স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী মোদির রেকর্ড ১০৩ মিনিটের ভাষণে ৫টি যুগান্তকারী ঘোষণা

Chanchal Sen 6 Min Read

PM Modi’s 103-Min Speech: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল ৭৯তম স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার প্রাচীর থেকে দেশবাসীর উদ্দেশে ১০৩ মিনিটের এক ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছেন, যা এযাবতকালের সবচেয়ে দীর্ঘ স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ। এই ভাষণে তিনি ভারতের প্রযুক্তিগত স্বনির্ভরতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন যা দেশের ভবিষ্যতের দিক নির্ধারণ করবে।

মেইড ইন ইন্ডিয়া সেমিকন্ডাক্টর চিপ নিয়ে প্রথম বড় ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, এ বছরের শেষের মধ্যেই বাজারে আসবে ভারতে তৈরি প্রথম সেমিকন্ডাক্টর চিপ। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ৫০-৬০ বছর আগে সেমিকন্ডাক্টর কারখানা স্থাপনের চেষ্টা “জন্মের সময়ই মেরে ফেলা হয়েছিল” অন্যদিকে অন্যান্য দেশ এগিয়ে গেছে। তবে এখন ভারত মিশন মোডে এগিয়ে চলেছে এবং ছয়টি ভিন্ন ইউনিট স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।

স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলনে লালকেল্লা স্থানটিই বেছে নিয়েছিলেন নেহরু?

দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য ঘোষণায় পণ্য ও সেবা কর (জিএসটি) সংস্কারের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। দীপাবলির মধ্যে নেক্সট জেনারেশন জিএসটি সংস্কার আনা হবে, যা সাধারণ মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ওপর কর কমিয়ে দেবে। এই সংস্কার ছোট ও মাঝারি শিল্পের পাশাপাশি স্থানীয় বিক্রেতাদেরও উপকার করবে। আট বছর পূর্ণ হওয়া জিএসটি ব্যবস্থায় এখন সংস্কারের সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তৃতীয় বড় ঘোষণা এসেছে যুবসমাজের কর্মসংস্থান নিয়ে। এক লাখ করোড় টাকা বরাদ্দে প্রধানমন্ত্রী বিকশিত ভারত রোজগার যোজনা চালু করার কথা জানান মোদি। এই প্রকল্পের আওতায় নতুন চাকরিতে যোগ দেওয়া যুবকরা ১৫ হাজার টাকা পাবেন এবং প্রায় ৩.৫ করোড় যুবক উপকৃত হবেন। এটি স্বাধীন ভারত থেকে সমৃদ্ধ ভারতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে।

চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণায় জাতীয় নিরাপত্তার সাথে সম্পর্কিত হাই পাওয়ার ডেমোগ্রাফি মিশন চালুর কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। সীমান্ত এলাকায় অনুপ্রবেশ ও অবৈধ অভিবাসনের কারণে জনসংখ্যার ভারসাম্যহীনতার বিপদের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই মিশন ভারতের নাগরিকদের একতা, অখণ্ডতা ও অধিকার রক্ষায় কাজ করবে।

পঞ্চম ও সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রী দেশের বিজ্ঞানী ও যুবসমাজকে জেট ইঞ্জিন তৈরির সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, যেভাবে কোভিডকালে ভ্যাকসিন তৈরি করেছি, ডিজিটাল পেমেন্টের জন্য ইউপিআই বানিয়েছি, ঠিক সেভাবে আমাদের নিজস্ব জেট ইঞ্জিনও তৈরি করতে হবে।

ভাষণে প্রধানমন্ত্রী পারমাণবিক শক্তির ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য ঘোষণা দেন। আগামী দুই দশকে দেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দশগুণ বৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেন তিনি। বর্তমানে ১০টি নতুন পারমাণবিক চুল্লির কাজ চলমান রয়েছে। এর পাশাপাশি জাতীয় গভীর সমুদ্র অনুসন্ধান মিশন চালুর কথাও জানান, যা সমুদ্রের সম্পদ আহরণে কাজ করবে।

অর্থনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রে নেক্সট জেনারেশন রিফর্ম টাস্ক ফোর্স গঠনের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। এই টাস্কফোর্সের দায়িত্ব হবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানো এবং শাসনব্যবস্থা আধুনিকীকরণ করা।

জাতীয় নিরাপত্তার প্রসঙ্গে অপারেশন সিন্দুরের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন মোদি। তিনি জানান, ভারত এখন পারমাণবিক হুমকি আর সহ্য করবে না এবং ভবিষ্যতে শত্রুরা সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখলে আমাদের সেনাবাহিনী নিজস্ব শর্তে, নিজস্ব সময়ে, নিজস্ব পদ্ধতিতে এবং নিজেদের নির্বাচিত লক্ষ্যে জবাব দেবে।

জল সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রী সিন্ধু নদী চুক্তির বিরোধিতা করে বলেন, এই চুক্তি কৃষকদের স্বার্থে এবং জাতীয় স্বার্থে গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, রক্ত ও পানি একসাথে প্রবাহিত হতে পারে না। সিন্ধু নদী ব্যবস্থার পানি শত্রু ভূমি সেচ করলেও আমাদের কৃষকরা ভুগছেন।ভাষণে শিক্ষা ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে খেলো ভারত কর্মসূচি এবং জাতীয় ক্রীড়া নীতির মাধ্যমে সামগ্রিক উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের যুবসমাজকে উদ্ভাবন, কঠোর পরিশ্রম এবং আত্মনির্ভর ভারতের চেতনা গ্রহণ করতে হবে।

স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিশেষভাবে ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের অবদানের কথা স্মরণ করান। তিনি জানান, ড. মুখোপাধ্যায় ভারতের সংবিধানের জন্য জীবন উৎসর্গকারী প্রথম মহান ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ধারা ৩৭০ বাতিল করাকে তার প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধাঞ্জলি বলে উল্লেখ করেন মোদি।বিশেষ মর্যাদায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) জাতি গঠনে শতবর্ষের অবদানের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি গুরু তেগ বাহাদুর সিং এবং মহাত্মা জ্যোতিবা ফুলের মতো সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান।

নারী ক্ষমতায়নের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নারী উদ্যোক্তাদের প্রশংসা করে বলেন, তারা দেশের অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। কৃষকদের অবদানের কথাও বিশেষভাবে তুলে ধরেন তিনি।

২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত গড়ার লক্ষ্য পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী জানান, এই অগ্রযাত্রা স্বনির্ভরতা, উদ্ভাবন এবং নাগরিক ক্ষমতায়নের ভিত্তিতে গড়ে উঠবে। দেশকে ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করার জন্য কৌশলগত প্রতিরক্ষা থেকে শুরু করে সেমিকন্ডাক্টর, পরিচ্ছন্ন শক্তি থেকে কৃষি, এবং ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব থেকে যুব ক্ষমতায়ন পর্যন্ত সব খাতে রূপান্তরের রোডম্যাপ তুলে ধরেন তিনি।

Pradhan Mantri Jan Dhan Yojana: আর্থিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি, মাত্র 5 মিনিটে খুলে নিন নিজের অ্যাকাউন্ট

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক ভূমিধস, মেঘ বিস্ফোরণ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রকৃতি আমাদের সবাইকে পরীক্ষা করছে। এ সময় তিনি দুর্যোগ মোকাবেলায় নিয়োজিত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

স্বাধীনতার ৭৮ বছর পর এই ঐতিহাসিক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদি দেশবাসীর কাছে আরও একবার স্পষ্ট করেন যে, ভারত আর কারো ওপর নির্ভরশীল জাতি নয়, বরং একটি বিশ্বব্যাপী আত্মবিশ্বাসী, প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত এবং অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল দেশ। এই ১০৩ মিনিটের ভাষণ শুধু রেকর্ড সৃষ্টি করেনি, বরং আগামী দিনের ভারতের জন্য একটি সাহসী ও উচ্চাভিলাষী পথনকশা প্রস্তুত করেছে।

Share This Article