রাজস্থানের বারমেরা সীমান্তে গত শুক্রবার গভীর রাতে বিশেষ বাহিনী ইসলামাবাদ থেকে ভারতে আসা সন্দেহভাজন ‘হিউম্যান জিপিএস’ নেতা রাশিদ আলীর হাটিয়ারের এনকাউন্টারে নিহতের ঘটনা ঘটেছে। সীমান্তের ভাঙা বেড়াজালের ফাঁক, সাঙ্গানায় গিছে ভারতীয় সাঁজোয়া রেললাইনের পাশে, আর গোটা অভিযানে সশস্ত্র আধাত্মিক পথ প্রশস্ত করার পরিকল্পনাকারী ঠিকানা করেই ছিল ইসলামাবাদ। পুলিশ জানায়, রাশিদ ১০ বছরের নির্বাচিত এজেন্ট, ১৫ জনকে ভারতে নিয়মিত ঢুকিয়ে আনতেন।
এই সংঘর্ষের শুরু হয় দেখতে পিরুলিয়ায় ভারতীয় গোয়েন্দা দল পাক সিভিল সার্ভিসের তথ্য নিয়ে অভিযানে নামলে। খবর পেয়ে সেখানেই অবস্থান নিয়েছিলেন রাশিদ আলী ও তার সহযোগীরা। সংঘর্ষে নিহত তিন ভারতীয় সিআইডি সদস্যের লাশ নিয়ে ঘটনাস্থল তল্লাশি করে সেনাবাহিনী। স্পেশাল অপারেশন ইউনিটের হাতে ধরা পড়ে আরও দুই সন্ত্রাসী, যাদের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে সীমান্ত দিয়ে লোক পাঠাতে গড়ে ৫০ হাজার রুপি কমিশন নেওয়ার তথ্য।
পাকিস্তান থেকে ভারতে অনুপ্রবেশের পথে রয়েছে কয়েক দফার ‘গ্যাপ’। প্রথমত, সিন্দ প্রদেশের করাচি-পটিয়ালার বাজেয়াপ্ত তেলবাহী নৌযান ফাঁকি দিয়ে চাঁদপুর উপকূল বরাবর। দ্বিতীয়ত, রাওয়ালপিন্ডি-লুধিয়ানার পিন্ডির ধোপিয়া সড়কের গোপন বন্দর। তৃতীয়ত, জম্মু-সুশ পাইকগাছি হাইওয়েতে নির্মিত একাব্বিশটি কিলোমিটার দীর্ঘ অবৈধ সব রাস্তা। চতুর্থত, আহমদপুর সীমান্তে চিৎকার রাজমিস্ত্রি ভর করে দেয় মানুষের তৈরি ছোট নৌকা। শেষমেশ বাস যারা উঠে পড়ে গেল বৃদ্ধ-শিশুকে ঢোকার টিকিট নিয়েই গ্রেপ্তার হচ্ছিল।
ভারতীয় সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী (BSF) জানিয়েছেন, গত তিন বছরে তারা প্রায় দুই হাজার ‘হিউম্যান জিপিএস’ গ্রেপ্তার করেছে, যাদের বেশির ভাগেই অস্ত্র পাচার ও গুপ্তমার্গের তথ্য সরবরাহের ঘটনা রয়েছে। প্রতিটি এজেন্টকে মাঝেমধ্যে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হতো; এদের সেন্সর এনক্রিপ্টেড চিপ দিয়ে সঙ্কেত পাঠানো হতো পাকিস্তানে বসা মাষ্টারের কাছে। এ নামধারী এজেন্টদের পেছনে ছিল পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের ছায়া।
এনকাউন্টারের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক আজ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সীমান্ত সুরক্ষা জোরদার করতে নতুন ‘ড্রোন সার্চ উইং’ চালু হচ্ছে। পাশাপাশি এলাকাবাসীর সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতে ‘সীমান্ত_watch’ মোবাইল প্ল্যাটফর্ম চালু হচ্ছে, যেখানে সিসিটিভি ফুটেজ দেয়া যাবে। স্থানীয় জনসভায় আরও বেশি সচেতনতা বাড়াতে বৃহস্পতিবার থেকেই বিএসএফের ক্যাম্পে বিভিন্ন ওয়ার্কশপ শুরু হতে চলেছে।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজস্থানের রাজ্যপাল মন্ত্রকের কাছে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছেন এবং কলকাতায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দফতর (CBI) ঢুকে পড়েছে। পাকিস্তানে বিষয়টির কথা বাংলানিউজের প্রতিবেদনে নিশ্চিত করেছে পাকিস্তানি সাংবাদিক কামাল হোসেন। তবে অফিসিয়াল ইস্টিমেশন না পাওয়া পর্যন্ত এ ঘটনায় কারপক্ষীয় বিবৃতি প্রকাশ হয়নি।
পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে বিগত দশ বছরে অনুপ্রবেশের চেষ্টা ও উদ্ধার হওয়া ‘হিউম্যান জিপিএস’র তালিকায় রাশিদের নামই ছিল শেষ। তার গ্রেফতার ও পরবর্তীতে এনকাউন্টারে নিহত হওয়া যেন বিশ্বস্ততা ও দেহত্যাগের চোখে সমানাভাবে প্রতিবাদ করল জাতীয় সুরক্ষা সংস্থা। পরবর্তীতে এই মডেল অনুযায়ী আরও অভিযানের ঘোষণা আসতে পারে।
বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ‘হিউম্যান জিপিএস’-এর হদিশ পাওয়ার পর থেকেই ভারত–পাক সম্পর্ক জেঁকে বসেছে নতুন সংকটে। ভবিষ্যতে সন্ত্রাস প্রতিরোধে সীমান্ত সুরক্ষার মডেল পরিবর্তনের দিকে নজর দিচ্ছে দুই দেশই।