মহারাষ্ট্রের পুণে শহরে গিলেন বারে সিনড্রোম (Guillain-Barré Syndrome বা GBS) নামক একটি দুর্লভ স্নায়বিক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এই রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগ সতর্ক হয়ে উঠেছে। GBS হল একটি অটোইমিউন রোগ, যেখানে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুলবশত নিজের স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে। এর ফলে পেশীর দুর্বলতা, অবশতা এবং কখনও কখনও পক্ষাঘাতের মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
পুণেতে GBS-এর প্রাদুর্ভাব: পরিসংখ্যান ও বর্তমান অবস্থা
পুণে শহরে GBS-এর প্রাদুর্ভাব নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী:
- মোট আক্রান্তের সংখ্যা: ১০১ জন
- পুরুষ রোগী: ৬৮ জন
- মহিলা রোগী: ৩৩ জন
- ভেন্টিলেটরে থাকা রোগী: ১৬ জন
- সন্দেহজনক মৃত্যু: ১ জন (সোলাপুরে)
বয়স অনুযায়ী আক্রান্তদের বিভাজন:
বয়স | আক্রান্তের সংখ্যা |
---|---|
০-৯ বছর | ১৯ জন |
১০-১৯ বছর | ১৫ জন |
২০-২৯ বছর | ২০ জন |
৩০-৩৯ বছর | ১৩ জন |
৪০-৪৯ বছর | ১২ জন |
৫০-৫৯ বছর | ১৩ জন |
৬০-৬৯ বছর | ৮ জন |
৭০-৮০ বছর | ১ জন |
গিলেন বারে সিনড্রোম: কারণ ও লক্ষণ
GBS-এর সঠিক কারণ এখনও অজানা। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি একটি সংক্রমণের পর দেখা দেয়। সাধারণত নিম্নলিখিত কারণগুলি GBS-এর জন্য দায়ী:
- ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ (যেমন ক্যাম্পিলোব্যাক্টর জেজুনি)
- ভাইরাল সংক্রমণ (যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা, এপস্টেইন-বার ভাইরাস)
- দূষিত খাবার বা পানি
Text Neck Syndrome Symptoms: মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে টেক্সট নেক সিনড্রোমে
GBS-এর প্রধান লক্ষণগুলি হল:
- হাত-পায়ে দুর্বলতা ও অবশভাব
- পেশীর ক্ষমতা হ্রাস
- চলাফেরায় অসুবিধা
- শ্বাসকষ্ট
- খাওয়া ও কথা বলায় সমস্যা
- অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন
রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
GBS নির্ণয়ের জন্য নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলি করা হয়:
- স্নায়বিক পরীক্ষা
- মেরুদণ্ডের তরল পরীক্ষা
- ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাফি (EMG)
- রক্ত পরীক্ষা
চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রধানত দুটি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়:১. প্লাজমা এক্সচেঞ্জ: রক্ত থেকে অ্যান্টিবডি অপসারণ করা হয়।
২. ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবুলিন (IVIg): রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অ্যান্টিবডি দেওয়া হয়।এছাড়াও রোগীদের শ্বাসকষ্ট, হৃদযন্ত্রের সমস্যা ও অন্যান্য জটিলতার জন্য সহায়ক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
পুণেতে GBS প্রাদুর্ভাব: কারণ অনুসন্ধান
পুণেতে GBS-এর হঠাৎ বৃদ্ধির কারণ খুঁজতে স্বাস্থ্য বিভাগ তৎপর হয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি সামনে এসেছে:
- জলের দূষণ: খাদকওয়াসলা ড্যামের কাছে একটি কূপে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ার উচ্চ মাত্রা পাওয়া গেছে।
- নোরোভাইরাস: কিছু রোগীর শরীরে নোরোভাইরাস পাওয়া গেছে।
- ক্যাম্পিলোব্যাক্টর জেজুনি: এই ব্যাকটেরিয়াও কিছু রোগীর শরীরে পাওয়া গেছে।
সতর্কতা ও প্রতিরোধ
GBS প্রতিরোধে নিম্নলিখিত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:
- পানি ফুটিয়ে পান করুন
- খাবার ভালোভাবে রান্না করে খান
- বাইরের খাবার এড়িয়ে চলুন
- হাত নিয়মিত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
বিশেষজ্ঞদের মতামত
ডাঃ সুদীপ্ত চৌধুরী, স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ, বলেন, “GBS একটি গুরুতর রোগ হলেও চিকিৎসাযোগ্য। দ্রুত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা শুরু করলে অধিকাংশ রোগীই সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।”ডাঃ অনিন্দ্য সেন, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, মনে করেন, “পুণেতে GBS-এর প্রাদুর্ভাব চিন্তার কারণ। কর্তৃপক্ষের উচিত জলের উৎস ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। জনসাধারণকেও সচেতন থাকতে হবে।”
কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপ
পুণেতে GBS-এর প্রাদুর্ভাবের খবর পেয়ে কেন্দ্রীয় সরকার একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়েছে। এই দল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। স্থানীয় প্রশাসনও সতর্ক রয়েছে।
গিলেন বারে সিনড্রোম একটি জটিল ও গুরুতর রোগ। তবে সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পেলে অধিকাংশ রোগীই সুস্থ হয়ে ওঠেন। পুণেতে GBS-এর প্রাদুর্ভাব উদ্বেগের কারণ হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জনসাধারণের সচেতনতা ও কর্তৃপক্ষের সক্রিয়তা এই রোগের বিস্তার রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।GBS সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং এর প্রতিরোধে সহায়তা করা প্রত্যেকের দায়িত্ব। যদি কারও মধ্যে GBS-এর লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সামগ্রিকভাবে, সতর্কতা ও সচেতনতার মাধ্যমে আমরা এই রোগের প্রকোপ কমাতে পারি এবং একটি সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে পারি।