POCO M7 5G budget phone: POCO M7 হল ২০২৫ সালের শুরুতে লঞ্চ হওয়া ব্র্যান্ডের বাজেট সেগমেন্টের একটি ৫জি স্মার্টফোন যা ১০,০০০ টাকার নিচে দাম রেঞ্জে বেশ কিছু আকর্ষণীয় ফিচার নিয়ে এসেছে। Snapdragon 4 Gen 2 চিপসেট, ১২০Hz রিফ্রেশ রেট ডিসপ্লে, এবং ৫,১৬০mAh ব্যাটারি সহ এই ফোনটি বাজেটে বেশ কিছু দমদম স্পেসিফিকেশন অফার করছে। কিন্তু আসলেই কি POCO M7 আপনার পকেটে রাখার যোগ্য? চলুন জেনে নেওয়া যাক এই স্মার্টফোনটি কেনার ৪টি প্রধান কারণ এবং এড়িয়ে যাওয়ার ২টি কারণ।
POCO M7 কেনার ৪টি কারণ
শক্তিশালী পারফরম্যান্স ও দৈনন্দিন ব্যবহারে দক্ষতা
POCO M7 এর হৃদয়ে রয়েছে Qualcomm Snapdragon 4 Gen 2 প্রসেসর, যা এই মূল্য সীমার মধ্যে বেশ শক্তিশালী একটি চিপসেট। ২.২ GHz অক্টা-কোর প্রসেসর, ৬/৮GB LPDDR4X RAM এবং UFS 2.2 স্টোরেজের সংমিশ্রণে ফোনটি দৈনন্দিন কাজে বেশ স্মুথলি পারফর্ম করে। রিভিউগুলো অনুযায়ী, POCO M7 দিয়ে মাল্টিটাস্কিং, বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার, সোশ্যাল মিডিয়া ব্রাউজিং, এবং ভিডিও স্ট্রিমিং স্বচ্ছন্দে করা যায়। এমনকি Subway Surfers, Asphalt এবং Call of Duty এর মতো গেমগুলো ভালোভাবেই খেলা যায়। অ্যাপ লোডিং টাইম দ্রুত এবং UFS 2.2 স্টোরেজ ফোনের পারফরম্যান্সকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
Antutu বেঞ্চমার্ক স্কোরে ফোনটি ৪৫০,০০০+ পয়েন্ট অর্জন করে, যা এই মূল্যসীমার ফোনের জন্য প্রশংসনীয়। PCMark ব্যাটারি টেস্টে ফোনটি ১৭ ঘন্টা ৪৬ মিনিট টিকে থাকে, যা বেশ ভালো একটি স্কোর।
লম্বা ব্যাটারি লাইফ
POCO M7 একটি শক্তিশালী ৫,১৬০mAh ব্যাটারি নিয়ে আসে, যা ভারী ব্যবহারেও একদিনের বেশি সময় ধরে টিকে থাকতে পারে। রিভিউয়ারদের মতে, সাধারণ ব্যবহারে এই ব্যাটারি লাইফ সহজেই দুই দিন পর্যন্ত বাড়ানো যায়। ফোনটি ১৮W ফাস্ট চার্জিং সাপোর্ট করে, যার ফলে ফোনটি যথেষ্ট দ্রুত চার্জ হয়।
ভিডিও প্লেব্যাক টাইম প্রায় ১২ ঘন্টা, যা মিডিয়া কনজাম্পশনের জন্য বেশ উপযোগী। বিশেষত ৬.৮৮-ইঞ্চি বড় ডিসপ্লের সাথে এই লম্বা ব্যাটারি লাইফ ভিডিও দেখা এবং গেমিং সেশনের জন্য খুবই উপযোগী।
উন্নত ডিসপ্লে ও ডিজাইন
POCO M7 এ রয়েছে ৬.৮৮-ইঞ্চি HD+ LCD ডিসপ্লে যা ১২০Hz রিফ্রেশ রেট সাপোর্ট করে। এই উচ্চ রিফ্রেশ রেট ব্যবহারকারীদের স্ক্রোলিং, ওয়েব ব্রাউজিং, এবং গেমিং এক্সপেরিয়েন্স অনেক স্মুথ করে তোলে। POCO-এর দাবি অনুযায়ী, এটি ১০,০০০ টাকার নিচের সেগমেন্টে সবচেয়ে বড় ডিসপ্লে। ৬০০ নিটস পিক ব্রাইটনেস সহ, এই ডিসপ্লে ইনডোর ব্যবহারে বেশ ভালো পারফর্ম করে।
ডিজাইনের দিক থেকে, ফোনটিতে রয়েছে গ্লসি মিরর ফিনিশ সহ একটি বৃহৎ সার্কুলার ক্যামেরা মডিউল, যা বেশ প্রিমিয়াম লুক দেয়। পেছনের প্যানেলের নিচের অংশে ম্যাট ফিনিশ রয়েছে, যা ফিঙ্গারপ্রিন্ট কম ধরে। IP52 ধুলো ও জল প্রতিরোধী রেটিং ফোনটিকে সামান্য স্প্ল্যাশ থেকে রক্ষা করে।
দীর্ঘকালীন সফটওয়্যার সাপোর্ট ও যুগোপযোগী ফিচার
POCO M7 Android 14 ভিত্তিক HyperOS নিয়ে আসে এবং কোম্পানি ২ বছরের OS আপডেট এবং ৪ বছরের সিকিউরিটি প্যাচ প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই মূল্য সীমায় ৪ বছরের সিকিউরিটি প্যাচ সাপোর্ট প্রশংসনীয়, যা ফোনটির দীর্ঘকালীন নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
HyperOS বেশ কিছু উপযোগী ফিচার নিয়ে আসে, যেমন ‘Dual Apps’ (যা একই অ্যাপের দুটি ইনস্ট্যান্স চালানোর অনুমতি দেয়), ‘App Lock’, ‘Game Turbo’ (যা গেমিং পারফরম্যান্স অপ্টিমাইজ করে), এবং ‘Security’ অ্যাপ। ফোনে ৩.৫mm হেডফোন জ্যাক রয়েছে, যা আজকাল স্মার্টফোনে বিরল হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া, ফোনে একটি ডেডিকেটেড microSD কার্ড স্লট রয়েছে, যা স্টোরেজ ১TB পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ দেয়।
POCO M7 এড়ানোর ২টি কারণ
খারাপ লো-লাইট ক্যামেরা পারফরম্যান্স
POCO M7 এ ৫০MP Sony IMX852 মেইন সেন্সর এবং ২MP ডেপথ সেন্সর সহ ডুয়াল ক্যামেরা সেটআপ রয়েছে। ভালো আলোতে, মেইন ক্যামেরা বেশ ভালো ছবি তোলে, যা ডিটেল, ডাইনামিক রেঞ্জ এবং কালার রিপ্রোডাকশনের দিক থেকে সন্তোষজনক।
কিন্তু আলো কমে গেলে বা লো-লাইট পরিস্থিতিতে ক্যামেরার পারফরম্যান্স খুবই খারাপ হয়ে যায়। এমনকি নাইট মোড ব্যবহার করেও ছবিগুলো অস্পষ্ট, নয়েজি এবং ডিটেল কম থাকে। পোর্ট্রেট মোডে এজ ডিটেকশন সবসময় সঠিক নয়, বিশেষত কম আলোতে এটি আরও খারাপ হয়ে যায়।
সেলফি ক্যামেরা (৮MP) ভালো আলোতে সন্তোষজনক ছবি তোলে, কিন্তু তুলনামূলকভাবে ডিটেল কম থাকে এবং অনেক সময় ছবি আন্ডারএক্সপোজড হয়ে যায়। অন্যান্য প্রতিযোগী ফোনগুলোর তুলনায় সামগ্রিক ক্যামেরা পারফরম্যান্স দুর্বল, বিশেষত কম আলোতে।
অত্যধিক ব্লোটওয়্যার এবং বিজ্ঞাপন সমস্যা
POCO M7 এর একটি বড় সমস্যা হল এর সফটওয়্যারে অত্যধিক পরিমাণে ব্লোটওয়্যার (অপ্রয়োজনীয় প্রি-ইনস্টল করা অ্যাপ) এবং বিজ্ঞাপন। ফোনে প্রচুর গেম প্রি-ইনস্টল করা থাকে, এবং প্রথমবার ‘GetApps’ স্টোর খোলার সময় ফোনটি আরও অ্যাপ ইনস্টল করতে উৎসাহিত করে।
UI-এর বিভিন্ন অংশে বিজ্ঞাপন রয়েছে, যেমন অ্যাপ ড্রয়ার সার্চ বার এবং সিস্টেম অ্যাপ আপডেটারে অ্যাপ রেকমেন্ডেশন। বিল্ট-ইন অ্যাপস যেমন ‘Themes’ স্প্যাম নোটিফিকেশন পাঠায়। অধিকাংশ রেকমেন্ডেশন বন্ধ করা যায়, কিন্তু প্রক্রিয়াটি সহজ নয়।
অতিরিক্ত ব্লোটওয়্যার এবং বিজ্ঞাপন ফোনের পারফরম্যান্স ধীর করে দিতে পারে এবং ব্যবহারকারী অভিজ্ঞতা খারাপ করে দেয়। তুলনামূলকভাবে, একই মূল্য সীমায় Motorola G64 ক্লিনার UI অফার করে, যা অনেক ব্যবহারকারী পছন্দ করতে পারে।
POCO M7: কেনা উচিত কি না?
POCO M7 ১০,০০০ টাকার নিচে একটি কম্পিটিটিভ ৫জি স্মার্টফোন, যা প্রাথমিকভাবে বাজেট-সচেতন গ্রাহকদের জন্য লক্ষ্য করে ডিজাইন করা হয়েছে। Snapdragon 4 Gen 2 চিপসেট, ১২০Hz রিফ্রেশ রেট, IP52 রেটিং, এবং ৫,১৬০mAh ব্যাটারি সহ, এটি দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য একটি সলিড ফোন।
তবে ফোনটির কিছু উল্লেখযোগ্য ত্রুটি রয়েছে, যেমন খারাপ লো-লাইট ক্যামেরা পারফরম্যান্স এবং অত্যধিক ব্লোটওয়্যার। আপনি যদি ভালো ক্যামেরা পারফরম্যান্স এবং ক্লিন UI চান, তাহলে এই ফোনটি এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
ফোনের Smartprix রেটিং ৭.৫/১০, যা এই মূল্য সীমায় একটি ভালো স্কোর। 91Mobiles এর রিভিউতেও ফোনটিকে বাজেট সেগমেন্টে একটি ভালো চয়েস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যদি আপনি একটি দীর্ঘস্থায়ী, পারফরম্যান্স-ফোকাসড ৫জি স্মার্টফোন খুঁজছেন, যার ক্যামেরা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়, তাহলে POCO M7 আপনার জন্য একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।
POCO M7 এই মূল্য সীমার একটি ওল-রাউন্ডার ফোন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, যা ভালো পারফরম্যান্স, লম্বা ব্যাটারি লাইফ, চমৎকার ডিসপ্লে, এবং দীর্ঘমেয়াদী সফটওয়্যার সাপোর্ট অফার করে। যারা বাজেট ৫জি স্মার্টফোন খুঁজছেন তাদের জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প, তবে ক্যামেরা কোয়ালিটি এবং ব্লোটওয়্যার সমস্যাগুলো বিবেচনায় নেওয়া উচিত।আপনার প্রয়োজন, বাজেট এবং প্রাথমিকতার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিন। যদি আপনার কাছে ব্যাটারি লাইফ এবং পারফরম্যান্স গুরুত্বপূর্ণ হয়, কিন্তু ক্যামেরা কোয়ালিটি ততটা গুরুত্বপূর্ণ না হয়, তাহলে POCO M7 আপনার জন্য একটি সঠিক চয়েস হতে পারে।
