Poush Sankranti 2025 date and significance: পৌষ সংক্রান্তি বা Makar Sankranti হলো হিন্দু ক্যালেন্ডারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব যা প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে পালিত হয়। 2025 সালে এই উৎসবটি 14 জানুয়ারি, মঙ্গলবার পালিত হবে। এই দিনটি সূর্যের মকর রাশিতে প্রবেশের সাথে সম্পর্কিত, যা শীতকালের শেষ এবং দীর্ঘ দিনের শুরুর প্রতীক। এটি একটি ফসল কাটার উৎসব হিসেবেও পরিচিত, যা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পালিত হয়।
পৌষ সংক্রান্তির তাৎপর্য
পৌষ সংক্রান্তি শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি সামাজিক ও কৃষি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই উৎসবের মাধ্যমে মানুষ প্রকৃতির সাথে তাদের সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে এবং নতুন বছরের শুরুতে আশা ও আনন্দের বার্তা ছড়িয়ে দেয়।
জ্যোতিষশাস্ত্রীয় গুরুত্ব
পৌষ সংক্রান্তি সূর্যের উত্তরায়ণ যাত্রার শুরু নির্দেশ করে, যা হিন্দু ঐতিহ্যে একটি শুভ সময় হিসেবে বিবেচিত হয়। এই সময়কাল নতুন উদ্যোগ শুরু করার জন্য আদর্শ বলে মনে করা হয়।
সাংস্কৃতিক তাৎপর্য
এই উৎসব ভারতীয় সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ও ঐতিহ্যের প্রতিফলন। বিভিন্ন রাজ্যে এটি বিভিন্ন নামে পালিত হয়, যেমন পঞ্জাবে লোহড়ি, তামিলনাড়ুতে পোঙ্গল, এবং গুজরাটে উত্তরায়ণ।
পৌষ সংক্রান্তি 2025 উদযাপন
2025 সালের পৌষ সংক্রান্তি উদযাপনের বিস্তারিত তথ্য নিম্নরূপ:
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
তারিখ | 14 জানুয়ারি, 2025 (মঙ্গলবার) |
শুভ সময় | সকাল 7:15 থেকে বিকাল 5:46 |
পুণ্য কাল | সকাল 9:03 থেকে বিকাল 5:46 |
মহা পুণ্য কাল | সকাল 9:03 থেকে সকাল 10:48 |
উদযাপনের রীতি-নীতি
পৌষ সংক্রান্তি উদযাপনের কিছু প্রচলিত রীতি-নীতি:
- সূর্য পূজা: সূর্য দেবতার উদ্দেশ্যে বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
- পবিত্র স্নান: অনেকে পবিত্র নদীতে স্নান করে আত্মশুদ্ধি করেন।
- দান-ধ্যান: এই দিনে দান করা বিশেষ পুণ্যের কাজ বলে বিবেচিত হয়।
- ঘুড়ি উড়ানো: বিশেষ করে গুজরাট ও রাজস্থানে ঘুড়ি উড়ানো একটি জনপ্রিয় আনন্দের উপায়।
আঞ্চলিক উদযাপন বৈচিত্র্য
পৌষ সংক্রান্তি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্নভাবে উদযাপিত হয়:
পশ্চিমবঙ্গে
পশ্চিমবঙ্গে এই উৎসব পৌষ পার্বণ নামে পরিচিত। এখানে পিঠে-পুলি তৈরি করা হয় এবং নতুন ধান দিয়ে খিচুড়ি রান্না করা হয়।
তামিলনাড়ুতে
তামিলনাড়ুতে এই উৎসব পোঙ্গল নামে পরিচিত। চার দিন ধরে এই উৎসব পালিত হয়, যেখানে নতুন চাল দিয়ে বিশেষ পোঙ্গল রান্না করা হয়।
গুজরাট ও রাজস্থানে
এই দুই রাজ্যে উৎসবটি উত্তরায়ণ নামে পরিচিত। ঘুড়ি উড়ানো এখানকার প্রধান আকর্ষণ, যা ডিসেম্বর থেকেই শুরু হয়ে যায়।
বিহার ও ঝাড়খণ্ডে
এখানে লোকেরা নদী বা পুকুরে স্নান করে এবং মৌসুমি খাবার যেমন চুড়া, তিল দিয়ে তৈরি মিষ্টি ইত্যাদি খায়।
পৌষ সংক্রান্তির ঐতিহাসিক গুরুত্ব
পৌষ সংক্রান্তি একটি প্রাচীন উৎসব যার ইতিহাস হাজার বছরের পুরনো। এটি হিন্দু সৌর ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নির্ধারিত হয়, যা সূর্যের গতিপথের উপর ভিত্তি করে তৈরি।
কৃষি ও মৌসুমি গুরুত্ব
এই উৎসব কৃষি ক্যালেন্ডারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি শীতকালের শেষ এবং বসন্তের আগমনের ইঙ্গিত দেয়, যা কৃষকদের জন্য নতুন ফসল রোপণের সময়।
আধ্যাত্মিক তাৎপর্য
হিন্দু ধর্মে, এই সময়টি আত্মশুদ্ধি ও নবজাগরণের প্রতীক। বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে সূর্যের রশ্মি বিশেষ শুদ্ধিকরণ ও আরোগ্যদায়ক শক্তি ধারণ করে।
পৌষ সংক্রান্তির খাদ্যাভ্যাস
পৌষ সংক্রান্তিতে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরি করা হয়:
- তিল-গুড় লাড্ডু: তিল ও গুড় দিয়ে তৈরি এই মিষ্টি শীতকালে শরীরকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে।
- পুরণ পোলি: মহারাষ্ট্রের একটি বিখ্যাত মিষ্টি পিঠা।
- খিচুড়ি: উত্তর ভারতে এই দিনে বিশেষভাবে খিচুড়ি রান্না করা হয়।
- উন্ধিয়ু: গুজরাটের একটি জনপ্রিয় শাকসবজির ডিশ।
- পোঙ্গল: দক্ষিণ ভারতে নতুন ধান দিয়ে তৈরি একটি বিশেষ খাবার।
RBI New Guidelines 2025: ৩ ধরনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ১ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে বন্ধ হবে
আধুনিক যুগে পৌষ সংক্রান্তি উদযাপন
আধুনিক সমাজে পৌষ সংক্রান্তি উদযাপনের ধরণ কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে:
- সামাজিক মিডিয়া: লোকেরা সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেচ্ছা বিনিময় করে এবং উৎসবের ছবি শেয়ার করে।
- সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: শহরাঞ্চলে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
- পারিবারিক মিলনমেলা: পরিবার ও বন্ধুদের সাথে মিলিত হওয়ার একটি সুযোগ হিসেবে এই উৎসব পালিত হয়।
- পরিবেশ সচেতনতা: অনেকে প্লাস্টিকমুক্ত ঘুড়ি ব্যবহার করে পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা বাড়াচ্ছে।
পৌষ সংক্রান্তি 2025 শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি জীবন্ত উদাহরণ। এই উৎসব মানুষকে প্রকৃতির সাথে সংযোগ স্থাপন করতে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে এবং নতুন শুরুর জন্য প্রস্তুত হতে অনুপ্রাণিত করে। 2025 সালের 14 জানুয়ারি যখন সূর্য মকর রাশিতে প্রবেশ করবে, তখন সারা দেশ জুড়ে উৎসবের আনন্দ ছড়িয়ে পড়বে, যা ভারতের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বৈচিত্র্যের প্রতিফলন।