Safe paracetamol dosage: জ্বর হলে অনেকেই প্যারাসিটামল খান। কিন্তু এই ওষুধ কতটা খাওয়া নিরাপদ, তা নিয়ে অনেকেরই মনে প্রশ্ন থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে দিনে সর্বোচ্চ ৪ গ্রাম বা ৪০০০ মিলিগ্রাম প্যারাসিটামল খাওয়া যায়। সাধারণত ৫০০ মিলিগ্রামের ট্যাবলেট পাওয়া যায়, তাই দিনে ৮টির বেশি খাওয়া উচিত নয়।
চিকিৎসক অসীস মিত্র জানিয়েছেন, “জ্বর এলে সাধারণত ৬-৮ ঘণ্টা অন্তর প্যারাসিটামল খাওয়া যায়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দিনে ৬টির বেশি খাওয়ার দরকার পড়ে না।” তিনি আরও বলেন, “১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি জ্বর হলে এবং কিডনি বা লিভারে কোনো সমস্যা না থাকলে ৫০০ মিলিগ্রামের দুটি ট্যাবলেট ৬-৮ ঘণ্টা অন্তর খাওয়া যেতে পারে।”
বয়স | সর্বোচ্চ দৈনিক ডোজ | সময় ব্যবধান |
---|---|---|
প্রাপ্তবয়স্ক | ৪ গ্রাম (৮টি ৫০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট) | ৬-৮ ঘণ্টা |
১২+ বছর | ৩ গ্রাম | ৬ ঘণ্টা |
৬-১১ বছর | ১.৫ গ্রাম | ৬ ঘণ্টা |
২-৫ বছর | ৭৫০ মিলিগ্রাম | ৬ ঘণ্টা |
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, অতিরিক্ত প্যারাসিটামল সেবন করলে তা লিভার ও কিডনির ক্ষতি করতে পারে। Care Hospitals-এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় ৪ গ্রামের বেশি প্যারাসিটামল খাওয়া উচিত নয়। এছাড়া গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
প্যারাসিটামল সেবনের সময় যে বিষয়গুলি মনে রাখতে হবে:
১. খাবার বা জলের সাথে খেতে হবে।
২. নির্ধারিত ডোজ অনুসরণ করতে হবে।
৩. অন্য কোনো ওষুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যাবে না।
৪. অ্যালকোহলের সাথে সেবন করা যাবে না।
৫. লিভার বা কিডনি সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।প্রথম আলোর একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভাইরাল জ্বরে সাধারণত ৫-৭ দিন জ্বর থাকে। ১০২-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত জ্বর হতে পারে। এক্ষেত্রে প্যারাসিটামল খাওয়ার পরও জ্বর পুরোপুরি না ছাড়লে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। বিশেষ করে ডেঙ্গু বা টাইফয়েড হলে জ্বর প্রথম দিকে নিচে নামতেই চায় না।
তবে জ্বর ৫ দিনের বেশি থাকলে বা কোনো জটিলতা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া চট করে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। অনেক সময় অযথা অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার ফলে শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়।প্যারাসিটামলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সহায় হেলথের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, সঠিক ডোজে সেবন করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে কিছু ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে:
এই লক্ষণগুলি দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।উইকিপিডিয়া অনুযায়ী, প্যারাসিটামল বিষক্রিয়া হতে পারে যদি ৭ গ্রামের (৭,০০০ মিলিগ্রাম) বেশি প্যারাসিটামল গ্রহণ করা হয়। এর ফলে যকৃতের অকার্যকারিতা, বৃক্কের অকার্যকারিতা, অগ্ন্যাশয় প্রদাহ, রক্তে শর্করার পরিমাণ হ্রাস, ল্যাক্টিক অ্যাসিডোসিস ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্যারাসিটামল একটি নিরাপদ ওষুধ, কিন্তু এর অপব্যবহার করা উচিত নয়। জ্বর বা ব্যথা হলে প্রথমে ঘরোয়া চিকিৎসা চেষ্টা করা উচিত। যেমন – পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া, প্রচুর পানি পান করা, হালকা খাবার খাওয়া ইত্যাদি। এরপরও উপশম না পেলে তবেই প্যারাসিটামল সেবন করা উচিত।শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। শিশুদের ওজন অনুযায়ী প্যারাসিটামলের ডোজ নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত প্রতি কিলোগ্রাম ওজনের জন্য ১০-১৫ মিলিগ্রাম প্যারাসিটামল দেওয়া যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল সাধারণত নিরাপদ বলে মনে করা হয়। তবে দীর্ঘ সময় ধরে বা বেশি মাত্রায় সেবন করা উচিত নয়। গর্ভাবস্থায় যে কোনো ওষুধ সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।বয়স্কদের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ তাদের শরীরে ওষুধের প্রভাব বেশি সময় ধরে থাকে। এছাড়া লিভার বা কিডনির সমস্যা থাকলে প্যারাসিটামলের ডোজ কমিয়ে দিতে হতে পারে।প্যারাসিটামল সেবনের সময় মনে রাখতে হবে যে, এটি শুধুমাত্র লক্ষণ উপশম করে, রোগের মূল কারণ দূর করে না। তাই দীর্ঘ সময় ধরে জ্বর বা ব্যথা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, প্যারাসিটামল একটি কার্যকরী ও নিরাপদ ওষুধ, কিন্তু এর সঠিক ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্ধারিত মাত্রায় সেবন করলে এটি জ্বর ও ব্যথা উপশমে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত সেবন করলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই সর্বদা সচেতনতার সাথে এই ওষুধ সেবন করা উচিত এবং কোনো সন্দেহ থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মন্তব্য করুন