ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ যেসব জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, পাকিস্তান সেগুলিই ফের তৈরি করছে। পাকিস্তান সেনা, গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং সরকারের মদতে পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের দুর্গম বনাঞ্চলে গড়ে উঠছে ছোট ছোট ‘হাই-টেক’ জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির। এই উদ্বেগজনক খবর সামনে আসার সাথে সাথেই প্রশ্ন উঠেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা নিয়ে, যারা পাকিস্তানকে আর্থিক সাহায্য প্রদান করে আসছে।
গত মে মাসে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা নিরীহ পর্যটকদের নৃশংসভাবে খুন করার পর, ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি যৌথ সামরিক অভিযান পরিচালনা করে। মঙ্গলবার গভীর রাতে মাত্র ২৫ মিনিটের এই অভিযানে পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়। এই অপারেশনে ভারতীয় সেনা, বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনী যৌথভাবে অংশগ্রহণ করেছিল।
বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি তৎকালীন লাইভ ব্রিফিংয়ে জানিয়েছিলেন যে, পহেলগাঁও হামলার তদন্তে পাকিস্তানের যোগসূত্র সামনে এসেছে এবং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা জড়িতদের ও পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করেছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেছিলেন যে, “ভারত সন্ত্রাসবাদীদের পরিকাঠামো ধ্বংস করার জন্য তার অধিকার প্রয়োগ করেছে”।
Attack on Kashmir Army Camp: রক্তাক্ত উপত্যকা,কাশ্মীরে সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হামলা, বাড়ছে উত্তেজনা
তবে এই সামরিক পদক্ষেপের মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরেই পাকিস্তান আবার তার পুরাতন অভ্যাসে ফিরে গেছে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর অনুযায়ী, গুঁড়িয়ে যাওয়া জঙ্গিঘাঁটিগুলি আবার তৈরি করছে তারা। পাকিস্তানের সেনা, আইএসআই এবং পাক সরকার একযোগে নতুন করে জঙ্গি ঘাঁটি ও লঞ্চপ্যাড তৈরি করছে বলে সূত্রের খবর।
আশঙ্কার বিষয় হল, উন্নত প্রযুক্তিতে সজ্জিত এসব ক্যাম্প তাপ, রাডার ও স্যাটেলাইট চিহ্ন এড়াতে সক্ষম নতুন কৌশল হিসেবে ঘাঁটিগুলিকে ভাগ করে রাখা হচ্ছে—প্রতিটি ক্যাম্পে ২০০-র কম জঙ্গি রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। এর উদ্দেশ্য হল বড় ঘাঁটির পরিবর্তে ছোট ছোট শিবির বানানো, যাতে একসঙ্গে বড় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা কমে।
নিরাপত্তার বিষয়ে পাকিস্তান বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। নিরাপত্তায় থাকছে পাকিস্তান সেনার বিশেষ বাহিনী এবং প্রতিটি শিবিরে আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। পাক সেনার বিশেষ প্রশিক্ষিত সদস্যরা এই ঘাঁটির পাহারায় থাকবেন এবং তাদের হাতে থাকবে থার্মাল সেন্সর, লো-ফ্রিকোয়েন্সি রাডার ও অ্যান্টি-ড্রোন প্রযুক্তি।
এই পুনর্গঠন কার্যক্রমে জড়িত রয়েছে বেশ কয়েকটি কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বাহাওয়ালপুরে এক গোপন বৈঠকে মিলিত হয় জইশ-ই-মহম্মদ, লস্কর-ই-তইবা, হিজবুল মুজাহিদিন ও ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’-এর শীর্ষ নেতারা1। অপারেশন সিঁদুরে নিহতদের জন্য আয়োজন করা শোকসভার ভিডিওও হাতে এসেছে ভারতীয় সংস্থাগুলোর।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, নতুন ক্যাম্প তৈরি হচ্ছে কেল, লিপা, কোটলি, দুধনিয়াল, আঁথমুকাম, ও জংলোরা-র মতো দুর্গম এলাকায়1। এছাড়াও লুনি, পুটওয়াল, টিপু পোস্ট, জামিল পোস্ট, উমরানওয়ালি, চাপরার ফরোয়ার্ড, ছোটা চক এবং জাংলোরা-সহ ভারতীয় হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কয়েকটি স্থানে পুনর্গঠনের কাজ জোর কদমে শুরু হয়েছে।
সবচেয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ হল, বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আন্তর্জাতিক সাহায্যের টাকা ঘুরপথে ঢুকছে এই জঙ্গি পরিকাঠামোর পুনর্গঠনে। আর্থিক দুর্দশার জেরে এডিবির তরফে পাকিস্তানকে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়া হয়েছে এবং আইএমএফ পাকিস্তানকে ঋণ দিয়েছে ৭ বিলিয়ন ডলার। শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করেছে ভারত।
আন্তর্জাতিক সীমান্তেও পাকিস্তান নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। জম্মু অঞ্চলের আন্তর্জাতিক সীমান্তে ভেঙে ফেলা চারটি জঙ্গি লঞ্চপ্যাড — মাসরুর বড়ভাই, চাপরার, লুনি ও শাকরগড়ের ড্রোন সেন্টার ফের সক্রিয় করার চেষ্টা চলছে। গোটা প্রক্রিয়া ভারতীয় নজরদারি এড়াতে পরিকল্পিত।
পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও Pakistan Army কর্তাদের মোটা বেতন!
জইশ-ই-মহম্মদের ক্ষেত্রে বিশেষ উদ্বেগের বিষয় রয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের তরফে চিহ্নিত সন্ত্রাসবাদী মাসুদ আজহার ও তার সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ আবারও শুধু ভারতের বিরুদ্ধেই নয়, বরং আন্তর্জাতিক স্তরে পাকিস্তানের হাতিয়ার হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। মাসুদ আজহারের সাম্প্রতিক বক্তৃতায় তিনি কাশ্মীরে জিহাদ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং এমনকি রামের জন্মভূমি অযোধ্যার মন্দিরে হামলার হুমকিও দিয়েছেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতীয় বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। নিয়ন্ত্রণরেখা ও আন্তর্জাতিক সীমান্তে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। গোয়েন্দাদের মতে, পাকিস্তানের এই পুনর্গঠনের উদ্দেশ্য হল ভারতে ফের জঙ্গি অনুপ্রবেশ চালিয়ে অস্থিরতা তৈরি করা। তবে ভারতীয় বাহিনী নজরদারি আরও জোরদার করেছে এবং উপগ্রহ ও প্রযুক্তিনির্ভর গোয়েন্দা নজরে পাক ঘাঁটিগুলির নড়াচড়া রেকর্ড করা হচ্ছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লি ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রমাণ পেশের তোড়জোড় শুরু করেছে1। পাকিস্তানের এই ধৃষ্টতা প্রমাণ করে যে, দেশটি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দ্বৈত ভূমিকা পালন করে চলেছে এবং আন্তর্জাতিক সাহায্যের অর্থ সন্ত্রাসের অবকাঠামো গড়তে ব্যবহার করছে।