Paris Paralympics 2024: মীরাটের প্রীতি প্যারালিম্পিক্সে ১০০ মিটারে ব্রোঞ্জ জিতে ইতিহাস গড়লেন

মীরাটের ২৩ বছর বয়সী প্রীতি পাল প্যারিস প্যারালিম্পিক্স ২০২৪-এ মহিলাদের ১০০ মিটার টি৩৫ ইভেন্টে ব্রোঞ্জ পদক জিতে ইতিহাস গড়েছেন। তিনি ১৪.২১ সেকেন্ডে রেস শেষ করে নিজের সেরা সময় গড়েছেন এবং…

Ani Roy

 

মীরাটের ২৩ বছর বয়সী প্রীতি পাল প্যারিস প্যারালিম্পিক্স ২০২৪-এ মহিলাদের ১০০ মিটার টি৩৫ ইভেন্টে ব্রোঞ্জ পদক জিতে ইতিহাস গড়েছেন। তিনি ১৪.২১ সেকেন্ডে রেস শেষ করে নিজের সেরা সময় গড়েছেন এবং ভারতের প্রথম প্যারালিম্পিক ট্র্যাক মেডেল জিতেছেন।

প্রীতি জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্মেছিলেন। জন্মের ৬ দিন পর তার নিম্নাঙ্গে প্লাস্টার করা হয়েছিল। দুর্বল পা এবং অস্বাভাবিক পায়ের অবস্থানের কারণে তিনি বিভিন্ন রোগের শিকার হতেন। ৫ বছর বয়স থেকে ৮ বছর ধরে তিনি ক্যালিপার পরতেন।

১৭ বছর বয়সে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্যারালিম্পিক গেমস দেখে তার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যায়। প্যারালিম্পিক অ্যাথলিট ফাতিমা খাতুনের সাথে দেখা হওয়ার পর তিনি প্যারা অ্যাথলেটিক্সে যোগ দেন। ২০১৮ সাল থেকে তিনি রাজ্য ও জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।

স্বর্ণালী মুহূর্ত: ভারতের অলিম্পিক সাফল্যের ১০টি অবিস্মরণীয় পদক

গত বছর চীনে এশিয়ান প্যারা গেমসে ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টে চতুর্থ স্থান অর্জন করেন প্রীতি। এরপর দিল্লিতে কোচ গজেন্দ্র সিংয়ের অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের কৌশল উন্নত করেন। ফলস্বরূপ বিশ্ব প্যারা অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ ও ২০০ মিটারে ব্রোঞ্জ জেতেন।

প্রীতির এই সাফল্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি টুইটারে লিখেছেন, “প্রীতি পালের #Paralympics2024-এ ১০০ মিটার টি৩৫ ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জয়ে ভারতের জন্য আরও গৌরব। তাকে অভিনন্দন। এই সাফল্য নিশ্চয়ই ভবিষ্যৎ অ্যাথলিটদের অনুপ্রাণিত করবে।”

প্রীতির এই পদক জয়ের ফলে ভারতের প্যারালিম্পিক পদক সংখ্যা ৩ হলো। এর আগে অবনী লেখারা শুটিংয়ে সোনা এবং মোনা আগরওয়াল ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন।

প্রীতির পদক জয়ের ফলাফল:

স্থান অ্যাথলিট দেশ সময়
স্বর্ণ ঝিয়া ঝু চীন ১৩.৫৮ সেকেন্ড
রৌপ্য কিয়ানকিয়ান গুও চীন ১৩.৭৪ সেকেন্ড
ব্রোঞ্জ প্রীতি পাল ভারত ১৪.২১ সেকেন্ড

 

প্রীতির এই সাফল্য ভারতীয় প্যারা অ্যাথলেটিক্সের জন্য একটি মাইলফলক। এর ফলে দেশের অন্যান্য প্রতিবন্ধী অ্যাথলিটরাও অনুপ্রাণিত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। প্রীতির গল্প প্রমাণ করে যে কঠোর পরিশ্রম ও দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমে সকল বাধা অতিক্রম করে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।

প্রীতির কোচ গজেন্দ্র সিং বলেন, “প্রীতি অসাধারণ মেধা ও প্রতিভার অধিকারী। সে কঠোর পরিশ্রম করে এই সাফল্য অর্জন করেছে। আমি নিশ্চিত যে সে আরও উন্নতি করবে এবং আগামী দিনে আরও ভালো ফল করবে।”

ভারতীয় প্যারালিম্পিক কমিটির সভাপতি দীপা মালিক বলেন, “প্রীতির এই সাফল্য ভারতীয় প্যারা অ্যাথলেটিক্সের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। এটি প্রমাণ করে যে আমাদের অ্যাথলিটরা বিশ্বের সেরাদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম।”

যুগান্তকারী মুহূর্ত: মনু ভাকের হাত ধরে ভারতের অলিম্পিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায়!

প্রীতির এই সাফল্যের ফলে ভারতীয় প্যারা অ্যাথলেটিক্স আরও উন্নতি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকার ইতিমধ্যেই প্যারা অ্যাথলিটদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছে। Target Olympic Podium Scheme-এর আওতায় প্রীতিকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

প্রীতির পরিবার তার এই সাফল্যে গর্বিত। তার বাবা বলেন, “আমরা খুবই আনন্দিত। প্রীতি জন্ম থেকেই নানা প্রতিকূলতার মধ্যে বড় হয়েছে। কিন্তু সে কখনও হার মানেনি। তার এই সাফল্য প্রমাণ করে যে কঠোর পরিশ্রম ও দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমে সব কিছু সম্ভব।”

প্রীতির এই সাফল্য শুধু তার নিজের জন্য নয়, সমগ্র দেশের জন্য গর্বের। এটি প্রমাণ করে যে প্রতিবন্ধকতা কোনো বাধা নয়, বরং এটি একটি চ্যালেঞ্জ যা অতিক্রম করা সম্ভব। প্রীতির গল্প লাখো প্রতিবন্ধী মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।

প্রীতি এখনও ২০০ মিটার ইভেন্টে প্রতিযোগিতা করবেন। সেখানেও তিনি পদক জয়ের আশা করছেন। তার এই সাফল্য ভারতীয় প্যারালিম্পিক দলকে আরও উৎসাহিত করেছে।

প্যারালিম্পিক্সে ভারতের পারফরম্যান্স ক্রমশ উন্নত হচ্ছে। ২০১৬ সালের রিও প্যারালিম্পিক্সে ভারত ৪টি পদক জিতেছিল। ২০২০ টোকিও প্যারালিম্পিক্সে সেটি বেড়ে হয়েছিল ১৯টি। প্যারিসে ভারত আরও ভালো করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে।

প্রীতির এই সাফল্য প্রমাণ করে যে সঠিক প্রশিক্ষণ, সরকারি সহায়তা এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তির সমন্বয়ে অসাধ্য সাধন করা সম্ভব। এটি ভারতীয় ক্রীড়াঙ্গনে একটি নতুন যুগের সূচনা করল। আশা করা যায়, আগামী দিনে আরও অনেক প্রীতি পাল তৈরি হবে যারা দেশের নাম উজ্জ্বল করবে।

 

About Author
Ani Roy

অনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এডুকেশনে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। শিক্ষার প্রতি গভীর অনুরাগ এবং আজীবন শেখার প্রতি প্রতিশ্রুতি নিয়ে অনি নতুন শিক্ষামূলক পদ্ধতি ও প্র্যাকটিসগুলি অন্বেষণ করতে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তার একাডেমিক যাত্রা তাকে শিক্ষার তত্ত্ব এবং ব্যবহারিক শিক্ষণ কৌশলগুলিতে দৃঢ় ভিত্তি প্রদান করেছে। অনি অন্তর্দৃষ্টি এবং দক্ষতা তার চিন্তাশীল লেখাগুলিতে প্রতিফলিত হয়, যা শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত ও তথ্যপূর্ণ করার উদ্দেশ্যে লেখা। তিনি তার আকর্ষণীয় এবং প্রভাবশালী কাজের মাধ্যমে শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান রাখতে থাকেন।