Side effects of Hair straightening: চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে অনেকেই হেয়ার স্ট্রেইটনিং করান। কিন্তু এই প্রক্রিয়া কি সত্যিই নিরাপদ? সম্প্রতি একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনায় দেখা গেছে, চুল স্ট্রেইট করার পর একজন তরুণীর কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ঘটনা থেকে উঠে এসেছে প্রশ্ন – হেয়ার স্ট্রেইটনিং কি আসলেই নিরাপদ? আসুন জেনে নেওয়া যাক এর সম্ভাব্য ঝুঁকি ও সতর্কতা সম্পর্কে।
হেয়ার স্ট্রেইটনিংয়ের ঝুঁকি
হেয়ার স্ট্রেইটনিং একটি জনপ্রিয় কসমেটিক প্রক্রিয়া হলেও এর বেশ কিছু ঝুঁকি রয়েছে:
চুলের ক্ষতি
- হেয়ার স্ট্রেইটনিং করলে চুলের গুরুতর ক্ষতি হতে পারে:
- চুল অত্যধিক রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায়
- চুলের স্বাভাবিক তেল নষ্ট হয়ে যায়
- চুলের ডগা ফেটে যায়
- চুল দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে
- চুলের স্বাভাবিক চকচকে ভাব হারিয়ে যায়
Hair Treatment: কলার ও মধুর মধ্যে লুকিয়ে আছে চুলের সৌন্দর্য্যের রহস্য
চুল পড়া বৃদ্ধি
নিয়মিত হেয়ার স্ট্রেইটনিং করলে চুল পড়ার সমস্যা বাড়তে পারে:
- কেমিক্যাল ট্রিটমেন্টের কারণে চুলের ফলিকল দুর্বল হয়ে যায়
- চুলের গোড়া আলগা হয়ে যায়
- স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি চুল পড়তে থাকে
চুলের বৃদ্ধি কমে যাওয়া
হেয়ার স্ট্রেইটনিংয়ের ফলে চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে:
- চুলের কিউটিকল ক্ষতিগ্রস্ত হয়
- চুলের বৃদ্ধির হার কমে যায়
- নতুন চুল গজানোর প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়
স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি
সাম্প্রতিক একটি ঘটনায় দেখা গেছে, হেয়ার স্ট্রেইটনিংয়ের পর একজন তরুণীর কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে:
- চুল স্ট্রেইট করার পর তরুণীর মূত্রের সাথে রক্ত বের হতে থাকে
- চিকিৎসকরা জানান, স্ট্রেইটনিং ক্রিমে থাকা অ্যাসিড কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে
- এই ধরনের ঘটনা খুবই বিরল, তবে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি
সতর্কতামূলক ব্যবস্থা
হেয়ার স্ট্রেইটনিংয়ের ঝুঁকি এড়াতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:
সঠিক তাপমাত্রা নির্বাচন
- চুলের ধরন অনুযায়ী উপযুক্ত তাপমাত্রা নির্বাচন করুন
- অতিরিক্ত উচ্চ তাপমাত্রা চুলের ক্ষতি করতে পারে
- স্ট্রেইটনার ব্যবহারের আগে চুলে স্পর্শ করে তাপমাত্রা পরীক্ষা করুন
Save Hair from Humidity: আর্দ্রতার কবল থেকে চুল বাঁচানোর ১০টি অব্যর্থ উপায়
সীমিত ব্যবহার
- একই স্থানে বারবার স্ট্রেইটনার ব্যবহার করবেন না
- সোজা চুলের ক্ষেত্রে একবার, কোঁকড়া চুলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২-৩ বার ব্যবহার করুন
Heat Protectant ব্যবহার
- স্ট্রেইটনিংয়ের আগে অবশ্যই Heat Protectant স্প্রে ব্যবহার করুন
- এটি চুলকে তাপ থেকে রক্ষা করে এবং ক্ষতি কমায়
পেশাদার সাহায্য নেওয়া
- বাড়িতে নিজে স্ট্রেইটনিং না করে পেশাদার পার্লারে যান
- অভিজ্ঞ স্টাইলিস্টরা সঠিক পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পারেন
প্যাচ টেস্ট
- যেকোনো কেমিক্যাল ট্রিটমেন্টের আগে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করুন
- এতে অ্যালার্জি বা অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়ানো যায়
বিকল্প পদ্ধতি
হেয়ার স্ট্রেইটনিংয়ের বিকল্প হিসেবে কিছু প্রাকৃতিক উপায় রয়েছে:
- নারকেল তেল ও লেবুর রস দিয়ে চুল ধোয়া
- আমলকি, শিকাকাই ইত্যাদি ব্যবহার করা
- প্রাকৃতিক Hair Mask ব্যবহার করা
- সঠিক পুষ্টি গ্রহণ করা
বিশেষজ্ঞদের মতামত
ডার্মাটোলজিস্ট ডাঃ সুমন চক্রবর্তী জানান, “নিয়মিত হেয়ার স্ট্রেইটনিং চুলের জন্য ক্ষতিকর। এটি চুলের প্রোটিন স্ট্রাকচার নষ্ট করে এবং চুলকে দুর্বল করে। তাই সম্ভব হলে এড়িয়ে চলাই ভালো।”ট্রাইকোলজিস্ট ডাঃ অনিন্দিতা সেন বলেন, “হেয়ার স্ট্রেইটনিংয়ের পর চুলের যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি। প্রোটিন ট্রিটমেন্ট, ডীপ কন্ডিশনিং ইত্যাদি নিয়মিত করা উচিত।”
হেয়ার স্ট্রেইটনিং একটি জনপ্রিয় কসমেটিক প্রক্রিয়া হলেও এর বেশ কিছু ঝুঁকি রয়েছে। চুলের ক্ষতি থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যগত সমস্যা পর্যন্ত হতে পারে। তাই সতর্কতা অবলম্বন করা এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চুলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য বজায় রাখতে প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করাই শ্রেয়। তবে হেয়ার স্ট্রেইটনিং করতেই চাইলে, পেশাদার সাহায্য নিন এবং যথাযথ যত্ন নিন। মনে রাখবেন, আপনার স্বাস্থ্যই আপনার সৌন্দর্যের মূল চাবিকাঠি।