ভারতীয় বায়ুসেনার উপ-প্রধান এয়ার মার্শাল নর্মদেশ্বর তিওয়ারি নতুন দিল্লীতে এনডিটিভি ডিফেন্স সামিটে ঐতিহাসিক একটি প্রকাশনায় জানান যে, অপারেশন সিঁদুরে মাত্র ৫০টিরও কম অস্ত্র ব্যবহার করেই পাকিস্তানকে যুদ্ধবিরতির জন্য আবেদন করতে বাধ্য করা হয়েছিল। এই সাফল্য ভারতীয় সামরিক কৌশল ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার এক অভূতপূর্ব প্রমাণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে ২২ এপ্রিল সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষের প্রাণহানির পর, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী ৭ মে অপারেশন সিঁদুর নামে এক নিখুঁত ও মারাত্মক পাল্টা আক্রমণ পরিচালনা করে। এই অভিযানটি কেবল প্রতিশোধমূলক নয়, বরং ভারতের সামরিক দক্ষতা ও আধুনিক প্রযুক্তির শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শনের এক জ্বলন্ত উদাহরণ।
এয়ার মার্শাল তিওয়ারি তাঁর বক্তব্যে জোর দিয়ে বলেন, “আমাদের কাছে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা যে ৫০টিরও কম অস্ত্র ব্যবহার করে আমরা সম্পূর্ণ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। এমনটা আগে কখনো ঘটেনি।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, অভিযানে আক্রান্ত পাকিস্তানি লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে কয়েকটি ১৯৭১ সালের যুদ্ধেও আক্রান্ত হয়নি।
ভারতীয় বায়ুসেনার প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিং বেঙ্গালুরুতে এক অনুষ্ঠানে প্রকাশ করেন যে, অপারেশন সিঁদুরে পাকিস্তানের অন্তত ছয়টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি ছিল যুদ্ধবিমান এবং একটি ছিল বড় আকারের নজরদারি বিমান। ভারতের বিখ্যাত S-400 বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করে এই বিমানগুলো ধ্বংস করা হয়েছিল, যা প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূর থেকে সম্পাদিত হয় – যা ভূমি থেকে আকাশে হামলা চালিয়ে লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসের ক্ষেত্রে এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বড় রেকর্ড।
অভিযানটি শুরু হয় পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত নয়টি জঙ্গি ঘাঁটির বিরুদ্ধে। এর মধ্যে দুটি উচ্চমূল্যের লক্ষ্য ছিল – মুরিদকেতে অবস্থিত লস্কর-ই-তাইবার সদর দপ্তর এবং বাহাওয়ালপুরে জইশ-ই-মহম্মদের প্রধান কার্যালয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণরেখার কাছাকাছি সাতটি লক্ষ্যে আঘাত হানে, যেখানে প্রতিটি আক্রমণ নিখুঁতভাবে পরিকল্পিত ও সম্পাদিত হয়।
অভিযানের সাফল্যের পেছনে রয়েছে ভারতের ইন্টিগ্রেটেড এয়ার কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম (IACCS), যা আক্রমণাত্মক ও প্রতিরক্ষামূলক উভয় কার্যক্রমের মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করেছে। এই ব্যবস্থা ভারতকে প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিয়ে পরবর্তীতে শক্তিশালী পাল্টা আঘাত হানতে সক্ষম করেছে যা পাকিস্তানকে পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে বাধ্য করে।
পাকিস্তান প্রাথমিকভাবে ভারতীয় হামলার জবাবে পাল্টা আক্রমণ চালায় ও কয়েকটি ভারতীয় বায়ুঘাঁটি লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা পরিচালনা করে। কিন্তু ভারতের বহুস্তরের বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যার মধ্যে রয়েছে S-400, আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং অত্যাধুনিক এয়ার ডিফেন্স গান, সফলভাবে এই হামলাগুলো প্রতিহত করে।
অভিযানে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে রয়েছে BrahMos ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, Rafale যুদ্ধবিমান দ্বারা ব্যবহৃত SCALP ক্ষেপণাস্ত্র এবং AASM Hammer বোমা, এবং দূরপাল্লার M982 Excalibur রাউন্ড। বিশেষত লক্ষণীয় যে, এই সমস্ত অস্ত্রব্যবস্থা প্রায়ই দেশীয়ভাবে উৎপাদিত অথবা ভারতে সংযোজিত, যা দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতার অগ্রগতি প্রমাণ করে।
অভিযানের প্রভাব ছিল ব্যাপক ও তাৎক্ষণিক। পাকিস্তানের একাধিক বিমানঘাঁটি, কমান্ড সেন্টার, রাডার স্টেশন ও যুদ্ধবিমানের হ্যাঙ্গার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জ্যাকোবাবাদ বিমানঘাঁটিতে F-16 যুদ্ধবিমানের হ্যাঙ্গার অর্ধেক ধ্বংস হয়ে যায়, এবং ভেতরের বিমানগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুরিদ ও চাকলালাতে কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার এবং কমপক্ষে ছয়টি রাডার স্টেশন ধ্বংস হয়।
চার দিনের তীব্র সংঘর্ষের পর, পাকিস্তানি ডিজিএমও ১০ মে ভারতীয় ডিজিএমও-র সাথে যোগাযোগ করে যুদ্ধবিরতির জন্য অনুরোধ করেন। এই ঘটনা ভারতীয় সামরিক কৌশলের সাফল্য ও পাকিস্তানের উপর ভারতের নিরঙ্কুশ আধিপত্যের স্পষ্ট প্রমাণ।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সংসদে জানান যে, অপারেশনে ১০০-এরও বেশি সন্ত্রাসী, তাদের প্রশিক্ষক ও সহযোগী নিহত হয়েছে। তিনি আরও স্পষ্ট করেন যে, ভারতের এই পদক্ষেপ সম্পূর্ণভাবে আত্মরক্ষামূলক এবং কোনোভাবেই আক্রমণাত্মক বা সম্প্রসারণবাদী নয়।
অপারেশন সিঁদুর ভারতের সামরিক কৌশলে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করেছে। এই অভিযান দেখিয়েছে যে ভারত এখন শুধুমাত্র প্রতিরক্ষামূলক ভূমিকায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং প্রয়োজনে নির্ভুল ও শক্তিশালী আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নিতে সক্ষম। এই অভিযান পাকিস্তানের জন্য একটি কঠোর বার্তা পৌঁছে দিয়েছে যে ভারতীয় ভূখণ্ডে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিটি পদক্ষেপের জবাব দেওয়া হবে বহুগুণ শক্তিতে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অপারেশন সিঁদুরের সাফল্য কেবল সামরিক দক্ষতার প্রমাণ নয়, বরং এটি ভারতের আত্মনির্ভরশীল প্রতিরক্ষা উৎপাদন ক্ষমতা ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতাও প্রদর্শন করেছে। এই অভিযান দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে ভারতের কৌশলগত অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে এবং সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে ভারতের দৃঢ় অবস্থানের বার্তা দিয়েছে।