পদ্মজা নায়ডু হিমালয়ান জুলজিক্যাল পার্কের (PNHZP) লাল পাণ্ডা সংরক্ষণ ও প্রজনন কর্মসূচি বিশ্ব চিড়িয়াখানা ও অ্যাকোয়ারিয়াম সংস্থার (WAZA) ২০২৪ সালের সংরক্ষণ ও পরিবেশগত স্থায়িত্ব পুরস্কারের জন্য শীর্ষ তিনটি প্রার্থীর মধ্যে স্থান পেয়েছে। এটি ভারতের প্রথম এমন সংরক্ষণ প্রকল্প যা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতির জন্য মনোনীত হয়েছে।
WAZA প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংরক্ষণ প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য এই পুরস্কার প্রদান করে থাকে। এবছর ৭ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে টারঙ্গা চিড়িয়াখানায় অনুষ্ঠিতব্য ৭৯তম WAZA বার্ষিক সম্মেলনে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে। শীর্ষ তিনের মধ্যে স্থান পাওয়ার মাধ্যমে দার্জিলিংয়ের এই চিড়িয়াখানা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে।
PNHZP-এর কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বন্দি অবস্থায় জন্মানো লাল পাণ্ডাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থলে ছেড়ে দেওয়া। ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে চিড়িয়াখানা নয়টি লাল পাণ্ডা (সাতটি মহিলা ও দুটি পুরুষ) পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানে ছেড়ে দিয়েছে। এই উদ্যান ভারত-নেপাল সীমান্তে অবস্থিত এবং লাল পাণ্ডাদের বেঁচে থাকার জন্য আদর্শ পরিবেশ প্রদান করে। ছাড়া পাওয়া সাতটি মহিলা লাল পাণ্ডার মধ্যে তিনটি ইতিমধ্যে বন্য পরিবেশে পাঁচটি শাবকের জন্ম দিয়েছে, যা এই প্রজাতির ভবিষ্যতের জন্য আশাব্যঞ্জক সংকেত।
PNHZP শুধুমাত্র প্রজনন কার্যক্রমেই সীমাবদ্ধ নয়। চিড়িয়াখানাটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বন্যপ্রাণী শাখার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যান এবং আশপাশের দার্জিলিং বিভাগের আবাসস্থল পুনরুদ্ধারের জন্য। আবাসস্থল পুনরুদ্ধার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি নিশ্চিত করে যে লাল পাণ্ডারা তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশে সমৃদ্ধ হতে পারে, যেখানে তারা বনোন্মূলন ও মানুষের অনুপ্রবেশের হুমকির মুখোমুখি হয়।
প্রজনন ও আবাসস্থল পুনরুদ্ধার উদ্যোগের পাশাপাশি, PNHZP বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদারিত্ব করেছে, যার মধ্যে রয়েছে সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি (CCMB), ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (IISER) এবং ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (WII)। এই সহযোগিতাগুলির লক্ষ্য হলো লাল পাণ্ডার জেনেটিক্স, স্বাস্থ্য এবং আচরণ সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক বোঝাপড়া বাড়ানো।
চিড়িয়াখানাটি একটি অত্যাধুনিক বায়োব্যাঙ্কিং ও জেনেটিক রিসোর্স ফ্যাসিলিটি দিয়ে তার সংরক্ষণ প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করেছে। এই সুবিধাটি লাল পাণ্ডা এবং অন্যান্য বিপন্ন প্রজাতির গ্যামেট, টিস্যু এবং DNA-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ জেনেটিক উপাদান সংরক্ষণ করে।
PNHZP-এর লাল পাণ্ডা সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত প্রাণীদের রক্ষা করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর উদ্যোগগুলি পূর্ব হিমালয়ের পারিবেশিক ভারসাম্য পুনরুদ্ধারের একটি বৃহত্তর কৌশলের অংশ, যেখানে লাল পাণ্ডা একটি প্রধান প্রজাতি। তাদের আবাসস্থল রক্ষা করে, চিড়িয়াখানাটি একই বাস্তুতন্ত্রের অন্তর্গত বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীকেও সুরক্ষা দিচ্ছে।
PNHZP শুধু লাল পাণ্ডা নিয়েই কাজ করছে না, বরং অন্যান্য বিপন্ন প্রজাতির সংরক্ষণেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, চিড়িয়াখানাটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বন্দি স্নো লেপার্ড জনসংখ্যার আবাসস্থল। ১৯৮৫ সালে শুরু হওয়া স্নো লেপার্ড সংরক্ষণ প্রজনন কর্মসূচির মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৭৭টি স্নো লেপার্ড জন্ম নিয়েছে।
PNHZP-এর পরিচালক বসবরাজ হোলেয়াচি জানিয়েছেন, “আমাদের অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলে লাল পাণ্ডা সংরক্ষণ প্রজনন কর্মসূচি সফলভাবে চলছে। এই বছর আমরা বন্দি অবস্থায় ৪টি লাল পাণ্ডা শাবকের জন্ম দেখেছি। বর্তমানে আমাদের কাছে ১৯টি লাল পাণ্ডা রয়েছে।”
পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা এই কৃতিত্বের প্রশংসা করে বলেছেন, “এটা একটা বড় অর্জন। আমি বিশেষভাবে তাদের প্রশংসা করতে চাই যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছেন এবং এটা সম্ভব করেছেন। এটা প্রথমবারের মতো ভারতে এমন একটি সংরক্ষণ প্রকল্প বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতির জন্য মনোনীত হয়েছে। এই ধরনের স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে মনোবল বাড়াতে সাহায্য করে এবং আমাদের আরও কঠোর পরিশ্রম করতে সাহায্য করবে।”
70th National Film Awards 2024: ‘আত্তাম’ সেরা চলচ্চিত্র, ঋষভ শেট্টি সেরা অভিনেতা
PNHZP-এর এই সাফল্য শুধু ভারতের জন্যই নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। লাল পাণ্ডা একটি বিপন্ন প্রজাতি, যার বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা মাত্র ১০,০০০ এর কম বলে মনে করা হয়। তাদের সংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে আবাসস্থল হারানো, শিকার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। PNHZP-এর প্রচেষ্টা এই প্রজাতির টিকে থাকার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছে।
WAZA-এর এই স্বীকৃতি PNHZP-কে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরেছে। এটি প্রমাণ করে যে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলিও বিশ্বমানের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ প্রকল্প পরিচালনা করতে সক্ষম। এই স্বীকৃতি অন্যান্য সংরক্ষণ প্রতিষ্ঠানকেও অনুপ্রাণিত করবে এবং বিপন্ন প্রজাতি রক্ষায় আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করবে।