ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক উত্তেজনার আবহে, পাকিস্তান থেকে পরিচালিত এক নতুন ধরনের সাইবার হামলার মুখোমুখি ভারতীয় নাগরিকরা। এই হামলার নাম-ড্যান্স অফ হিলারি অ্যাটাক (Dance of Hillary Attack)। এটি একটি বিপজ্জনক ম্যালওয়্যার, যা হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইমেইল, টেলিগ্রামসহ নানা জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। মূলত ভিডিও বা ডকুমেন্ট ফাইলের ছদ্মবেশে এই ভাইরাস পাঠানো হচ্ছে, যা একবার খুললেই আপনার ডিভাইস হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে, চুরি হতে পারে ব্যক্তিগত ও আর্থিক তথ্য।
পাকিস্তানের নতুন সাইবার যুদ্ধ: কীভাবে ছড়াচ্ছে ড্যান্স অফ হিলারি অ্যাটাক?
ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্ত উত্তেজনার জেরে সামরিক সংঘাতের পাশাপাশি সাইবার যুদ্ধও তীব্র আকার ধারণ করেছে। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের হ্যাকাররা ‘ড্যান্স অফ হিলারি’ নামের ম্যালওয়্যার তৈরি করে ভারতীয় নাগরিকদের টার্গেট করছে। এই ভাইরাসটি মূলত নিচের উপায়ে ছড়ানো হচ্ছে-
- হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইমেইল, টেলিগ্রাম ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে ভিডিও/ডকুমেন্ট ফাইল পাঠিয়ে
- অজানা নম্বর থেকে আসা .exe, .mp4, .pdf ফাইল বা ‘Dance of Hillary’ নামের ভিডিও/ফাইল
- ফেক জব অফার, জরুরি সরকারি নোটিশ বা আকর্ষণীয় পুরস্কারের লোভ দেখিয়ে
- সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর লিঙ্ক শেয়ার করে
ফাইলের নাম অনেক সময় ‘tasksche.exe’ বা ‘Dance of Hillary’ ভিডিওর মতো সন্দেহজনক হয়-এগুলো খুললেই ডিভাইসে ম্যালওয়্যার ইনস্টল হয়ে যায়।
ড্যান্স অফ হিলারি অ্যাটাক কতটা বিপজ্জনক?
এই ম্যালওয়্যার একবার ডিভাইসে সক্রিয় হলে, এটি নিচের ক্ষতি করতে পারে-
- মোবাইল/কম্পিউটার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেওয়া
- ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, পাসওয়ার্ড, ওটিপি, ব্যক্তিগত ছবি, অফিসিয়াল ডকুমেন্ট চুরি
- আর্থিক প্রতারণা বা পরিচয় চুরির ঝুঁকি
- ডিভাইসের ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, লোকেশন ট্র্যাক করা
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই ভাইরাস অত্যন্ত অ্যাডভান্সড টেকনোলজি দিয়ে তৈরি এবং সাধারণ অ্যান্টিভাইরাস অনেক সময় একে ধরতে পারে না।
সাইবার হামলার পিছনের কৌশল: মনস্তাত্ত্বিক ফাঁদ
হ্যাকাররা মানুষের কৌতূহল, লোভ, কিংবা ভয়কে কাজে লাগিয়ে এই হামলা চালাচ্ছে। কখনও বলা হচ্ছে-“দেখুন, গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও”, কখনও “ফ্রি অফার” বা “জরুরি সরকারি নোটিশ”। অনেক সময় আবার আন্তর্জাতিক নম্বর (+৯২) থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কল/মেসেজ আসছে। এসবই আসলে ডিভাইসে ভাইরাস ঢোকানোর ফাঁদ।
কীভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন ড্যান্স অফ হিলারি অ্যাটাক থেকে?
এই মুহূর্তে সতর্কতা অবলম্বনই একমাত্র উপায়। বিশেষজ্ঞরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন-
- অজানা নম্বর বা প্রেরকের পাঠানো ফাইল, ভিডিও, লিঙ্ক কখনও খুলবেন না
- .exe, .mp4, .pdf, .zip ইত্যাদি ফাইল ফরম্যাটে সন্দেহজনক কিছু এলে সঙ্গে সঙ্গে ডিলিট করুন
- হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, ফেসবুকের অটো-ডাউনলোড অপশন বন্ধ রাখুন
- দুই-স্তর নিরাপত্তা (Two-Factor Authentication) চালু রাখুন
- ডিভাইসে শক্তিশালী ও ইউনিক পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন
- নিয়মিত ডেটা ব্যাকআপ রাখুন এবং অ্যান্টিভাইরাস আপডেট করুন
- কোনো আন্তর্জাতিক নম্বর (+৯২) থেকে কল/মেসেজ এলে ব্লক করুন
- সন্দেহজনক কিছু মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে সাইবার সেল বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানান
ভারতের প্রতিক্রিয়া ও সরকারি সতর্কতা
ভারত সরকার ইতিমধ্যেই দেশের সব নাগরিক ও সরকারি সংস্থাকে সতর্ক করেছে। সরকারি বিবৃতিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, অজানা ফাইল বা লিঙ্ক খুলবেন না এবং সন্দেহজনক কিছু দেখলে রিপোর্ট করুন। বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও সাইবার সেলগুলো ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে আছে।
ড্যান্স অফ হিলারি অ্যাটাক: কেন এত আলোচিত?
- এটি পাকিস্তান থেকে সংগঠিত বৃহৎ সাইবার যুদ্ধের অংশ
- সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে সরকারি কর্মচারী-সবাই টার্গেটে
- অত্যাধুনিক টেকনোলজি ও মনস্তাত্ত্বিক কৌশলের মিশেল
- ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যাঙ্ক ডিটেলস, অফিসিয়াল ডেটা-সবই ঝুঁকিতে
শেষ কথা: সতর্ক থাকুন, নিরাপদ থাকুন
ড্যান্স অফ হিলারি অ্যাটাক (Dance of Hillary Attack) কেবল একটি ভাইরাস নয়, এটি বর্তমান সময়ের ডিজিটাল যুদ্ধের এক নতুন রূপ। পাকিস্তান যেভাবে সাধারণ নাগরিকদের টার্গেট করছে, তাতে আমাদের সকলেরই সচেতন থাকা জরুরি। প্রযুক্তির যুগে নিরাপত্তা মানেই শুধুমাত্র সীমান্ত পাহারা নয়, নিজের মোবাইল, কম্পিউটার, সোশ্যাল মিডিয়া-সব কিছুতেই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অজানা কিছু দেখলেই সন্দেহ করুন, নিজের ও দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে সচেতন থাকুন।