর
- তৃতীয় ত্রৈমাসিক: জানুয়ারী-মার্চ
- চতুর্থ ত্রৈমাসিক: এপ্রিল-জুন
বর্তমানে ভাতা পরিশোধ ইএফটি (ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) পদ্ধতিতে মোবাইলে করা হয়, যা আগের তুলনায় অনেক সহজ ও দ্রুত।
বয়স্ক ভাতা প্রাপ্তিতে গুরুত্বপূর্ণ টিপস
- সময়মতো আবেদন করুন: বয়স্ক ভাতার আবেদনের একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে। সেই সময়ের মধ্যেই আবেদন করা উচিত।
- তথ্যের সঠিকতা নিশ্চিত করুন: আবেদনে প্রদত্ত সকল তথ্য যেন সঠিক হয় সে বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করুন।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে রাখুন: আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাথে নিয়ে যান।
- অনলাইন সিস্টেমের সমস্যা: মাঝে মধ্যে অনলাইন সিস্টেম উন্নয়নমূলক কাজের কারণে বন্ধ থাকতে পারে। এক্ষেত্রে ধৈর্য ধরুন এবং পরে আবার চেষ্টা করুন।
সামপ্রতিক পরিবর্তন এবং ভাতার পরিমাণ
বয়স্ক ভাতার পরিমাণ এবং উপকারভোগীর সংখ্যা সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে:অর্থবছরউপকারভোগীর সংখ্যাজনপ্রতি মাসিক ভাতার হার (টাকায়)২০২২-২০২৩৫৭,০১,০০০৫০০২০২৪-২০২৫৬০,০১,০০০৬০০
২০২৩ সালে সরকার ৮ বছরের মাথায় বয়স্ক ভাতার পরিমাণ বাড়িয়ে ১০০ টাকা বৃদ্ধি করেছে, ফলে বর্তমানে তা ৬০০ টাকা হয়েছে।
বয়স্ক ভাতা অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া বয়স্ক নাগরিকদের জন্য সরকারি সুবিধা পাওয়ার পথ সহজ করেছে। যদিও মাসিক ৬০০ টাকা ভাতা বর্তমান মূল্যস্ফীতির বাজারে অপ্রতুল বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, তবুও এটি দরিদ্র বয়স্ক নাগরিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা। সরকার ক্রমান্বয়ে এই ভাতার পরিমাণ এবং উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
আপনি বা আপনার পরিবারের কোনো যোগ্য বয়স্ক সদস্য যদি এখনও বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন না করে থাকেন, তাহলে উপরে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করে অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। মনে রাখবেন, সঠিকভাবে আবেদন করলে এবং যোগ্য হলে, আপনি বা আপনার প্রিয়জন এই সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধাটি পেতে পারেন।