স্টাফ রিপোর্টার
৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:১৫ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ কবিতা: জীবনের অন্তিম মুহূর্তের অমর সৃষ্টি

Tagore’s Shesher Kobita interpretation: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ কবিতা হল “তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি”। এই কবিতাটি তিনি লিখেছিলেন মৃত্যুর মাত্র কয়েক দিন আগে, ১৯৪১ সালের ৩০ জুলাই সকাল সাড়ে নয়টায়। এটি তাঁর জীবনের শেষ রচনা হিসেবে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কবিতাটি তাঁর “শেষ লেখা” নামক সংকলন গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছিল।

কবিতার পটভূমি ও রচনাকাল

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জীবনের শেষ দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ১৯৪১ সালের ৩০ জুলাই তাঁর অস্ত্রোপচারের দিন ধার্য ছিল। সেই দিন সকালে তিনি এই কবিতাটি রচনা করেন। এটি ছিল তাঁর জীবনের শেষ সৃজনশীল কাজ। কবিতাটি লেখার পর তিনি আর কোনো রচনা করেননি।কবিতাটির রচনা প্রসঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল:

বিষয় বিবরণ
রচনার তারিখ ৩০ জুলাই, ১৯৪১
রচনার সময় সকাল সাড়ে নয়টা
স্থান কলকাতা
প্রসঙ্গ অস্ত্রোপচারের পূর্বে

কবিতার বিষয়বস্তু ও ভাবধারা

“তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি” কবিতাটি রবীন্দ্রনাথের জীবনদর্শন ও আধ্যাত্মিক চিন্তাভাবনার এক চূড়ান্ত প্রকাশ। এতে তিনি জীবন ও মৃত্যু, সৃষ্টি ও ধ্বংস, মায়া ও সত্য – এই দ্বৈত ভাবনার মধ্যে সামঞ্জস্য খুঁজেছেন।কবিতার প্রথম লাইনগুলি:”তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি
বিচিত্র ছলনা-জালে
হে ছলনাময়ী।”
এখানে কবি ঈশ্বরকে সম্বোধন করে বলছেন যে, তিনি তাঁর সৃষ্টিকে নানা মায়া ও ছলনায় ভরে রেখেছেন। এর মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ জীবনের জটিলতা ও রহস্যময়তাকে তুলে ধরেছেন।

বলিউডে রবীন্দ্রনাথের অপমান: শ্রীজাতের আইনি হুমকি, ইন্দ্রদীপের অসন্তোষ

কবিতার শিল্পগত বৈশিষ্ট্য

রবীন্দ্রনাথের এই শেষ কবিতাটি তাঁর কাব্যশৈলীর পরিপক্কতার নিদর্শন। এতে তিনি সহজ ও গভীর ভাষায় জটিল দার্শনিক ভাবনাকে প্রকাश করেছেন। কবিতাটির কয়েকটি উল্লেখযোগ্য শিল্পগত বৈশিষ্ট্য:

  1. ছন্দের ব্যবহার: কবিতাটিতে অমিত্রাক্ষর ছন্দের ব্যবহার করা হয়েছে, যা রবীন্দ্রনাথের পরিপক্ক রচনাশৈলীর পরিচায়ক।
  2. প্রতীকী ভাষা: “ছলনাময়ী”, “মিথ্যা বিশ্বাসের ফাঁদ” ইত্যাদি প্রতীকী শব্দের ব্যবহার কবিতাটিকে গভীর অর্থবহ করেছে।
  3. আধ্যাত্মিক উপলব্ধি: কবিতাটিতে জীবন ও জগৎ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের গভীর আধ্যাত্মিক উপলব্ধি প্রকাশ পেয়েছে।

কবিতার তাৎপর্য ও প্রভাব

রবীন্দ্রনাথের এই শেষ কবিতাটি তাঁর জীবনদর্শনের সারসংক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়। এতে তিনি জীবনের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সমগ্র সৃষ্টি ও জীবনের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন। কবিতাটির গুরুত্ব নিম্নলিখিত কারণে অপরিসীম:

  1. জীবনের শেষ রচনা: এটি রবীন্দ্রনাথের জীবনের শেষ রচনা হওয়ায় বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
  2. দার্শনিক উপলব্ধি: কবিতাটিতে রবীন্দ্রনাথের জীবনব্যাপী দার্শনিক চিন্তার সারাংশ পাওয়া যায়।
  3. সাহিত্যিক মূল্য: এটি রবীন্দ্র-কাব্যের শেষ নিদর্শন হিসেবে বাংলা সাহিত্যে বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে।

কবিতার প্রচার ও প্রকাশ

রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর এই কবিতাটি “শেষ লেখা” নামক সংকলন গ্রন্থে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথের জীবনের শেষ দিকের রচনাগুলি সংকলিত হয়েছে। কবিতাটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই বাঙালি পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে।

কবিতার ভুল ব্যাখ্যা ও বিতর্ক

রবীন্দ্রনাথের শেষ কবিতা নিয়ে কিছু ভুল ধারণা ও বিতর্কও রয়েছে। অনেকে ভুলবশত “দুঃখের আঁধার রাত্রি বারে বারে এসেছে আমার দ্বারে” এই লাইন দিয়ে শুরু হওয়া একটি কবিতাকে রবীন্দ্রনাথের শেষ কবিতা বলে মনে করেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি তাঁর শেষ কবিতা নয়।

কবিতার সাহিত্যিক মূল্যায়ন

রবীন্দ্রনাথের এই শেষ কবিতাটি তাঁর কাব্যজীবনের পরিণত ফসল হিসেবে বিবেচিত হয়। এতে তাঁর কবিপ্রতিভার সকল বৈশিষ্ট্য – গভীর দার্শনিকতা, সূক্ষ্ম প্রতীকী ভাষা, ছন্দের নৈপুণ্য – সবকিছুই সমন্বিত হয়েছে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এই কবিতাটি একটি অনন্য স্থান অধিকার করে আছে।

Tollywood: উত্তম-যুগের পর বাংলা চলচ্চিত্রের নবজাগরণের রূপকার রঞ্জিত মল্লিক

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ কবিতা “তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি” শুধু তাঁর জীবনের শেষ রচনা হিসেবেই নয়, বরং একটি মহান শিল্পীর জীবনদর্শনের চূড়ান্ত প্রকাশ হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। এই কবিতায় জীবন ও মৃত্যু, সৃষ্টি ও ধ্বংস, মায়া ও সত্যের দ্বৈত ভাবনার মধ্যে সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথের এই শেষ রচনা তাঁর কবিজীবনের পরিপূর্ণতার প্রতীক হিসেবে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অক্ষয় তৃতীয়ার পুণ্যলগ্নে দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের দ্বারোদঘাটন: এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত

একাদশে ফেল করলেও দ্বাদশে ভর্তির সুযোগ, নতুন নিয়মে চমক দিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার!

কলকাতা হাইকোর্টে ইতিহাস গড়লেন মহিলা বিচারপতিরা: ১৬৩ বছরে প্রথমবার ৮ জনের উপস্থিতি

বায়ুদূষণের ছায়ায় ভারত: বিশ্বে পঞ্চম, দিল্লিসহ ১৩ শহর শীর্ষে!

স্যালারি অ্যাকাউন্টের গোপন সুবিধা এবং সতর্কতা: যা জানা আপনার জন্য জরুরি

হলমার্ক নাকি কেডিএম: খাঁটি সোনার গয়না কেনার সময় কোনটি বেশি বিশ্বস্ত?

পরীমনি কি ঢালিউডের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত নায়িকা? জানুন তাঁর আয়ের হিসেব

iQOO Neo 10R Pros & Cons: সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ এবং ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়ালে ‘আজাদ কাশ্মীর’ লিখে ঝড়: কারা এই PDSF?

কর্মফল ত্যাগে মুক্তির পথ: ভগবদ গীতায় কর্মের দর্শন

১০

ধর্মের পথে গীতার আলো: জীবনবোধের অমৃত বাণী

১১

ইলেকট্রিক গাড়ির চার্জ নিয়ে দুশ্চিন্তার দিন শেষ! ব্রিটিশ ফার্মের সঙ্গে হাত মেলাতে চলেছে CESC

১২

রাজনীতির মাঠ থেকে ওটিটি পর্দায়: সিপিএম নেত্রী দীপ্সিতা ধর এখন ‘জিদ্দি গার্লস’-এর বিদ্রোহী চরিত্রে!

১৩

ভারতে খুচরা মুদ্রাস্ফীতি ৩.৬১ শতাংশে নেমেছে: সবজির দাম কমায় জনগণের স্বস্তি

১৪

রেশন কার্ডে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যুক্ত করার প্রস্তাব: কেন্দ্রের পথে রাজ্যের সমর্থন!

১৫

আইপিএলের ছক্কার রাজা কে? টুর্নামেন্ট শুরুর আগে দেখে নিন শীর্ষ দশের তালিকা

১৬

মাহমুদউল্লাহর ক্রিকেট যাত্রার ইতি: আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিদায়ের ঘোষণা

১৭

অষ্টম বেতন কমিশন: সরকারি কর্মচারীদের জন্য সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম ডিএ বৃদ্ধির সম্ভাবনা, হতাশার ছায়া!

১৮

ভারতের মাটিতে গোয়েন্দা বিশ্বের মহাজমায়েত: দোভালের নেতৃত্বে দিল্লিতে বৈঠক!

১৯

আলো কম? WhatsApp ভিডিও কলে যা করবেন, চমকে যাবেন!

২০
close