Reasons-to-choose-Freelancing: ফ্রিল্যান্সিং বর্তমানে বিশ্বব্যাপী একটি জনপ্রিয় কর্মসংস্থানের বিকল্প হিসেবে উঠে আসছে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারীর পর থেকে এর জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ILO) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে বর্তমানে প্রায় ১.৫৭ বিলিয়ন মানুষ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন। এই প্রবণতা আগামী বছরগুলোতে আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে কেন এত মানুষ ফ্রিল্যান্সিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন? এর পিছনে রয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ। চলুন দেখে নেওয়া যাক ফ্রিল্যান্সিং আপনার জন্য উপযুক্ত হতে পারে এমন তিনটি প্রধান কারণ:
স্বাধীনতা ও নমনীয়তা
ফ্রিল্যান্সিংয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এর স্বাধীনতা ও নমনীয়তা। একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনি নিজের সময় ও কাজের ধরন নিজেই নির্ধারণ করতে পারবেন।
**কাজের সময় নির্ধারণের স্বাধীনতা:** আপনি যখন খুশি তখন কাজ করতে পারবেন। রাত জেগে কাজ করা পছন্দ করলে তা-ই করতে পারবেন, আবার সকালে উঠে কাজ করতে চাইলে তাও করতে পারবেন। আপনার ব্যক্তিগত প্রয়োজন অনুযায়ী সময় নির্ধারণ করতে পারবেন।
**কাজের স্থান নির্বাচনের স্বাধীনতা:** বাড়িতে বসে, কফি শপে বা বিদেশে ঘুরতে গিয়েও আপনি কাজ করতে পারবেন। আপনার পছন্দের যে কোন জায়গা থেকে কাজ করার সুযোগ পাবেন।
**প্রজেক্ট নির্বাচনের স্বাধীনতা:** কোন প্রজেক্ট নিবেন আর কোনটা নিবেন না সেটা আপনি নিজেই ঠিক করতে পারবেন। আপনার দক্ষতা ও আগ্রহের সাথে যে প্রজেক্টগুলো মিলবে শুধু সেগুলোই নিতে পারবেন।
এই স্বাধীনতা ও নমনীয়তা অনেকের কাছেই খুব আকর্ষণীয়। কারণ এতে করে কাজের সাথে ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য রাখা সহজ হয়। পরিবারের সাথে সময় কাটানো, নিজের শখের কাজ করা – এসব কিছুই করা যায় ফ্রিল্যান্সিংয়ের পাশাপাশি।
তবে এই স্বাধীনতার সাথে দায়িত্বও আসে। নিজের সময় ও কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে হয়। ডেডলাইন মেনে চলতে হয়। তাই আত্ম-শৃঙ্খলা ও সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা থাকা জরুরি।
আয়ের সম্ভাবনা
ফ্রিল্যান্সিংয়ে আয়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি। এখানে আপনার আয় সীমিত নয়, আপনার দক্ষতা ও পরিশ্রমের উপর নির্ভর করে।
**নিজের রেট নির্ধারণের স্বাধীনতা:** একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনি নিজের সার্ভিসের মূল্য নিজেই নির্ধারণ করতে পারবেন। আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে রেটও বাড়াতে পারবেন।
**একাধিক ক্লায়েন্টের জন্য কাজ করার সুযোগ:** আপনি একই সময়ে একাধিক ক্লায়েন্টের জন্য কাজ করতে পারবেন। এতে করে আপনার আয়ের পথ বিস্তৃত হবে।
**বিশেষজ্ঞ হিসেবে উচ্চ আয়ের সুযোগ:** কোন নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞতা অর্জন করলে আপনি উচ্চ মূল্যের প্রজেক্ট পেতে পারেন। বিশেষজ্ঞ ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদা ও আয় অনেক বেশি।
তবে এই আয়ের সম্ভাবনার সাথে কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ে আয় অনিশ্চিত ও অস্থির হতে পারে[6]। মাসে মাসে আয়ের পরিমাণ ওঠানামা করতে পারে। তাই আর্থিক পরিকল্পনা ও সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।
ফ্রিল্যান্সার হয়ে মাসে ১ লাখ টাকা আয় করুন, এই ৭টি টিপস অবশ্যই জানতে
ব্যক্তিগত ও পেশাগত বিকাশ
ফ্রিল্যান্সিং আপনার ব্যক্তিগত ও পেশাগত বিকাশের জন্য অনেক সুযোগ সৃষ্টি করে।
**নতুন দক্ষতা অর্জনের সুযোগ:** প্রতিটি নতুন প্রজেক্টের মাধ্যমে আপনি নতুন কিছু শিখতে পারবেন। বিভিন্ন ধরনের কাজ করার সুযোগ পাওয়ায় আপনার দক্ষতা ক্রমাগত বাড়বে।
**নেটওয়ার্ক বৃদ্ধির সুযোগ:** বিভিন্ন ক্লায়েন্ট ও সহকর্মীদের সাথে কাজ করার মাধ্যমে আপনার পেশাগত নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি পাবে। এটি ভবিষ্যতে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
**আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি:** নিজের ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে। নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়া ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
তবে এই বিকাশের জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে। নিয়মিত নতুন দক্ষতা অর্জন ও নিজেকে আপডেট রাখার চেষ্টা করতে হবে। কারণ ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে প্রতিযোগিতা দিন দিন বাড়ছে।
Zero Investment Business: ১০টি বিনা পুঁজির ব্যবসা যা আপনার স্বপ্নকে বাস্ত
ফ্রিল্যান্সিংয়ের চ্যালেঞ্জ
যেমন সুবিধা আছে, তেমনি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে ফ্রিল্যান্সিংয়ে। সেগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি:
**অনিশ্চিত আয়:** ফ্রিল্যান্সিংয়ে আয় অনিশ্চিত ও অস্থির হতে পারে। মাসে মাসে আয়ের পরিমাণ ওঠানামা করতে পারে।
**নিজস্ব সুযোগ-সুবিধার দায়িত্ব:** কোম্পানির চাকরির মত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা (যেমন স্বাস্থ্য বীমা) ফ্রিল্যান্সিংয়ে পাওয়া যায় না। এসব নিজেকেই যোগাড় করতে হয়।
**একাকীত্বের সম্ভাবনা:** অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গ না পাওয়ায় অনেক সময় একাকীত্ব অনুভব করতে পারেন।
**নিজেকে প্রমোট করার চ্যালেঞ্জ:** নিজের সেবা বিক্রি করা ও নতুন ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়া চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য সঠিক পরিকল্পনা ও মানসিক প্রস্তুতি প্রয়োজন।
ফ্রিল্যান্সিং একটি আকর্ষণীয় ক্যারিয়ার পথ হতে পারে যদি আপনি স্বাধীনতা, নমনীয়তা ও নিজের ব্যবসা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন। এটি আপনাকে নিজের সময় ও কাজের নিয়ন্ত্রণ দেয়, উচ্চ আয়ের সম্ভাবনা তৈরি করে এবং ব্যক্তিগত ও পেশাগত বিকাশের সুযোগ দেয়।
তবে এর সাথে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে যেমন অনিশ্চিত আয়, নিজের সুযোগ-সুবিধার দায়িত্ব নেওয়া ইত্যাদি। এসব বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ফ্রিল্যান্সিং আপনার জন্য উপযুক্ত কিনা। যদি আপনি মনে করেন এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে পারবেন, তাহলে ফ্রিল্যান্সিং আপনার জন্য একটি চমৎকার ক্যারিয়ার বিকল্প হতে পারে। এটি আপনাকে আপনার পছন্দের কাজ করার, নিজের শর্তে জীবন যাপন করার এবং নিজের সম্ভাবনাকে পূর্ণরূপে বিকশিত করার সুযোগ দেবে।