বাংলার মাটি রাজনৈতিক উত্তাপে সর্বদাই উষ্ণ থাকে। কিন্তু সম্প্রতি সমাপ্ত হওয়া নির্বাচনের পরও কেন বিভিন্ন রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন সরছে না? এই প্রবন্ধে আমরা সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেখব এবং এর পেছনের কারণ ও প্রভাব বিশ্লেষণ করব।
নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলি দলীয় বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া, প্রার্থী পরিচিতি বাড়ানো এবং ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। তাই প্রচারের সময় বিভিন্ন পোস্টার, ব্যানার, হোর্ডিং ইত্যাদি সর্বত্র দেখা যায়।
অন্যদিকে, ভোট মিটে যাওয়ার পরেও অনেক সময় এই বিজ্ঞাপনগুলি থেকে যায়। এই ঘটনাটি কেন ঘটে এবং এর পেছনে কি কারণ থাকতে পারে, সেই প্রশ্নগুলির উত্তর পাওয়ার চেষ্টা করব।
প্রশাসনিক অবহেলা একটি বড় কারণ হতে পারে। ভোটের পরে প্রশাসনের দায়িত্ব হল এই বিজ্ঞাপনগুলি সরিয়ে ফেলা, কিন্তু সেই কাজটি সময়মতো না হওয়ায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়।
বিজ্ঞাপন সরানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব একটি বড় সমস্যা। অনেক সময় স্থানীয় প্রশাসনের আর্থিক সঙ্কটের কারণে এই কাজটি করা সম্ভব হয় না।
রাজনৈতিক দলগুলির তরফ থেকেও এই ব্যাপারে উদাসীনতা দেখা যায়। নির্বাচনের পরে তারা নতুন কাজের দিকে মনোনিবেশ করে, ফলে পুরনো বিজ্ঞাপন সরানোতে তাদের তেমন আগ্রহ থাকে না।
বিজ্ঞাপনগুলি শহরের সৌন্দর্যহানি ঘটায়। অনেক সময় এই বিজ্ঞাপনগুলি পুরনো হয়ে ছিঁড়ে যায়, যা দেখতেও অস্বস্তিকর।
বিজ্ঞাপন সরানোর সময় সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করলে পরিবেশের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়তে পারে। পোস্টার এবং ব্যানারগুলিতে ব্যবহৃত প্লাস্টিক এবং অন্যান্য উপকরণ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
নির্বাচনের পরে বিজ্ঞাপন সরানোর জন্য বিভিন্ন আইন আছে। কিন্তু সঠিকভাবে আইন অনুসরণ না করলে আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
প্রশাসনের তরফ থেকে উদ্যোগী হয়ে বিজ্ঞাপনগুলি সরানোর কাজ দ্রুত শুরু করা উচিত। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
সামাজিক উদ্যোগও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, স্থানীয় বাসিন্দারা একত্রিত হয়ে এই কাজটি করতে পারে।
বিজ্ঞাপন সরানোর সময় পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত। এতে পরিবেশের ক্ষতি কম হবে এবং শহরের সৌন্দর্যও বজায় থাকবে।
বাংলা নির্বাচন কমিশনের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভোটের পরে বিজ্ঞাপন সরানোর কাজে প্রশাসনিক অবহেলার অভিযোগ আগেও উঠেছিল। এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে যে, সময়মতো বিজ্ঞাপন না সরানোর ফলে শহরের সৌন্দর্যহানি ঘটেছে।
পরিবেশবিদদের মতে, পুরনো পোস্টার এবং ব্যানারে ব্যবহৃত প্লাস্টিক এবং অন্যান্য উপকরণ পরিবেশের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। সঠিক পদ্ধতিতে এগুলি সরানো না হলে, মাটির উর্বরতা কমে যেতে পারে এবং জল দূষিত হতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গে ভোট মিটে যাওয়ার পরেও রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন সরানোর সমস্যা একটি গুরুতর বিষয়। প্রশাসনিক অবহেলা, আর্থিক সঙ্কট, এবং রাজনৈতিক দলের উদাসীনতা এর মূল কারণ। এই সমস্যার সমাধানে প্রশাসনিক তৎপরতা, সামাজিক উদ্যোগ এবং পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি অবলম্বন করা জরুরি। তবেই শহরের সৌন্দর্য বজায় থাকবে এবং পরিবেশ রক্ষা হবে।
মন্তব্য করুন