পশ্চিমবঙ্গে চাঞ্চল্যকর ঘটনায় পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত সন্ন্যাসী কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও জোরপূর্বক গর্ভপাতের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ভারত সেবাশ্রম সংঘের এই সন্ন্যাসীর বিরুদ্ধে এক নারী শিক্ষিকা ২০১৩ সালে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন। অভিযোগকারিণী দাবি করেছেন যে, ছয় মাসের মধ্যে কমপক্ষে ১২ বার তার ওপর যৌন নির্যাতন চালানো হয়েছে এবং পরবর্তীতে তাকে জোরপূর্বক গর্ভপাত করতে বাধ্য করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে নবগ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করার পর এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। অভিযোগকারিণী জানিয়েছেন যে, ২০১৩ সালে কার্তিক মহারাজ তাকে মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম থানা এলাকার চাণক্য এলাকায় অবস্থিত একটি আশ্রমের প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষিকার চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়ে যান। সেখানে তাকে থাকার জন্য একটি পৃথক কক্ষও প্রদান করা হয়।
অভিযোগকারিণীর বর্ণনা অনুযায়ী, আশ্রমে থাকাকালীন এক রাতে হঠাৎ কার্তিক মহারাজ তার কক্ষে প্রবেশ করেন এবং তার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালান। নারীটি জানিয়েছেন যে, তিনি ততদিনে নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে সম্পূর্ণভাবে মহারাজের শরণাপন্ন হয়েছিলেন, যার কারণে প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। জানুয়ারি থেকে জুন ২০১৩ পর্যন্ত এই ছয় মাসে অব্যাহতভাবে তার ওপর যৌন নির্যাতন চালানো হয় বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
Bhool Bhulaiyaa 3: কার্তিক আর্যান, বিদ্যা বালান এবং মাধুরী দীক্ষিতের ত্রিমু
আরও গুরুতর অভিযোগে, নারীটি দাবি করেছেন যে এই নির্যাতনের ফলে তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন এবং পরবর্তীতে তাকে জোরপূর্বক গর্ভপাত করতে বাধ্য করা হয়। এই সমগ্র ঘটনাকে তিনি তার জীবনের দুঃস্বপ্নময় অধ্যায় হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অভিযোগকারিণী আরও জানিয়েছেন যে, কার্তিক মহারাজ তাকে হুমকি দিয়েছিলেন যে, যদি তিনি পুলিশের কাছে যান তাহলে তিনি আত্মহত্যা করবেন।
স্বামী প্রদীপ্তানন্দ নামেও পরিচিত কার্তিক মহারাজ এই বছর পদ্মশ্রী পুরস্কার লাভ করেছেন, যা ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান। তিনি বেলডাঙ্গা ভারত সেবাশ্রম সংঘের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং রাজনৈতিক মহলে বিজেপির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা যায়।
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কার্তিক মহারাজ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন যে তিনি একজন সন্ন্যাসী হিসেবে এ ধরনের বাধা-বিপত্তি অস্বাভাবিক নয়। রঘুনাথগঞ্জে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি বলেছেন, “আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা নিয়ে আমার আইনজীবী যা বলার বলবেন। এটা নিয়ে আমি বিচলিত নই। কোন মহিলা কী অভিযোগ করেছেন আমার জানা নেই।” তিনি আরও বলেছেন যে, বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রী তাকে দাঙ্গাবাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং আইন নিজের গতিতে চলবে।
মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ সুপার কুমার সানি রাজের কার্যালয়ে শুক্রবার অভিযোগকারিণীর সাথে বিস্তারিত সাক্ষাৎ হয়েছে। এই বৈঠকে তিনজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানিয়েছে যে, অভিযোগকারিণীকে তার লিখিত অভিযোগের বাইরেও বিস্তারিত তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে, যার উত্তর তিনি দিয়েছেন। পুলিশ সূত্র নিশ্চিত করেছে যে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তদন্ত চলমান রয়েছে।
রাজনৈতিক মহলে এই ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ বলেছেন, “কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে একজন নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হয়েছে। সুকান্ত মজুমদারের দলের সহায়তায় কার্তিক মহারাজের মতো মানুষেরা এ ধরনের ঘৃণ্য কাজ করার সাহস পায়।” তিনি আরও বলেছেন যে, কার্তিক মহারাজের মতো ব্যক্তিরা শুধু ধর্মীয় নয়, সামাজিক ধর্মেরও কলঙ্ক।
চাঁদির আংটি কোন আঙুলে পরবেন? প্রেমানন্দ মহারাজের পরামর্শ জানুন
এর আগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে নির্বাচনে বিজেপিকে সাহায্য করার এবং তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কাজ করার অভিযোগ এনেছিলেন। এর প্রতিক্রিয়ায় কার্তিক মহারাজ ২০২৪ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তার আশ্রমের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন।
অভিযোগকারিণী জানিয়েছেন যে, এতগুলো বছর তিনি ভয় এবং অসহায়ত্বের কারণে নীরব ছিলেন। কিন্তু এখন সাহস সংগ্রহ করে তিনি ন্যায়বিচারের জন্য এগিয়ে এসেছেন। এই ঘটনা এমন এক সময়ে প্রকাশ পেয়েছে যখন পশ্চিমবঙ্গ সরকার কলকাতার একটি কলেজ ক্যাম্পাসে এক আইন ছাত্রীর গণধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে প্রতিবাদের মুখোমুখি হয়েছে।
তদন্তকারী সংস্থা এই গুরুতর অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে দেখছে এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের বক্তব্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে। এই ঘটনা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং তাদের নেতৃত্বের বিশ্বস্ততা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। সমাজের একটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে থাকা ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক এবং ন্যায়বিচারের জন্য সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে।