Quota Activists Use the Term Rajakar: রাজাকার থেকে কোটা বিরোধী: বাংলাদেশের ইতিহাসের এক বিস্ময়কর মোড়”বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ৫৩ বছর পর একটি শব্দ আবার ফিরে এসেছে – ‘রাজাকার’। কিন্তু এবার তা এসেছে একেবারে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের রাজপথে শোনা যাচ্ছে এক অদ্ভুত স্লোগান – “তুমি কে, আমি কে, রাজাকার, রাজাকার।” এই স্লোগান দিচ্ছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছাত্র-ছাত্রীরা। কিন্তু কেন? কীভাবে একটি ঘৃণিত শব্দ হঠাৎ করে আন্দোলনের মুখপাত্র হয়ে উঠলো? আসুন জেনে নেওয়া যাক এই বিস্ময়কর ঘটনার পেছনের কাহিনী।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ‘রাজাকার’ শব্দটি ছিল অত্যন্ত ঘৃণিত। এরা ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও ঐতিহাসিক মুন্তাসির মামুন জানিয়েছেন, ‘রাজাকার’ শব্দটি আসলে ‘সহযোগী’-এর সমার্থক।রাজাকার বাহিনী গঠনের পেছনে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সুপরিকল্পিত কৌশল। ১৯৭১ সালের মে মাসে খুলনায় প্রথম রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। এর পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাজাকার ইউনিট গঠন করা হয়। তারা পাকিস্তানি বাহিনীকে সাহায্য করত, আশ্রয় দিত এবং মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার চালাত।
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
গঠনের সময় | ১৯৭১ সালের মে মাস |
প্রথম গঠনের স্থান | খুলনা |
সদস্য সংখ্যা | প্রায় ৩০,০০০-৪০,০০০ |
প্রধান কার্যক্রম | পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা, মুক্তিযোদ্ধাদের বিরোধিতা |
প্রধান নেতা | মতিউর রহমান নিজামী (পরবর্তীতে জামায়াতে ইসলামীর প্রধান) |
যুদ্ধাপরাধ তথ্যানুসন্ধান কমিটির প্রধান ড. ইমরান হাসান জানিয়েছেন, রাজাকাররা পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে বিভিন্ন কার্যক্রমে জড়িত ছিল। তারা পাকিস্তানি বাহিনীকে সমর্থন করত, আশ্রয় দিত, এমনকি মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করত।
রক্তাক্ত ক্যাম্পাস: শিক্ষার্থীদের বাঁচান মাননীয়া, সরকারের কঠোর অবস্থান
স্বাধীনতার পর থেকে ‘রাজাকার’ শব্দটি বাংলাদেশে একটি অপমানজনক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। এটি বিশ্বাসঘাতক বা প্রতারকের সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের চিহ্নিত করতে এই শব্দটি ব্যবহার করা হতো।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন নতুন মাত্রা পেয়েছে। আন্দোলনকারীরা ‘রাজাকার’ শব্দটিকে নিজেদের পরিচয় হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেছে। এটি একটি বিস্ময়কর ঘটনা, যা দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় তুলেছে।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, তারা নিজেদেরকে ‘রাজাকার’ বলছেন কারণ তাদের মতে সরকার তাদেরকে দেশদ্রোহী হিসেবে চিত্রিত করছে। তারা মনে করেন, তাদের ন্যায্য দাবি উপেক্ষা করা হচ্ছে এবং তাদের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে।
কোটা আন্দোলনে ছাত্র মৃত্যুর পিছনে লুকানো সত্য যা জানলে আপনিও স্তম্ভিত হবেন!
সরকার এই ঘটনাকে গুরুতর দৃষ্টিতে দেখছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, “মুক্তিযোদ্ধারা কোটার সুবিধা পাবে না তো কী রাজাকারের বাচ্চারা পাবে!” এই মন্তব্য আরও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।অন্যদিকে, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কড়া বিবৃতি জারি করে রাজাকারদের নামে জয়ধ্বনীর তীব্র নিন্দা করেছে। তারা এই কর্মকাণ্ডকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলে অভিযুক্ত করে সরকারকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির জটিলতাকে তুলে ধরেছে। তারা বলছেন, এটি কেবল কোটা সংস্কারের বিষয় নয়, বরং দেশের যুবসমাজের ক্ষোভ ও হতাশার বহিঃপ্রকাশ।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মুন্তাসির মামুন মনে করেন, “এই ঘটনা দেখিয়ে দেয় যে, আমাদের ইতিহাস ও বর্তমানের মধ্যে একটা বড় বিচ্ছেদ তৈরি হয়েছে। আমরা যুবসমাজকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সঠিকভাবে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি।”
এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন:
বাংলাদেশের ইতিহাসের এক জটিল মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে দেশটি। একদিকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, অন্যদিকে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা – এই দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ‘রাজাকার’ শব্দের এই নতুন ব্যবহার হয়তো একটি সতর্কবার্তা, যা বলছে যে আমাদের ইতিহাস ও বর্তমানের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করার সময় এসেছে।
“এ বয়স জেনো ভীরু, কাপুরুষ নয়
পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে,
এ বয়সে তাই নেই কোনো সংশয়-
এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে ।”এই কবিতার মতোই, আজকের যুবসমাজ তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছে। কিন্তু সেই লড়াইয়ে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি নয়, বরং ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার আহ্বান রয়েছে। বাংলাদেশের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে অতীত ও বর্তমানের মধ্যে সেতু বাঁধা যায়, যাতে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি অব্যাহত থাকে।