গত সোমবার দুপুরে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বিক্ষোভকারীরা প্রবেশ করেছে। এই ঘটনায় শ্রীলঙ্কার স্মৃতি ফিরে এসেছে, যেখানে গত বছর বিক্ষোভকারীরা রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবনে প্রবেশ করেছিল।
ঘটনার বিবরণ:
সূত্র অনুযায়ী, সোমবার দুপুরে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী গণভবনের দিকে এগিয়ে যায়। তারা গণভবনের প্রবেশদ্বার ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা গণভবনের বিভিন্ন কক্ষে ঘুরে বেড়ায় এবং সেখানে থাকা জিনিসপত্র ভাঙচুর করে।একজন বিক্ষোভকারী জানান, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের উপর নির্যাতন চালালে আমরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠি। আমরা আর সহ্য করতে পারছি না। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও দেশত্যাগ
গণভবনে বিক্ষোভকারীদের প্রবেশের আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন বলে জানা গেছে। তবে তিনি কোথায় গেছেন তা এখনও স্পষ্ট নয়।একজন সরকারি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “প্রধানমন্ত্রী দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে পদত্যাগ করেছেন। তিনি নিরাপত্তার কারণে দেশ ছেড়ে গেছেন।”
বিক্ষোভের কারণ
বিগত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশে ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকট চলছে। মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “গত এক বছরে খাদ্যদ্রব্যের দাম প্রায় ৫০% বেড়েছে। বেকারত্ব বেড়েছে। মানুষের আয় কমেছে। এর ফলে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ জমে উঠেছিল।”
শ্রীলঙ্কার সাথে তুলনা
গত বছর শ্রীলঙ্কায় অনুরূপ পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল। সেখানেও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বিক্ষোভকারীরা রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবনে প্রবেশ করেছিল। এর ফলে রাষ্ট্রপতি গোটাবায়া রাজাপাক্ষে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আলী রিয়াজ বলেন, “বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি অনেকটা শ্রীলঙ্কার মতো। দুই দেশেই দীর্ঘদিন ধরে একই পরিবারের শাসন চলছিল। দুনীর্তি ও স্বজনপ্রীতি বেড়ে গিয়েছিল। এর ফলে অর্থনীতি ধ্বংসের মুখে পড়েছে।”
সম্ভাব্য প্রভাব
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ঘটনার ফলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি উঠতে পারে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ প্রত্যাহার করতে পারে।অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতি আরও খারাপ হতে পারে। মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে পারে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট তীব্র হতে পারে। সরকারকে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।”
বাংলাদেশে গণভবনে বিক্ষোভকারীদের প্রবেশের ঘটনা শ্রীলঙ্কার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। এই ঘটনা দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। সরকার ও বিরোধী দলগুলোকে সংযম প্রদর্শন করে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। অন্যথায় দেশের অর্থনীতি ও স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়তে পারে।