সাইকোলজি শিক্ষার ক্ষেত্রে গত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় ক্যারিয়ার পথ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ভারতে সাইকোলজি শিক্ষা ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বর্তমানে দেশের ৭৫০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে সাইকোলজি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা দেওয়া হয়। এর মধ্যে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়, মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়, এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
University Grants Commission (UGC) এর তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে সাইকোলজি বিষয়ে ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৩০% বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধি মূলত মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে বর্ধিত সচেতনতা এবং কর্মক্ষেত্রে সাইকোলজিস্টদের চাহিদা বৃদ্ধির ফলস্বরূপ।
সাইকোলজি পড়ার জন্য প্রাথমিকভাবে বিজ্ঞান বা মানবিক শাখা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা প্রয়োজন। তবে, শুধুমাত্র একাডেমিক যোগ্যতাই যথেষ্ট নয়। একজন ভালো সাইকোলজিস্ট হওয়ার জন্য নিম্নলিখিত গুণাবলী থাকা প্রয়োজন:
Indian Association of Clinical Psychologists (IACP) এর মতে, এই গুণাবলী ছাড়াও, ছাত্রছাত্রীদের মানব আচরণ ও মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে গভীর আগ্রহ থাকা প্রয়োজন।
ক) ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট: মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নির্ণয় ও চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ। হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ব্যক্তিগত প্র্যাকটিসে কাজ করেন।
খ) কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট: ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা পেশাগত সমস্যা সমাধানে সহায়তা করেন।
গ) শিক্ষা সাইকোলজিস্ট: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ও শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেন।
ঘ) সংগঠন সাইকোলজিস্ট: কর্পোরেট ক্ষেত্রে কর্মী নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও সংগঠন উন্নয়নে কাজ করেন।
ঙ) গবেষণা ও একাডেমিক ক্ষেত্র: বিশ্ববিদ্যালয় বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনা ও গবেষণায় নিযুক্ত থাকেন।
National Career Service (NCS) এর তথ্য অনুযায়ী, ভারতে গত তিন বছরে সাইকোলজি সংক্রান্ত চাকরির সুযোগ প্রায় ২৫% বৃদ্ধি পেয়েছে।
Indian Council of Social Science Research (ICSSR) এর একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত গবেষণা ও প্র্যাক্টিক্যাল কাজে যুক্ত থাকেন, তাদের পেশাগত সফলতার হার ৪০% বেশি।
National Institute of Mental Health and Neurosciences (NIMHANS) এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীর ঘাটতি রয়েছে। প্রতি ১০০,০০০ জনসংখ্যায় মাত্র ০.৭৫ জন সাইকায়াট্রিস্ট এবং ০.০৭ জন সাইকোলজিস্ট রয়েছেন, যা WHO এর সুপারিশকৃত সংখ্যার তুলনায় অনেক কম।
Indian Journal of Psychiatry এর একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছরে ভারতে ডিজিটাল মানসিক স্বাস্থ্যসেবার বাজার প্রায় ৩০% বার্ষিক হারে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভারতে সাইকোলজি শিক্ষা ও পেশা উভয় ক্ষেত্রেই উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে। সঠিক পরিকল্পনা, কঠোর পরিশ্রম ও নিরন্তর শেখার মাধ্যমে এই ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করা সম্ভব।
মন্তব্য করুন