Post Office MIS: Monthly Returns: পোস্ট অফিসের মাসিক আয় স্কিম (MIS) বর্তমানে বছরে ৭.৪ শতাংশ সুদের হার অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। এই হার অনুসারে ৫০,০০০ টাকা জমা করলে প্রতি মাসে ৩০৮ টাকা ৩৩ পয়সা সুদ পাওয়া যাবে। ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর এই সুদের হার সরকারের পক্ষ থেকে নির্ধারণ করা হয়েছে এবং বর্তমানে জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২ ত্রৈমাসিকেও এই হার অপরিবর্তিত রয়েছে।
মাসিক আয় স্কিমের মূল উদ্দেশ্য হলো একক বিনিয়োগের মাধ্যমে নিয়মিত মাসিক আয়ের ব্যবস্থা করা। বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং স্থিতিশীল আয়ের প্রত্যাশী বিনিয়োগকারীদের জন্য এই স্কিমটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। পোস্ট অফিসের এই স্কিমটি সরকারি নিশ্চয়তাপ্রাপ্ত হওয়ায় এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত।
বর্তমান সুদের হার অনুযায়ী MIS-এ সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ৯ লাখ টাকা পর্যন্ত একক অ্যাকাউন্টে জমা করা যায়। যৌথ অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সীমা ১৫ লাখ টাকা। এই স্কিমের মেয়াদ ৫ বছর এবং বিনিয়োগকৃত অর্থ মেয়াদ শেষে ফেরত পাওয়া যায়।
Earn Money Through Mobile: আপনার পকেটে থাকা ডিভাইসটি হয়ে উঠুক আয়ের উৎস
প্রতি মাসের সুদ গণনার জন্য একটি সহজ সূত্র ব্যবহার করা হয়। মাসিক সুদ = (মূল অর্থ × বার্ষিক সুদের হার) ÷ ১২। উদাহরণস্বরূপ, ৫০,০০০ টাকার ক্ষেত্রে: (৫০,০০০ × ৭.৪%) ÷ ১২ = ৩০৮.৩৩ টাকা মাসিক সুদ। এই সুদ প্রতি মাসে নিয়মিতভাবে প্রদান করা হয় এবং বিনিয়োগকারী চাইলে সেটি সরাসরি তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অটো ক্রেডিট সুবিধার মাধ্যমে পেতে পারেন।
সরকার প্রতি ত্রৈমাসিকে এই সুদের হার পর্যালোচনা করে থাকে। ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে এই হার ৭.৪ শতাংশ ছিল এবং জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকেও একই হার বহাল রাখা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি বন্ডের আয় এবং রিজার্ভ ব্যাংকের নীতিগত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে এই হার নির্ধারণ করা হয়।
পোস্ট অফিস MIS-এর একটি বিশেষ সুবিধা হলো এর তরলতা। বিনিয়োগের এক বছর পর থেকে অর্থ তোলা যায়, তবে নির্দিষ্ট জরিমানা প্রযোজ্য। এক থেকে তিন বছরের মধ্যে অর্থ তুললে ২ শতাংশ এবং তিন বছরের পর তুললে ১ শতাংশ জরিমানা কাটা হয়। এই নমনীয়তা অনেক বিনিয়োগকারীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিনিয়োগকারীরা দেশের যেকোনো পোস্ট অফিস থেকে অন্য পোস্ট অফিসে তাদের অ্যাকাউন্ট স্থানান্তর করতে পারেন। এটি বিশেষভাবে সুবিধাজনক যারা চাকরি বা ব্যবসার কারণে বিভিন্ন শহরে বাস করেন। ১০ বছর বা তার বেশি বয়সী শিশুরাও এই স্কিমে বিনিয়োগ করতে পারে এবং তারা নিজেরাই অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে পারে।
পোস্ট অফিস টাইম ডিপোজিট: ২ লাখ টাকা সুদ কামানোর সুবর্ণ সুযোগ!
আগের বছরগুলোর তুলনায় MIS-এর সুদের হারে কিছু পরিবর্তন এসেছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত এই হার ছিল ৭.১ শতাংশ, যা পরবর্তীতে ৭.৪ শতাংশে উন্নীত হয়। ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই হার ছিল ৬.৭ শতাংশ। বর্তমান ৭.৪ শতাংশ হার গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয়।
বড় অংকের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে MIS-এর আকর্ষণীয়তা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ৯ লাখ টাকা একক অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগ করলে মাসিক ৫,৫৫০ টাকা সুদ পাওয়া যায়। যৌথ অ্যাকাউন্টে ১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে মাসিক আয় দাঁড়ায় ৯,২৫০ টাকা। এই নিয়মিত আয় অনেক পরিবারের মাসিক খরচের একটি বড় অংশ মেটাতে সক্ষম।
স্কিমটি খোলার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে পরিচয়পত্র, ঠিকানার প্রমাণ এবং ছবি। যৌথ অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তিনজন ব্যক্তি অংশীদার হতে পারেন এবং প্রত্যেকে সমান অংশের মালিক হবেন। অ্যাকাউন্ট খোলার সময় নমিনি নিয়োগ করা বাধ্যতামূলক।প্রযুক্তিগত উন্নতির সাথে তাল মিলিয়ে অনলাইন ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে সহজেই MIS-এর মাসিক সুদ গণনা করা যায়। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ওয়েবসাইটে এই ক্যালকুলেটর সুবিধা পাওয়া যায়। বিনিয়োগের পরিমাণ এবং বর্তমান সুদের হার দিলেই মাসিক আয়ের হিসাব পাওয়া যায়।
এই স্কিমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর কর সুবিধা। মাসিক প্রাপ্ত সুদের উপর আয়কর প্রযোজ্য, তবে বিনিয়োগকৃত মূল অর্থ আয়কর আইনের ৮০সি ধারার অধীনে কর ছাড়ের জন্য বিবেচিত হয় না। তবে সুদের উপর TDS কাটা হয় না যদি বার্ষিক সুদ ৪০ হাজার টাকার নিচে থাকে।
বর্তমান বাজারে বিভিন্ন বিনিয়োগের বিকল্প থাকলেও MIS-এর নিরাপত্তা এবং নিয়মিত আয়ের নিশ্চয়তা এটিকে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। বিশেষ করে ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে চান এমন বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি আদর্শ পছন্দ। ৫০ হাজার টাকার বিনিয়োগে মাসিক ৩০৮ টাকা সুদ পাওয়া যাওয়ায় এটি ছোট থেকে মাঝারি বিনিয়োগকারীদের জন্যও সুবিধাজনক।
সরকারের পক্ষ থেকে এই স্কিমে ক্রমাগত উন্নতি আনা হচ্ছে। সম্প্রতি একক অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগের সীমা ৪.৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৯ লাখ এবং যৌথ অ্যাকাউন্টে ৯ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। এই পরিবর্তন আরও বেশি মানুষকে এই স্কিমের আওতায় নিয়ে আসতে সহায়ক।ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সরকারি নীতির উপর ভিত্তি করে MIS-এর সুদের হারে পরিবর্তন হতে পারে। তবে সরকারি নিশ্চয়তা এবং স্থিতিশীলতার কারণে এই স্কিম দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক পরিকল্পনার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।