R G Kar Protest about Justice: কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় রবিবার রাতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছেন আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসক খুনের ঘটনার প্রতিবাদে। এক মাস আগে ৯ আগস্ট রাতে আরজি কর হাসপাতালে এক মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছিল। সেই ঘটনার প্রতিবাদে গত এক মাস ধরে রাজ্যজুড়ে চলছে বিক্ষোভ। রবিবার রাতে আবারও বড় আকারে প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়েছে।
কলকাতার বিভিন্ন এলাকা থেকে বেরিয়েছে প্রতিবাদ মিছিল। কলেজ স্কোয়ার থেকে এস্প্ল্যানেড পর্যন্ত বিশাল মিছিল বের করেছেন হাজার হাজার মানুষ। এছাড়া গোলপার্ক থেকে অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস পর্যন্ত নীরব মিছিল করেছেন রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তনীরা।
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে দুই মিছিল: নাগরিকদের ক্ষোভ উত্তাল টাকি!
শুধু কলকাতাতেই নয়, ব্যারাকপুর, বারাসত, বজবজ, বেলঘরিয়া, আগরপাড়া, দমদম, বাগুইআটি সহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়েছে। মেদিনীপুরে মশাল নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন প্রতিবাদীরা। চুঁচুড়ায় গ্রাফিতির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন মানুষ।
এবারের প্রতিবাদে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। অনেকে মোবাইল ফোনের রিংটোন হিসেবে “We want justice” স্লোগান ব্যবহার করছেন। এছাড়া প্রতিবাদী মিছিলে গান, নাচ, আঁকার মাধ্যমেও প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে।
বিশিষ্ট শিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরাও এই প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন। অভিনেতা, গায়ক, কবি, চিত্রশিল্পীরা মিছিলে অংশ নিয়েছেন। তাঁরা দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
প্রতিবাদকারীরা বলছেন, এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি। দোষীদের শাস্তি হয়নি। তাই তাঁরা আবারও রাস্তায় নেমে এসেছেন ন্যায়বিচারের দাবিতে।
আরজি কর কাণ্ডে মমতার পদত্যাগ দাবি: বিজেপির ‘এক দফা, এক দাবি’ আন্দোলন
এদিকে রাজ্য সরকার এই ঘটনায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস ধর্ষণের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা একটি বিল রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছেন অনুমোদনের জন্য।
তবে বিরোধীরা অভিযোগ করেছেন, সরকার এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করেছিল। নিহত চিকিৎসকের পরিবার অভিযোগ করেছেন, পুলিশ তাঁদের টাকা দিয়ে চুপ করানোর চেষ্টা করেছিল।
সিবিআই তদন্তে জানা গেছে, এটি গণধর্ষণের ঘটনা নয়। প্রধান অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কেই এখন মূল সন্দেহভাজন হিসেবে দেখা হচ্ছে। সিবিআইকে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
এই ঘটনার পর থেকে রাজ্যজুড়ে চলছে প্রতিবাদ। গত ১৪ আগস্ট ও ৪ সেপ্টেম্বর দুবার ‘রিক্লেইম দ্য নাইট’ আন্দোলন হয়েছে। রবিবারের মিছিল ছিল তৃতীয় পর্যায়ের প্রতিবাদ।
বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, নাগরিক মঞ্চ এই প্রতিবাদে সামিল হয়েছে। অনেক স্কুল-কলেজের প্রাক্তনীরাও মিছিলে অংশ নিয়েছেন। দুর্গাপুজো কমিটিগুলোও এবার পুজোর প্ল্যাকার্ডে ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে ৯ সেপ্টেম্বর। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এই মামলার শুনানি করবে।
এই ঘটনা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সরকারের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। আগামী দিনে এই ঘটনা রাজ্যের রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সবার আগে দোষীদের দ্রুত শাস্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।