Parkinson Disease: মস্তিষ্কের এই ক্ষতি কেন হয়? জানুন চাঞ্চল্যকর তথ্য

Parkinson's Disease Diagnosis: পারকিনসন রোগ একটি জটিল স্নায়বিক রোগ যা মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশের ক্ষতির কারণে হয়। ভারতে এই রোগের প্রকোপ ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে গড় আয়ু বৃদ্ধির সাথে সাথে পারকিনসন…

Debolina Roy

 

Parkinson’s Disease Diagnosis: পারকিনসন রোগ একটি জটিল স্নায়বিক রোগ যা মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশের ক্ষতির কারণে হয়। ভারতে এই রোগের প্রকোপ ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে গড় আয়ু বৃদ্ধির সাথে সাথে পারকিনসন রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। তবে এই রোগের কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।

পারকিনসন রোগের কারণ

পারকিনসন রোগের মূল কারণ হল মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশে ডোপামিন নামক নিউরোট্রান্সমিটারের ঘাটতি। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, “ডোপামিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার কমতে শুরু করলে বা ঘাটতি দেখা দিলে পারকিনসন রোগ দেখা দেয়। যখন বয়স বাড়ে তখন ধীরে ধীরে ডোপামিন লেভেল কমতে থাকে।” এছাড়াও নিম্নলিখিত কারণগুলি পারকিনসন রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে:

রোগের লক্ষণ

পারকিনসন রোগের প্রধান লক্ষণগুলি হল:

  • হাতের কাঁপুনি
  • শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের অনমনীয়তা
  • ধীর গতিতে চলাফেরা
  • ভারসাম্যহীনতা

এছাড়াও নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা যেতে পারে:

  • মুখের অভিব্যক্তি কমে যাওয়া
  • কথা বলার সমস্যা
  • হস্তাক্ষরের পরিবর্তন
  • ঘ্রাণশক্তি কমে যাওয়া
  • কোষ্ঠকাঠিন্য
  • ঘুমের সমস্যা

ভারতে পারকিনসন রোগের প্রকোপ

ভারতে পারকিনসন রোগের প্রকোপ ক্রমশ বাড়ছে। যদিও সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি, তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন দেশে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা লক্ষাধিক।

বিবরণ সংখ্যা
বিশ্বে পারকিনসন রোগীর সংখ্যা (২০১৫) ৬.২ মিলিয়ন
বিশ্বে পারকিনসন রোগে মৃত্যু (২০১৫) ১১৭,৪০০
ভারতে অনুমানিত রোগীর সংখ্যা লক্ষাধিক

রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

পারকিনসন রোগ নির্ণয়ের জন্য বিশেষজ্ঞ নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। রোগীর লক্ষণ অনুযায়ী নিউরোলজিক্যাল পরীক্ষা ও শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করা হয়। প্রয়োজনে নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলি করা হতে পারে:

  • ডোপামিন ট্রান্সপোর্টার টেস্ট
  • এমআরআই
  • সিটি স্ক্যান
  • রক্ত পরীক্ষা

চিকিৎসার ক্ষেত্রে, রোগের তীব্রতা অনুযায়ী রোগীকে নিয়মিত ওষুধ খেতে হয় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। প্রধান ওষুধগুলি হল:

  • এল-ডোপা
  • ডোপামিন এগোনিস্ট

ক্ষেত্রবিশেষে মস্তিষ্কে আক্রান্ত অংশে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।

প্রতিরোধের উপায়

পারকিনসন রোগ প্রতিরোধে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন:

  1. স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ:
    • আঁশযুক্ত খাবার
    • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি
    • ফল ও শাকসবজি
    • ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার
  2. নিয়মিত ব্যায়াম:
    • হাঁটা
    • সাঁতার
    • যোগব্যায়াম
  3. মানসিক স্বাস্থ্য:
    • ধ্যান
    • স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট
  4. পরিবেশ সচেতনতা:
    • দূষিত পরিবেশ এড়িয়ে চলা
    • কীটনাশকের ব্যবহার কমানো
  5. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
    স্মৃতিভ্রংশ রোগের ঝুঁকি কমাতে চান? এই সহজ উপায়গুলি অবলম্বন করুন!

সম্ভাব্য প্রভাব

পারকিনসন রোগ একজন ব্যক্তির জীবনমানকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এর প্রভাব শুধু শারীরিক নয়, মানসিক ও সামাজিক জীবনেও পড়ে। প্রধান প্রভাবগুলি হল:

  • দৈনন্দিন কাজকর্মে অসুবিধা
  • কর্মক্ষমতা হ্রাস
  • সামাজিক সম্পর্কে জটিলতা
  • মানসিক অবসাদ
  • আর্থিক সমস্যা

তবে সঠিক চিকিৎসা ও যত্নের মাধ্যমে এই প্রভাবগুলি কমানো সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “পারকিনসন রোগ মানেই জীবনের শেষ নয়। সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা গেলে, এই অসুখকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।”

পারকিনসন রোগ একটি জটিল স্নায়বিক রোগ হলেও এর প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। সচেতনতা, সঠিক জীবনযাপন ও নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগের প্রভাব কমানো যায়। ভারতে এই রোগ নিয়ে আরও গবেষণা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। সরকার ও স্বাস্থ্য সংস্থাগুলির উচিত পারকিনসন রোগীদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা ও সহায়তা কার্যক্রম চালু করা। সমাজের সকল স্তরের মানুষের সহযোগিতায় পারকিনসন রোগীরা একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন।

About Author
Debolina Roy

দেবলীনা রায় একজন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক, যিনি স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে পাঠকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিবেদিত। ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করা দেবলীনা তার লেখায় চিকিৎসা বিষয়ক জটিল তথ্যগুলি সহজ ভাষায় উপস্থাপন করেন, যা সাধারণ পাঠকদের জন্য সহজবোধ্য এবং উপকারী। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, এবং রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে তার গভীর জ্ঞান এবং প্রাঞ্জল লেখনী পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দেবলীনা রায়ের লক্ষ্য হল সঠিক ও তথ্যনির্ভর স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করা এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।