Srijita Chattopadhay
১ জুলাই ২০২৪, ২:০১ অপরাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

পশ্চিমবঙ্গে ভোট মিটে যাওয়ার পরেও রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন সরছে না: কেন এবং এর প্রভাব

বাংলার মাটি রাজনৈতিক উত্তাপে সর্বদাই উষ্ণ থাকে। কিন্তু সম্প্রতি সমাপ্ত হওয়া নির্বাচনের পরও কেন বিভিন্ন রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন সরছে না? এই প্রবন্ধে আমরা সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেখব এবং এর পেছনের কারণ ও প্রভাব বিশ্লেষণ করব।

রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের ভূমিকা

নির্বাচনের সময় বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব

নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলি দলীয় বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া, প্রার্থী পরিচিতি বাড়ানো এবং ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। তাই প্রচারের সময় বিভিন্ন পোস্টার, ব্যানার, হোর্ডিং ইত্যাদি সর্বত্র দেখা যায়।

ভোটের পরে বিজ্ঞাপন রয়ে যাওয়া

অন্যদিকে, ভোট মিটে যাওয়ার পরেও অনেক সময় এই বিজ্ঞাপনগুলি থেকে যায়। এই ঘটনাটি কেন ঘটে এবং এর পেছনে কি কারণ থাকতে পারে, সেই প্রশ্নগুলির উত্তর পাওয়ার চেষ্টা করব।

কেন রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন সরছে না?

প্রশাসনিক অবহেলা

প্রশাসনিক অবহেলা একটি বড় কারণ হতে পারে। ভোটের পরে প্রশাসনের দায়িত্ব হল এই বিজ্ঞাপনগুলি সরিয়ে ফেলা, কিন্তু সেই কাজটি সময়মতো না হওয়ায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়।

আর্থিক সঙ্কট

বিজ্ঞাপন সরানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব একটি বড় সমস্যা। অনেক সময় স্থানীয় প্রশাসনের আর্থিক সঙ্কটের কারণে এই কাজটি করা সম্ভব হয় না।

রাজনৈতিক দলের উদাসীনতা

রাজনৈতিক দলগুলির তরফ থেকেও এই ব্যাপারে উদাসীনতা দেখা যায়। নির্বাচনের পরে তারা নতুন কাজের দিকে মনোনিবেশ করে, ফলে পুরনো বিজ্ঞাপন সরানোতে তাদের তেমন আগ্রহ থাকে না।

প্রভাব এবং সমস্যা

শহরের সৌন্দর্যহানি

বিজ্ঞাপনগুলি শহরের সৌন্দর্যহানি ঘটায়। অনেক সময় এই বিজ্ঞাপনগুলি পুরনো হয়ে ছিঁড়ে যায়, যা দেখতেও অস্বস্তিকর।

পরিবেশগত প্রভাব

বিজ্ঞাপন সরানোর সময় সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করলে পরিবেশের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়তে পারে। পোস্টার এবং ব্যানারগুলিতে ব্যবহৃত প্লাস্টিক এবং অন্যান্য উপকরণ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

আইনগত জটিলতা

নির্বাচনের পরে বিজ্ঞাপন সরানোর জন্য বিভিন্ন আইন আছে। কিন্তু সঠিকভাবে আইন অনুসরণ না করলে আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

এছাড়াও যে কারণগুলো থেকে যায়

  • বিজ্ঞাপনের অবৈধ ব্যবহার: ভোটের পরে অনেক সময় কিছু রাজনৈতিক দল তাদের প্রভাব বজায় রাখতে ইচ্ছাকৃতভাবে বিজ্ঞাপন সরায় না, যাতে তাদের প্রভাবশালী অবস্থান জনসমক্ষে থাকে।
  • মানসিক প্রভাব: পোস্টার এবং ব্যানারগুলি অনেক সময় সাধারণ মানুষের মনে রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং বিভেদ বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
  • নাগরিকদের উদ্বেগ: বিভিন্ন নাগরিক অধিকার সংগঠন এবং বাসিন্দারা এই বিষয় নিয়ে প্রায়ই উদ্বেগ প্রকাশ করে। তারা মনে করেন, এটি প্রশাসনের অবহেলা এবং শহরের নাগরিক সেবা প্রদান করতে ব্যর্থতার লক্ষণ।
  • সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার: অনেক সময় এই সমস্যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি হয় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
  • স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রভাব: পুরনো বিজ্ঞাপন সরানোর কাজটি অনেক সময় স্থানীয় ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য একটি আয়ের উৎস হতে পারে, যা উপেক্ষিত হলে তাদের আর্থিক ক্ষতি হয়।
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের আশেপাশে বিজ্ঞাপন: বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতালের আশেপাশে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন থাকা অনুচিত, কারণ এটি শিক্ষার পরিবেশ এবং রোগীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
  • আইনি পদক্ষেপের অভাব: প্রশাসন যদি আইনি পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে এমন সমস্যার পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই কঠোর আইন প্রয়োগ জরুরি।

কিভাবে সমাধান করা যায়?

প্রশাসনিক তৎপরতা

প্রশাসনের তরফ থেকে উদ্যোগী হয়ে বিজ্ঞাপনগুলি সরানোর কাজ দ্রুত শুরু করা উচিত। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।

সামাজিক উদ্যোগ

সামাজিক উদ্যোগও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, স্থানীয় বাসিন্দারা একত্রিত হয়ে এই কাজটি করতে পারে।

পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি

বিজ্ঞাপন সরানোর সময় পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত। এতে পরিবেশের ক্ষতি কম হবে এবং শহরের সৌন্দর্যও বজায় থাকবে।

তথ্য যাচাই (ফ্যাক্ট চেকিং)

প্রশাসনিক অবহেলা সংক্রান্ত তথ্য

বাংলা নির্বাচন কমিশনের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভোটের পরে বিজ্ঞাপন সরানোর কাজে প্রশাসনিক অবহেলার অভিযোগ আগেও উঠেছিল। এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে যে, সময়মতো বিজ্ঞাপন না সরানোর ফলে শহরের সৌন্দর্যহানি ঘটেছে।

পরিবেশগত প্রভাব

পরিবেশবিদদের মতে, পুরনো পোস্টার এবং ব্যানারে ব্যবহৃত প্লাস্টিক এবং অন্যান্য উপকরণ পরিবেশের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। সঠিক পদ্ধতিতে এগুলি সরানো না হলে, মাটির উর্বরতা কমে যেতে পারে এবং জল দূষিত হতে পারে।

উপসংহার

পশ্চিমবঙ্গে ভোট মিটে যাওয়ার পরেও রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন সরানোর সমস্যা একটি গুরুতর বিষয়। প্রশাসনিক অবহেলা, আর্থিক সঙ্কট, এবং রাজনৈতিক দলের উদাসীনতা এর মূল কারণ। এই সমস্যার সমাধানে প্রশাসনিক তৎপরতা, সামাজিক উদ্যোগ এবং পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি অবলম্বন করা জরুরি। তবেই শহরের সৌন্দর্য বজায় থাকবে এবং পরিবেশ রক্ষা হবে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইউনুসের ‘নতুন’ বাংলাদেশে ধর্ষণের ঊর্ধ্বগতি: রাজপথে প্রতিবাদের ঝড় ছাত্রদের

ভারতে ইন্টারনেট বিপ্লবের নতুন দিগন্ত: স্টারলিঙ্কের সঙ্গে এয়ারটেলের ঐতিহাসিক চুক্তি

অস্ত্র আমদানির দৌড়ে শীর্ষে ইউক্রেন, ভারতের স্থান দ্বিতীয়: বিশ্বে কী বার্তা?

মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কে নজর! বঙ্গের সব আসনে লড়তে প্রস্তুত আইএমআইএম

হোলির রঙে ব্যাঙ্ক বন্ধ: আগামীকাল থেকে টানা ৪ দিন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ব্যাঙ্ক ছুটি, তালিকা দেখে নিন

কেকেআরের প্রস্তুতি শুরু: কলকাতায় নাইটদের ক্যাপ্টেন-কোচের সঙ্গে প্রকাশিত হল প্র্যাক্টিস সূচি

শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ির সামনে ‘ক্রিমিনাল’ পোস্টার: সিপিএম নেতার থানায় তলব!

কলকাতার Zakaria Street-এর মাস্ট ভিজিট ফুড স্টল: একটি খাদ্যপ্রেমীর স্বর্গভূমি

অলক্ষ্যে ঋত্বিক: ঋত্বিক ঘটকের জীবনালেখ্য নিয়ে আসছে বাঙালির প্রতীক্ষিত চলচ্চিত্র

আইপিএল-এ তামাকের বিজ্ঞাপন বন্ধ! স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কড়া নির্দেশ জারি!

১০

দেওয়ালের কোন দিকে কোন রঙ শুভ? বাস্তুশাস্ত্রের চোখে একটি গভীর দৃষ্টিপাত

১১

ডিএলএফ-এমআরএফ-আমূল-পেটিএম: সংক্ষিপ্ত নামেই ভারত বিখ্যাত, এবার জেনে নিন এই ব্র্যান্ডগুলোর পুরো নাম!

১২

সেক্সসমনিয়া: ঘুমের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এক বিরল রহস্য

১৩

ভীষণ ক্ষতিকর Non-Stick প্যানে রান্না করছেন না তো? জেনে নিন সেরা বিকল্পগুলো

১৪

কাক ডাকার ফলাফল: ইসলাম ও হিন্দু শাস্ত্রে কী বলা আছে?

১৫

দিনে ৮ ঘণ্টা AC চালালে মাসে কত ‘Electric Bill’ আসবে? সহজ হিসেবে নিশ্চিন্তে থাকুন

১৬

প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কি বুদ্ধিমানের কাজ? একটি গভীর বিশ্লেষণ

১৭

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের জাদু: কীভাবে ভারত হয়ে উঠল অপ্রতিরোধ্য?

১৮

বাংলার প্রথম এসি লোকাল ট্রেন শিয়ালদা-কৃষ্ণনগর রুটে, ভাড়া কত জানেন?

১৯

ভারতে রাজ্যভিত্তিক হীরার মজুদ: কোন রাজ্য হীরা উৎপাদনে সেরা?

২০
close