বাংলাদেশ সরকার জামায়াতে ইসলামী ও তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। আজ বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট, ২০২৪) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারা অনুযায়ী এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবির এবং তাদের সকল অঙ্গসংগঠন এখন থেকে নিষিদ্ধ বলে গণ্য হবে। এর ফলে এই সংগঠনগুলো আর কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। তাদের সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কোটা আন্দোলনে ছাত্র মৃত্যুর পিছনে লুকানো সত্য যা জানলে আপনিও স্তম্ভিত হবেন!
সরকার জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার যে কারণগুলো উল্লেখ করেছে, তার মধ্যে রয়েছে:
1. মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা ও যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকা
2. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা
3. সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকা
4. রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণ করা
জামায়াতে ইসলামী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তাদের প্রথমবার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের পর জিয়াউর রহমানের শাসনামলে তারা আবার রাজনীতিতে ফিরে আসে।
২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিচার শুরু হয়। একই সময়ে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের মুখে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি জোরালো হয়। ২০১৩ সালেই নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে।
১ লা জুলাই: ভারতের ইতিহাসে মাইলফলক অন্যতম
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, “সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির ও তাদের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই দলগুলো নিষিদ্ধ হওয়ার পর তারা আর এই নামে রাজনীতি করতে পারবে না।”
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, “জাতীয় স্বার্থে দেশবিরোধী অপশক্তি নির্মূল করার জন্য ১৪ দলের বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধে একমত হয়েছে।”[10]
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিদৃশ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন আসতে পারে:
1. জামায়াত ও শিবিরের সদস্যরা আর কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম করতে পারবে না
2. তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে
3. বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোট ভেঙে যাবে
4. ইসলামপন্থী রাজনীতির ক্ষেত্রে একটি শূন্যতা তৈরি হতে পারে
5. জামায়াত সমর্থকরা অন্য দলে যোগ দিতে পারে
– জামায়াতে ইসলামীর সদস্য সংখ্যা: প্রায় ১০ লাখ
– ইসলামী ছাত্র শিবিরের সদস্য সংখ্যা: প্রায় ৫ লাখ
– ২০১৮ সালের নির্বাচনে জামায়াত ২২টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল (বিএনপির প্রতীকে)
– ২০১৪ সালের নির্বাচনে জামায়াত ৩৭টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল
– [জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন কিছুক্ষণের মধ্যে; বললেন আইনমন্ত্রী](https://www.youtube.com/watch?v=rUqtZJ-f8jA)
– [জামায়াত ইসলাম নিষিদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব](https://www.youtube.com/watch?v=vZueTRF6Wfo)
জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হওয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এর ফলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে। তবে এই সিদ্ধান্তের পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতামত রয়েছে। সরকার মনে করছে এটি জঙ্গিবাদ দমনে সহায়ক হবে, অন্যদিকে বিরোধীরা এটিকে গণতন্ত্র বিরোধী পদক্ষেপ বলে মনে করছেন। আগামী দিনগুলোতে এর প্রভাব কতটা পড়ে তা লক্ষণীয় হবে।