দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে এক নাবালিকাকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে ক্ষুব্ধ জনতা বিক্ষোভ দেখিয়েছে। শনিবার সকাল থেকে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে পৌঁছান সিপিআইএম নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জী সহ অন্যান্য বাম নেতৃবৃন্দ। তাঁরা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং নির্যাতিতার পরিবারের পাশে দাঁড়ান।
ঘটনার বিবরণ:
শুক্রবার বিকেলে কোচিং সেন্টার থেকে বাড়ি ফেরার পথে নয় বছর বয়সী এক নাবালিকা নিখোঁজ হয়ে যায়। পরিবারের অভিযোগ, তাঁরা প্রথমে মহিষমারি পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ জানাতে গেলে সেখান থেকে জয়নগর থানায় যেতে বলা হয়। জয়নগর থানা থেকে আবার কুলতলি থানায় পাঠানো হয়। এভাবে পুলিশ প্রথমে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি বলে অভিযোগ।
রাতে বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে একটি পুকুরে নাবালিকার দেহ পাওয়া যায়। পরিবারের দাবি, তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজের সূত্রে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
Minakshi Mukherjee: CBI-র তলবে মীনাক্ষী, আরজিকর কাণ্ডে নতুন মোড়?
বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ:
শনিবার সকাল থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁরা জয়নগর থানা ঘেরাও করেন এবং থানায় ঢুকে ভাঙচুর চালান। উত্তেজিত জনতা মহিষমারি পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। পুলিশের গাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়।
বিক্ষোভকারীরা মূল সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানান। লাঠি-ডাণ্ডা নিয়ে মহিলারা ঘটনাস্থলে পৌঁছনো বারুইপুর এসডিপিওকে তাড়া করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে হয়।
মীনাক্ষী মুখার্জীর প্রতিক্রিয়া:
সিপিআইএম নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জী ঘটনাস্থলে পৌঁছে বলেন, “একই ঘটনা বার বার ঘটছে। আর পুলিশ চুপ! আরজি কর কাণ্ডের সময়ও দেখা গেছে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা। জয়নগরেও একই ছবি ধরা পড়লো।”
তিনি দাবি করেন, হাসপাতাল চত্বর থেকে অবিলম্বে বহিরাগতদের সরিয়ে দিতে হবে। নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যরাই যেন থাকে। স্বচ্ছভাবে ময়নাতদন্ত করা হোক।
পুলিশের বক্তব্য:
বারুইপুর পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার পলাশ চন্দ্র ঢালী ঘটনাস্থলে পৌঁছে বলেন, “গতকাল রাত 9টার সময় আমরা খবর পাই। তারপরই আমরা তদন্ত শুরু করে দিয়েছি। আমরা অভিযোগ পেয়েছি রাত 12টা নাগাদ। সাড়ে 12টায় কেস দায়ের করেছি।”
তিনি জানান, অভিযুক্ত দোষ স্বীকার করে নেয়। ভোর 3টে নাগাদ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
Bangladesh Movement News: বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন তীব্র, রোববার থেকে সর্বাত্মক অসহযোগের ডাক
পরিসংখ্যান:
– নাবালিকার বয়স: 9 বছর
– নিখোঁজ হওয়ার সময়: শুক্রবার বিকেল
– দেহ উদ্ধারের সময়: শুক্রবার রাত
– দেহ উদ্ধারের স্থান: বাড়ি থেকে 1 কিলোমিটার দূরের পুকুর
– অভিযুক্ত গ্রেফতারের সময়: শনিবার ভোর 3টা
এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে নারী নির্যাতনের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। সম্প্রতি কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক মহিলা চিকিৎসককে নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছিল। এসব ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:
বিজেপি নেতৃত্ব এই ঘটনায় রাজ্য সরকারকে তীব্র সমালোচনা করেছে। প্রদেশ বিজেপি সভাপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে মহিলারা নিরাপদ নয়। একের পর এক মহিলা ও শিশুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।”
তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল ঘটনাস্থলে গেলে বিক্ষুব্ধ জনতা তাঁকে ঘিরে “গো-ব্যাক” স্লোগান দেয়। বিক্ষোভের মুখে পড়ে তাঁকে ফিরে যেতে হয়।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া:
এই ঘটনায় সমাজের বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। নারী ও শিশু অধিকার সংগঠনগুলি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। সাধারণ মানুষও সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা গণেশ দলুই বলেন, “আমরা আমাদের নাবালিকা কন্যার ধর্ষণ ও হত্যার জন্য দায়ী সকলের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। যারা অভিযোগে দেরি করেছে, যার ফলে তার মৃত্যু হতে পারে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। পুলিশ যদি দ্রুত ব্যবস্থা নিত, তাহলে মেয়েটিকে বাঁচানো যেত।”
জয়নগরের এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে নারী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সবাই এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ। দোষীদের দ্রুত শাস্তি ও ভবিষ্যতে এধরনের ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে। পুলিশ প্রশাসনকে এখন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগোতে হবে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং নাগরিকদের আস্থা ফিরে আসে।