ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সম্প্রতি এক নির্বাচনী সভায় পাকিস্তান সম্পর্কে একটি চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, পাকিস্তান যদি ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখত তাহলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) থেকে চাওয়া অর্থের চেয়েও বেশি পরিমাণ অর্থ সাহায্য ভারত পাকিস্তানকে দিতে পারত।
জম্মু ও কাশ্মীরের বান্দিপোরা জেলার গুরেজ বিধানসভা কেন্দ্রে এক নির্বাচনী সমাবেশে বক্তৃতা দিতে গিয়ে রাজনাথ সিং এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “মোদিজি ২০১৪-১৫ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের উন্নয়নের জন্য একটি বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন যা এখন ৯০,০০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এই পরিমাণ অর্থ পাকিস্তান IMF-এর কাছে যে bailout প্যাকেজ চেয়েছিল তার চেয়েও অনেক বেশি।”
রাজনাথ সিং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর একটি বিখ্যাত উক্তির উল্লেখ করেন – “আমরা বন্ধু পরিবর্তন করতে পারি কিন্তু প্রতিবেশী পরিবর্তন করতে পারি না”। তিনি বলেন, “আমি বলেছি, আমার পাকিস্তানি বন্ধুরা, কেন সম্পর্ক টানাপোড়েন করছেন, আমরা প্রতিবেশী। যদি আমাদের ভালো সম্পর্ক থাকত, তাহলে আমরা IMF-এর চেয়েও বেশি অর্থ দিতে পারতাম।”
মমতার ‘ভুল’-এর মালা: R.G Kar কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর ৭টি বিতর্কিত মন্তব্য
প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন যে কেন্দ্র সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের উন্নয়নের জন্য অর্থ দেয়, অন্যদিকে পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সাহায্য অপব্যবহার করে আসছে। তিনি অভিযোগ করেন, “পাকিস্তান অন্য দেশগুলোর কাছ থেকে অর্থ চায় নিজেদের মাটিতে সন্ত্রাসবাদের কারখানা চালানোর জন্য।”
রাজনাথ সিং উল্লেখ করেন যে পাকিস্তান, যে দেশটি ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে, এখন আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এমনকি তার কিছু বিশ্বস্ত মিত্রও পিছু হটছে। তিনি বলেন, “যখনই আমরা সন্ত্রাসবাদের তদন্ত করেছি, আমরা পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। আমাদের পরপর সরকারগুলো পাকিস্তানকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে যে তারা যেন সন্ত্রাস শিবির বন্ধ করে, কিন্তু কোনো ফল হয়নি।”
প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, “৩৭০ ধারা বাতিলের পর পাকিস্তান হতাশ হয়ে সন্ত্রাস পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে। তারা চায় না এখানে গণতন্ত্র শিকড় গাড়ুক। (কিন্তু) ভারত এতটাই শক্তিশালী যে সে পাকিস্তানকে তার নিজের মাটিতেই মোকাবিলা করতে পারে। পাকিস্তানে কেউ যদি ভারতে আক্রমণ চালায়, আমরা সীমান্ত পেরিয়ে জবাব দিতে পারি।”
রাজনাথ সিং দাবি করেন যে পাকিস্তান এখন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, “এমনকি তুরস্কও, যারা পাকিস্তানকে সমর্থন করত, তারাও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে কাশ্মীরের উল্লেখ করেনি।”
বিজেপি নেতা বলেন, কেন্দ্রে তার দলের সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জম্মু ও কাশ্মীরে শান্তি ফিরে এসেছে। তিনি যোগ করেন, “সন্ত্রাসবাদের ব্যবসা আর বেশিদিন টিকবে না।”
বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহারে করা প্রতিশ্রুতিগুলি পুনরায় উল্লেখ করে রাজনাথ সিং বলেন, “প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে (বিজেপি প্রার্থী) ফকির মোহাম্মদ খান জিতলে গুরেজ থেকে আরও বেশি লোককে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হবে।” তিনি বলেন, গুরেজ থেকে সবচেয়ে বড় দাবি হল রাজদান পাস দিয়ে একটি টানেল নির্মাণ করা যা দেশের বাকি অংশের সাথে সারা বছর যোগাযোগ স্থাপন করবে।
তিনি আরও বলেন, “২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে, ইন্টারনেট টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। রাস্তাঘাট ভালো হয়েছে এবং আরও উন্নত করা হবে।”
এই মন্তব্যগুলি পাকিস্তানের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি পাকিস্তান IMF থেকে ৭ বিলিয়ন ডলারের একটি নতুন ঋণ অনুমোদন পেয়েছে। এই ঋণ পাকিস্তানের অর্থনীতিকে সাহায্য করার লক্ষ্যে দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তান দশকের পর দশক ধরে IMF-এর ঋণের উপর নির্ভর করে আসছে তার অর্থনৈতিক চাহিদা মেটাতে।
ভারতের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেল, চীনের সঙ্গে পাল্লা দিতে তৎপর নয়া দিল্লি
রাজনাথ সিংহের এই মন্তব্য ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের জটিলতা এবং দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনাকে তুলে ধরে। তিনি একদিকে সহযোগিতার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন, অন্যদিকে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ সমর্থনের অভিযোগও পুনরায় উত্থাপন করেছেন।
এই ধরনের মন্তব্য দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এটি মূলত একটি নির্বাচনী বক্তৃতা হওয়ায় এর প্রভাব সীমিত হতে পারে। তবুও, এটি দেখিয়ে দেয় যে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক এখনও ভারতীয় রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যার সময় ভারত পাকিস্তানকে ২৫ মিলিয়ন ডলারের সাহায্য দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। তখন ভারতের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী এস.এম. কৃষ্ণ সংসদে একটি বিবৃতিতে বলেছিলেন, “আমরা আমাদের নিকটতম প্রতিবেশীতে এই বিশাল মানবিক সংকটের ব্যাপারে উদাসীন থাকতে পারি না।”
সামগ্রিকভাবে, রাজনাথ সিংহের এই মন্তব্য ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের জটিলতা এবং দ্বন্দ্বের পাশাপাশি সহযোগিতার সম্ভাবনাকেও তুলে ধরেছে। এটি দেখিয়ে দেয় যে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত হলে তা উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হতে পারে। তবে এর জন্য পারস্পরিক বিশ্বাস ও সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন।
মন্তব্য করুন