ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO) সীমান্ত প্রহরা ও যুদ্ধক্ষেত্রে রোবটিক সেনা মোতায়েনের যুগান্তকারী পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। AI-চালিত রোবোটিক্স প্রযুক্তির মাধ্যমে মানবসেনার ঝুঁকি কমাতে এবং অপারেশনাল দক্ষতা বাড়াতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে DRDO-র তৈরি ডাকশ, মুন্ট্রা এবং রোবোটিক মিউল ইতিমধ্যেই সীমান্তে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
DRDO-র ডাকশ রোবটটি ৯০% স্বদেশী প্রযুক্তিতে তৈরি, যা বিস্ফোরক শনাক্তকরণ থেকে শুরু করে সিঁড়ি আরোহণ পর্যন্ত জটিল কাজ করতে সক্ষম। এটি ৫০০ মিটার দূরত্ব থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়ে জৈব-রাসায়নিক হুমকি শনাক্ত করতে পারে এবং জলের জেট ব্যবহার করে বোমা নিষ্ক্রিয় করে।
ড্রোন প্রতিরোধে মার্কিন সেনাবাহিনী AI-সক্ষম অস্ত্রযুক্ত রোবট কুকুর পরীক্ষা করছে
সোভিয়েত BMP-2 যানের উপর ভিত্তি করে তৈরি মুন্ট্রা রোবটটি পরমাণু বা রাসায়নিক দূষিত এলাকায় টহল, মাইন পরিষ্কার এবং নজরদারি করতে পারে।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে DRDO “হিউম্যানয়েড রোবট সেনাবাহিনী” তৈরির পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। এই রোবটগুলি ফায়ারিং সিস্টেমসহ উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশনে নিযুক্ত হবে এবং মানব কমান্ডারদের সহায়তা করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রযুক্তি বাস্তবায়নে ১৫-২০ বছর সময় লাগতে পারে।
ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড (BEL) AI-সক্ষম রোবট তৈরি করছে, যা সীমান্তে স্বয়ংক্রিয় টহল দেবে। এই রোবটগুলিতে সেন্সর, তাপীয় ক্যামেরা এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি থাকবে। গার্ডিয়াম (ইসরায়েলি রোবট) এর মতো এগুলি ৭০-৮০ কিমি/ঘন্টা গতিতে চলতে পারবে।
২০২৪ সালের অক্টোবরে ভারতীয় সেনাবাহিনী ১০০টি “রোবোটিক মিউল” পেয়েছে। এই ৫১ কেজি ওজনের রোবটগুলি ১২ কেজি অস্ত্র বা সরঞ্জাম বহন করে এবং -৪৫°C থেকে ৫৫°C তাপমাত্রায় কাজ করতে পারে। এগুলি স্বায়ত্তশাসিত টহল, চিকিৎসা সরবরাহ এবং গোয়েন্দা কার্যক্রমে ব্যবহৃত হবে।
প্রতিটি রোবোটিক মিউলের মূল্য: ~₹৭০-৮০ লাখ
ডাকশ রোবটের কার্যক্রম পরিসর: ৫০০ মিটার
DRDO-র সেন্টার ফর AI অ্যান্ড রোবোটিক্স (CAIR) MARF প্রজেক্টের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত রোবট দল তৈরি করেছে, যা অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজে ব্যবহারযোগ্য।
দক্ষিণ কোরিয়ার SGR-A1 রোবট: DMZ-এ স্বয়ংক্রিয় গার্ড ডিউটি
ইসরায়েলের গার্ডিয়াম: গাজা সীমান্তে টহল
হিউম্যানয়েড রোবটের গতিশীলতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা এখনো পরীক্ষাধীন
AI অ্যালগরিদমের নৈতিকতা ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন
২০৩০ সালের মধ্যে সীমান্তে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত রোবট মোতায়েন
২০৪০ সালের মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্রে হিউম্যানয়েড রোবট সেনার ব্যবহার
সীমান্ত উত্তেজনা: ভারতের কড়া বার্তায় বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া
বিশেষজ্ঞ মূল্যায়ন
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ড. অরুণ বানিক বলেন, “রোবোটিক্স প্রযুক্তিতে ভারতের অগ্রগতি লক্ষণীয়, কিন্তু মানবসেনার বিকল্প নয় এটি। ভবিষ্যতে যুদ্ধে মানুষের সিদ্ধান্ত ও রোবটের দক্ষতা সমন্বয় করা চ্যালেঞ্জ।”
DRDO-র এই উদ্যোগ ভারতকে রোবোটিক যুদ্ধপ্রযুক্তিতে বৈশ্বিক নেতৃত্বের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সীমান্তে রোবট মোতায়েন মানবজীবনের ঝুঁকি কমালেও প্রযুক্তির নৈতিক ব্যবহার নিয়ে সমাজে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। ভবিষ্যতের যুদ্ধক্ষেত্রে মানুষ ও মেশিনের সহযোগিতাই হবে ভারতের সাফল্যের চাবিকাঠি।
মন্তব্য করুন