প্যানক্রিয়াটাইটিস আসলে কী এবং কেন খাদ্য তালিকা এত গুরুত্বপূর্ণ

প্যানক্রিয়াটাইটিস বা অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ একটি গুরুতর অবস্থা, যেখানে সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা আরোগ্যের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই রোগে অগ্ন্যাশয়কে বিশ্রাম দেওয়া এবং প্রদাহ কমানোর জন্য একটি সুপরিকল্পিত ডায়েট অনুসরণ…

Debolina Roy

 

প্যানক্রিয়াটাইটিস বা অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ একটি গুরুতর অবস্থা, যেখানে সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা আরোগ্যের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই রোগে অগ্ন্যাশয়কে বিশ্রাম দেওয়া এবং প্রদাহ কমানোর জন্য একটি সুপরিকল্পিত ডায়েট অনুসরণ করা অপরিহার্য। একটি সঠিক খাদ্য তালিকা শুধুমাত্র রোগের লক্ষণ যেমন – তীব্র পেট ব্যথা, বমি এবং হজমের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে না, বরং এটি অগ্ন্যাশয়ের আরও ক্ষতি রোধ করে এবং রোগীর দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা একমত যে, কম চর্বিযুক্ত, পুষ্টিকর এবং সহজে হজমযোগ্য খাবার গ্রহণ প্যানক্রিয়াটাইটিস ব্যবস্থাপনার মূল ভিত্তি। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ডায়াবেটিস অ্যান্ড ডাইজেস্টিভ অ্যান্ড কিডনি ডিজিজেস (NIDDK)-এর মতে, দীর্ঘস্থায়ী প্যানক্রিয়াটাইটিসের ক্ষেত্রে সঠিক পুষ্টি গ্রহণ অপুষ্টি এবং অন্যান্য জটিলতা প্রতিরোধে সহায়তা করে।

এই আর্টিকেলে আমরা প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগীদের জন্য একটি বিজ্ঞানসম্মত এবং বিস্তারিত খাদ্য তালিকা নিয়ে আলোচনা করব। এখানে কী খাবেন, কী এড়িয়ে চলবেন, একটি নমুনা ডায়েট প্ল্যান এবং জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য দেওয়া হয়েছে, যা আপনাকে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে সাহায্য করবে।

 প্যানক্রিয়াটাইটিস আসলে কী এবং কেন খাদ্যাভ্যাস এত গুরুত্বপূর্ণ?

প্যানক্রিয়াটাইটিস বোঝার আগে আমাদের অগ্ন্যাশয় (Pancreas) সম্পর্কে জানা দরকার। এটি আমাদের পেটের উপরের অংশে অবস্থিত একটি গ্রন্থি, যা দুটি প্রধান কাজ করে:

  1. হজমে সাহায্যকারী এনজাইম তৈরি করা: এই এনজাইমগুলো খাদ্য থেকে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং চর্বি ভেঙে পুষ্টি শোষণে সাহায্য করে।
  2. হরমোন তৈরি করা: ইনসুলিন এবং গ্লুকাগনের মতো গুরুত্বপূর্ণ হরমোন তৈরি করে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

প্যানক্রিয়াটাইটিস হলো এই অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ বা জ্বালা। এটি তখন ঘটে যখন হজমে সাহায্যকারী এনজাইমগুলো অগ্ন্যাশয়ের ভিতরেই সক্রিয় হয়ে যায় এবং অঙ্গটির কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে শুরু করে। এর ফলে তীব্র ব্যথা এবং অন্যান্য গুরুতর উপসর্গ দেখা দেয়।

 প্যানক্রিয়াটাইটিসের প্রকারভেদ

সাধারণত প্যানক্রিয়াটাইটিস দুই ধরনের হয়:

  • অ্যাকিউট বা তীব্র প্যানক্রিয়াটাইটিস (Acute Pancreatitis): এটি হঠাৎ করে শুরু হয় এবং কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে। সঠিক চিকিৎসায় বেশিরভাগ রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন। এর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে পিত্তথলির পাথর এবং অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন।
  • ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী প্যানক্রিয়াটাইটিস (Chronic Pancreatitis): এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী অবস্থা যেখানে অগ্ন্যাশয়ের বারবার প্রদাহের ফলে স্থায়ী ক্ষতি হয়। দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত মদ্যপান এর সবচেয়ে সাধারণ কারণ। The Lancet জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, বিশ্বব্যাপী ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিসের প্রায় ৪২% შემთხვევাই অ্যালকোহলের সাথে সম্পর্কিত।

 খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা

প্যানক্রিয়াটাইটিসের ব্যবস্থাপনায় খাদ্যাভ্যাস একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। যখন আমরা খাবার খাই, বিশেষ করে চর্বিযুক্ত খাবার, তখন অগ্ন্যাশয়কে হজমের জন্য এনজাইম নিঃসরণ করতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। একটি প্রদাহযুক্ত অগ্ন্যাশয়ের উপর এই অতিরিক্ত চাপ ব্যথা এবং ক্ষতি আরও বাড়িয়ে তোলে।

তাই, প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগীর খাদ্য তালিকার মূল উদ্দেশ্য হলো:

  1. অগ্ন্যাশয়কে বিশ্রাম দেওয়া: কম চর্বিযুক্ত এবং সহজে হজমযোগ্য খাবার গ্রহণ করে অগ্ন্যাশয়ের কাজের চাপ কমানো।
  2. প্রদাহ কমানো: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
  3. পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করা: এই রোগে প্রায়শই পুষ্টির শোষণ ব্যাহত হয়, তাই পর্যাপ্ত প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা অপরিহার্য।
  4. পুনরায় আক্রমণ প্রতিরোধ করা: সঠিক ডায়েট মেনে চললে, বিশেষ করে অ্যালকোহল এবং উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করলে, রোগের পুনরাবৃত্তি হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

 প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগীর খাদ্য তালিকা: কী খাবেন এবং কী এড়িয়ে চলবেন

সঠিক খাবার নির্বাচন করা প্যানক্রিয়াটাইটিস থেকে আরোগ্যের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে। নিচে একটি বিস্তারিত তালিকা দেওয়া হলো, যা আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।

 যে খাবারগুলো আপনার খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করবেন (কী খাবেন)

আপনার প্রধান লক্ষ্য হবে কম চর্বি (Low-Fat), উচ্চ প্রোটিন (High-Protein) এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (Antioxidant) সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা।

 ১. চর্বিহীন প্রোটিন (Lean Protein)

প্রোটিন শরীরের টিস্যু মেরামত এবং পুনরুদ্ধারের জন্য অপরিহার্য। তবে উচ্চ চর্বিযুক্ত প্রোটিন উৎস এড়িয়ে চলতে হবে।

  • পোল্ট্রি: চামড়া ছাড়া মুরগির মাংস (বুকের অংশ)।
  • মাছ: কম চর্বিযুক্ত মাছ যেমন রুই, কাতলা, তেলাপিয়া, কড। স্যামন বা টুনা মাছের মতো ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে, কারণ এটি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
  • ডিম: ডিমের সাদা অংশ প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস। কুসুম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, কারণ এতে চর্বি বেশি থাকে।
  • ডাল ও বিনস: মসুর ডাল, মুগ ডাল, ছোলা, রাজমা ইত্যাদি উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিনের দারুণ উৎস। এগুলি ফাইবার সমৃদ্ধ এবং চর্বি প্রায় থাকে না।
  • টফু এবং সয়া পণ্য: নিরামিষাশীদের জন্য টফু একটি আদর্শ চর্বিহীন প্রোটিন।

 ২. জটিল শর্করা (Complex Carbohydrates)

জটিল শর্করা ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।

  • গোটা শস্য: ওটস, ব্রাউন রাইস, কুইনোয়া, ডালিয়া।
  • শাকসবজি: আলু (সিদ্ধ বা বেকড), মিষ্টি আলু, কুমড়া, গাজর, বিট।
  • রুটি: সাদা পাউরুটির পরিবর্তে হোল-গ্রেইন বা আটার রুটি বেছে নিন।

 ৩. ফল এবং শাকসবজি

এগুলিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং ফাইবার থাকে, যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে অগ্ন্যাশয়ের নিরাময়ে সহায়তা করে।

  • সবুজ শাক: পালং শাক, কেল, ব্রকলি, মেথি শাক।
  • রঙিন সবজি: বেল পেপার (ক্যাপসিকাম), টমেটো (রান্না করা), গাজর।
  • ফল: ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, বেদানা, আপেল (খোসা ছাড়া), পেঁপে। এই ফলগুলি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর।

 ৪. স্বাস্থ্যকর ফ্যাট (সীমিত পরিমাণে)

যদিও চর্বি সীমিত করা প্রয়োজন, তবে অল্প পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট শরীরের জন্য উপকারী।

  • অ্যাভোকাডো: মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের ভালো উৎস।
  • বাদাম: প্রতিদিন অল্প পরিমাণে (৪-৫টি) আমন্ড বা আখরোট।
  • বীজ: ফ্ল্যাক্সসিড, চিয়া সিড।
  • তেল: রান্নার জন্য খুব অল্প পরিমাণে অলিভ অয়েল বা ক্যানোলা অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে।

 ৫. কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য (Low-Fat Dairy)

ক্যালসিয়াম এবং প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য বেছে নিন।

  • দুধ: স্কিমড বা ফ্যাট-ফ্রি দুধ।
  • দই: ফ্যাট-ফ্রি টক দই প্রোবায়োটিকের একটি ভালো উৎস, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
  • পনির: লো-ফ্যাট পনির বা কটেজ চিজ।

 ৬. পর্যাপ্ত তরল

ডিহাইড্রেশন প্যানক্রিয়াটাইটিসের অবস্থাকে আরও খারাপ করতে পারে। তাই শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা অত্যন্ত জরুরি।

  • জল: সারাদিন ধরে প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন।
  • পরিষ্কার স্যুপ: সবজি বা চিকেনের ক্লিয়ার স্যুপ পুষ্টি এবং হাইড্রেশন উভয়ই সরবরাহ করে।
  • ডাবের জল: এটি ইলেক্ট্রোলাইটের একটি চমৎকার প্রাকৃতিক উৎস।
  • হার্বাল চা: ক্যামোমাইল বা আদা চা হজমে সাহায্য করতে পারে।

যে খাবারগুলো কঠোরভাবে এড়িয়ে চলবেন (কী খাবেন না)

কিছু খাবার অগ্ন্যাশয়কে উত্তেজিত করে এবং প্রদাহ ও ব্যথা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এই খাবারগুলো তালিকা থেকে বাদ দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 ১. উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার (High-Fat Foods)

এই খাবারগুলো হজম করতে অগ্ন্যাশয়কে সবচেয়ে বেশি কাজ করতে হয়।

  • ভাজা খাবার: সিঙাড়া, চপ, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ভাজা চিকেন বা মাছ।
  • রেড মিট: খাসির মাংস (Mutton), গরুর মাংস (Beef), শুয়োরের মাংস (Pork)।
  • প্রক্রিয়াজাত মাংস: সসেজ, সালামি, বেকন।
  • পূর্ণ ননীযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য: ফুল-ক্রিম দুধ, চিজ, মাখন, ঘি, ক্রিম।
  • বাদামের মাখন: পিনাট বাটার বা অন্যান্য নাটি বাটারে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে।

 ২. প্রক্রিয়াজাত এবং ফাস্ট ফুড (Processed & Fast Foods)

এগুলিতে প্রচুর পরিমাণে অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট, সোডিয়াম এবং কৃত্রিম উপাদান থাকে।

  • প্যাকেটজাত স্ন্যাকস: চিপস, কুকিজ, ক্র্যাকার্স।
  • ফাস্ট ফুড: পিৎজা, বার্গার।
  • ফ্রোজেন মিল: রেডি-টু-ইট বা ফ্রোজেন ডিনার।

 ৩. পরিশোধিত শর্করা এবং চিনিযুক্ত পানীয় (Refined Carbs & Sugary Drinks)

এগুলি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয় এবং অগ্ন্যাশয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

  • সাদা আটার পণ্য: সাদা পাউরুটি, পাস্তা, ময়দার তৈরি লুচি বা পরোটা।
  • মিষ্টি: কেক, পেস্ট্রি, ক্যান্ডি, আইসক্রিম।
  • চিনিযুক্ত পানীয়: সোডা, কোলা, প্যাকেটজাত ফলের রস।

 ৪. অ্যালকোহল (Alcohol)

প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগীদের জন্য অ্যালকোহল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অ্যালকোহল অগ্ন্যাশয়ের জন্য অত্যন্ত বিষাক্ত এবং এটি তীব্র অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর মতে, অ্যালকোহল সেবন বিশ্বব্যাপী অনেক হজমজনিত রোগের, বিশেষ করে প্যানক্রিয়াটাইটিসের অন্যতম প্রধান কারণ। এমনকি অল্প পরিমাণে অ্যালকোহলও গুরুতর ক্ষতি করতে পারে এবং আরোগ্য প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

 ৫. ধূমপান এবং তামাক (Smoking & Tobacco)

ধূমপান প্যানক্রিয়াটাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায় এবং অবস্থার অবনতি ঘটায়। এটি অগ্ন্যাশয় ক্যান্সারের ঝুঁকিও বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

 একটি নমুনা খাদ্য তালিকা (Sample Diet Plan)

এখানে একজন প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগীর জন্য একটি দিনের নমুনা খাদ্য তালিকা দেওয়া হলো। মনে রাখবেন, এটি একটি সাধারণ নির্দেশিকা। আপনার শারীরিক অবস্থা, বয়স এবং পুষ্টির চাহিদা অনুযায়ী একজন ডাক্তার বা ডায়েটিশিয়ানের সাথে পরামর্শ করে আপনার নিজস্ব ডায়েট প্ল্যান তৈরি করা উচিত।

খাবারের সময় খাবার পরিমাণ
সকালের নাস্তা ওটমিলের পরিজ (জলে বা স্কিমড দুধে তৈরি), সাথে কয়েকটি ব্লুবেরি ও সামান্য মধু। ১ বাটি
মধ্য-সকালের স্ন্যাক একটি সেদ্ধ আপেল বা এক বাটি পেঁপে। মাঝারি আকারের
দুপুরের খাবার সিদ্ধ ব্রাউন রাইস, চামড়া ছাড়া মুরগির মাংসের পাতলা ঝোল, সবজি সেদ্ধ (গাজর, বিনস)। ভাত – ১ কাপ, চিকেন – ২ পিস, সবজি – ১ বাটি
বিকেলের স্ন্যাক লো-ফ্যাট টক দই বা এক গ্লাস ডাবের জল। দই – ১ কাপ / ডাবের জল – ১ গ্লাস
রাতের খাবার সবজির স্যুপ, সাথে এক পিস বেকড বা স্টিমড মাছ এবং আটার রুটি। স্যুপ – ১ বাটি, মাছ – ১ পিস, রুটি – ১-২টি
শোবার আগে এক গ্লাস স্কিমড দুধ বা ক্যামোমাইল চা। ১ গ্লাস

গুরুত্বপূর্ণ নোট: দিনে তিনবার বড় আহারের পরিবর্তে, ৫-৬ বার ছোট ছোট অংশে খাবার খান। এটি হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং অগ্ন্যাশয়ের উপর চাপ কমায়।

জীবনযাত্রায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন (Lifestyle Modifications)

শুধুমাত্র খাদ্য তালিকা মেনে চলাই যথেষ্ট নয়, কিছু জীবনযাত্রার পরিবর্তনও দ্রুত আরোগ্যের জন্য অপরিহার্য।

  1. ধূমপান ও মদ্যপান সম্পূর্ণ ত্যাগ করুন: আগেই বলা হয়েছে, এই দুটি অভ্যাস অগ্ন্যাশয়ের সবচেয়ে বড় শত্রু। সম্পূর্ণভাবে এগুলি ত্যাগ করা বাধ্যতামূলক।
  2. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন: শরীরকে সুস্থ হওয়ার জন্য সময় দিন। বিশেষ করে তীব্র আক্রমণের পরে পর্যাপ্ত বিশ্রাম অত্যন্ত জরুরি।
  3. মানসিক চাপ কমান: মানসিক চাপ হজম প্রক্রিয়ার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যোগা, ধ্যান বা হালকা ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  4. নিয়মিত ব্যায়াম করুন: চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হালকা ব্যায়াম, যেমন হাঁটা, শুরু করতে পারেন। এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে।
  5. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন: অতিরিক্ত ওজন প্যানক্রিয়াটাইটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। একটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা জরুরি।
  6. এনজাইম সাপ্লিমেন্ট: ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিসের ক্ষেত্রে, ডাক্তার হজমে সাহায্য করার জন্য প্যানক্রিয়াটিক এনজাইম সাপ্লিমেন্ট (Pancreatic Enzyme Replacement Therapy – PERT) সুপারিশ করতে পারেন। এটি খাবারের সাথে গ্রহণ করতে হয়।

 কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

যদিও সঠিক ডায়েট এবং জীবনযাত্রা প্যানক্রিয়াটাইটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, তবে কিছু লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত:

  • পেটে তীব্র এবং ক্রমাগত ব্যথা।
  • বমি যা থামছে না।
  • জ্বর এবং কাঁপুনি।
  • দ্রুত হৃদস্পন্দন।
  • জন্ডিসের লক্ষণ (চোখ বা ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া)।
  • অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমে যাওয়া।
  • তৈলাক্ত এবং দুর্গন্ধযুক্ত মল (Steatorrhea), যা চর্বি হজম না হওয়ার লক্ষণ।

প্যানক্রিয়াটাইটিস একটি জটিল রোগ যার জন্য বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধান প্রয়োজন। এই আর্টিকেলটি আপনাকে একটি সাধারণ ধারণা দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে, তবে এটি কোনওভাবেই চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়। আপনার স্বাস্থ্য এবং পুষ্টির প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে একটি ব্যক্তিগত পরিকল্পনা তৈরি করতে সর্বদা একজন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট এবং একজন রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ানের সাথে পরামর্শ করুন।

About Author
Debolina Roy

দেবলীনা রায় একজন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক, যিনি স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে পাঠকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিবেদিত। ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করা দেবলীনা তার লেখায় চিকিৎসা বিষয়ক জটিল তথ্যগুলি সহজ ভাষায় উপস্থাপন করেন, যা সাধারণ পাঠকদের জন্য সহজবোধ্য এবং উপকারী। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, এবং রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে তার গভীর জ্ঞান এবং প্রাঞ্জল লেখনী পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দেবলীনা রায়ের লক্ষ্য হল সঠিক ও তথ্যনির্ভর স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করা এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।