Symbols on Indian currency: স্বাধীনতার পর ভারতীয় মুদ্রায় মহাত্মা গান্ধীর ছবি থাকাটা এখন স্বাভাবিক মনে হলেও, প্রথম দিকে তা ছিল না। বরং গান্ধীজির ছবি প্রথমে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। স্বাধীনতার পর নতুন মুদ্রা প্রচলনের সময় গান্ধীজির পরিবর্তে অন্য একটি প্রতীক বেছে নেওয়া হয়েছিল।রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (RBI) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট মধ্যরাতে ভারত স্বাধীনতা লাভ করলেও প্রজাতন্ত্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয় ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি। এই মধ্যবর্তী সময়ে RBI পুরনো নোট চালু রেখেছিল। ১৯৪৯ সালে ভারত সরকার নতুন ডিজাইনের ১ টাকার নোট প্রকাশ করে।
স্বাধীন ভারতের জন্য নতুন প্রতীক নির্বাচন করতে হয়েছিল। প্রথমে মনে করা হয়েছিল রাজার ছবির পরিবর্তে মহাত্মা গান্ধীর ছবি ব্যবহার করা হবে। সেই অনুযায়ী ডিজাইনও তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গান্ধীজির ছবির পরিবর্তে সারনাথের সিংহ মূর্তি (Lion Capital) বেছে নেওয়া হয়।১৯৫০ এবং ৬০-এর দশকে ভারতীয় মুদ্রায় বাঘ ও হরিণের মতো রাজকীয় প্রাণী, হীরাকুদ বাঁধ ও আর্যভট্ট উপগ্রহের মতো শিল্পোন্নয়নের প্রতীক এবং বৃহদেশ্বর মন্দিরের মতো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ছবি ব্যবহার করা হয়েছিল। এগুলি নবজাত ভারতের উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণের প্রতি মনোযোগ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছিল।গান্ধীজির ছবি প্রথম মুদ্রায় এসেছিল ১৯৬৯ সালে, তাঁর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে। এই ছবিতে গান্ধীজি বসে আছেন এবং পিছনে তাঁর সেবাগ্রাম আশ্রম দেখা যাচ্ছে। ১৯৮৭ সালে তৎকালীন রাজীব গান্ধী সরকার ৫০০ টাকার নোট পুনরায় চালু করলে সেখানেও গান্ধীজির ছবি ব্যবহার করা হয়।
Indian Historical Event: ভারতীয় ইতিহাসের ২৭ শে জুন: এক নজরে
১৯৯৬ সালে RBI মহাত্মা গান্ধী সিরিজ চালু করে, যেখানে উন্নত নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য যেমন জলছাপ ও নিরাপত্তা সুতো যুক্ত করা হয়। এই সময় থেকেই গান্ধীজির ছবি সব মূল্যমানের ভারতীয় মুদ্রায় স্থায়ীভাবে স্থান পায়। বিভিন্ন সময়ে অন্যান্য নেতা যেমন জওহরলাল নেহরু, সুভাষচন্দ্র বসু, সর্দার প্যাটেল এমনকি লক্ষ্মী ও গণেশের মতো দেবদেবীর ছবি মুদ্রায় ব্যবহারের দাবি উঠলেও তা গ্রহণ করা হয়নি।২০১৬ সালে অর্থমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল জানিয়েছিলেন, “ইউপিএ আমলে গঠিত একটি কমিটি ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে মুদ্রায় মহাত্মা গান্ধীর ছবি পরিবর্তনের কোনও প্রয়োজন নেই।”
তবে ২০১৫ সালের ৬ ডিসেম্বর ডঃ বি.আর. আম্বেদকরের জয়ন্তী উপলক্ষে সরকার ১২৫ টাকার একটি অ-প্রচলিত স্মারক মুদ্রা এবং ১০ টাকার একটি প্রচলিত মুদ্রা জারি করেছিল। মাদ্রাস হাইকোর্ট সম্প্রতি মুদ্রায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ছবি ছাপানোর একটি আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। আদালত মনে করেছে কেন্দ্রীয় সরকার ও RBI-এর সিদ্ধান্তে কোনও ত্রুটি নেই। ২০১৬ সালের বিমুদ্রাকরণের পর RBI মহাত্মা গান্ধী নতুন সিরিজের নোট চালু করে। নোটের রং পরিবর্তন করা হলেও গান্ধীজির ছবি অপরিবর্তিত রাখা হয়। পিছনে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের লোগো যুক্ত করা হয়।২০১৪ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি লোকসভায় জানিয়েছিলেন, RBI-এর একটি প্যানেল মুদ্রায় অন্য কোনও জাতীয় নেতার ছবি অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে মহাত্মা গান্ধীর চেয়ে ভালভাবে দেশের মূল্যবোধ প্রতিফলিত করতে পারে এমন আর কেউ নেই।
২৫শে জুন: ভারতের ঐতিহাসিক মুহূর্তের প্রেক্ষাপটে
সারাংশে বলা যায়, স্বাধীনতার পর প্রথম দিকে ভারতীয় মুদ্রায় গান্ধীজির ছবি ছিল না। কিন্তু পরবর্তীকালে তাঁর ছবি ক্রমশ স্থায়ী হয়ে ওঠে এবং বর্তমানে সকল মূল্যমানের নোটে গান্ধীজির ছবিই ব্যবহৃত হচ্ছে।