আগামী সপ্তাহে আকাশে দেখা যাবে এ বছরের সবচেয়ে বড় সুপারমুন, যা “হান্টার্স মুন” নামেও পরিচিত। ১৭ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে এই বিশাল চাঁদ পৃথিবীর খুব কাছাকাছি আসবে, মাত্র ২২০,০৫৫ মাইল দূরত্বে। এই ঘটনাটি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ ২০২৪ সালে এটাই হবে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসা একমাত্র চাঁদ।
হান্টার্স মুন বা শিকারি চাঁদের নামকরণের পিছনে রয়েছে আলগনকুইন নেটিভ আমেরিকান উপজাতির ঐতিহ্য। শীতকাল আসন্ন হওয়ার আগে এই সময়ে উপজাতিগুলি মাংস সংগ্রহ করত, তাই এই নামকরণ। এছাড়াও এই চাঁদের অন্যান্য নাম রয়েছে যেমন কর্ন রাইপ মুন, ফলিং লিভস মুন, ড্রাইং রাইস মুন, ফ্রিজিং মুন এবং মাইগ্রেটিং মুন।
নাসার তথ্য অনুযায়ী, হান্টার্স মুন তার সর্বোচ্চ উজ্জ্বলতায় পৌঁছাবে ১৭ অক্টোবর। ভারতে এটি দেখা যাবে বিকেল ৪:৫৬ মিনিটে, আর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ধ্যা ৬:১৩ মিনিটে। এই বিশাল চাঁদ সবচেয়ে ভালভাবে দেখা যাবে মেঘমুক্ত আকাশে।
এই বছর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একের পর এক সুপারমুন দেখেছেন, কিন্তু হান্টার্স মুন হবে অতিরিক্ত বিশেষ। কারণ ২০২৪ সালে এটাই হবে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসা একমাত্র চাঁদ। এর ফলে চাঁদটি অত্যন্ত বড় ও উজ্জ্বল দেখাবে, যা নক্ষত্র পর্যবেক্ষকদের জন্য এক অসাধারণ দৃশ্য হবে।
অক্টোবর মাসটি শুধু হান্টার্স মুনের জন্যই নয়, আরও অনেক মহাজাগতিক ঘটনার জন্যও বিশেষ। এই মাসে দুটি ধূমকেতু দৃশ্যমান হবে, যার মধ্যে একটি ইতিমধ্যেই আকাশ পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। দ্বিতীয় ধূমকেতুটি অক্টোবরের শেষের দিকে দেখা যাবে। এছাড়াও রাতের আকাশে একটি নতুন তারা দেখা যাবে, যা এই মাসের জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত আকর্ষণকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
পৃথিবীর নতুন ‘মিনি মুন’ 2024 PT5: কী এটি এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
তবে এই বিশাল চাঁদ বেশিদিন থাকবে না। ২৪ অক্টোবর থেকে চাঁদ তার শেষ পর্যায়ে প্রবেশ করবে, হ্যালোইনের কয়েকদিন আগে। এর ফলে হ্যালোইন রাতে (৩১ অক্টোবর) আকাশ বেশ অন্ধকার থাকবে, কারণ তখন চাঁদ তার পূর্ণ অবস্থা থেকে দূরে সরে যাবে।
যারা হ্যালোইনে পূর্ণিমা দেখতে চান, তাদের অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। পরবর্তী হ্যালোইন পূর্ণিমা দেখা যাবে ২০৩৯ সালে। আর্থস্কাই অনুসারে, হ্যালোইনে পূর্ণিমা খুবই বিরল ঘটনা, যা প্রায় প্রতি ১৮-১৯ বছর পর পর ঘটে। সর্বশেষ এই ঘটনা ঘটেছিল ২০২০ সালে।
হান্টার্স মুন শুধু একটি সুন্দর দৃশ্যই নয়, এটি ঋতু পরিবর্তন এবং ফসল সংগ্রহের ঐতিহ্যবাহী সময়কেও চিহ্নিত করে। বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এই চাঁদের বিভিন্ন তাৎপর্য রয়েছে, যা মানুষের জীবনযাত্রা ও প্রকৃতির সাথে সম্পর্কের গভীরতা প্রকাশ করে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই ঘটনাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন। কারণ এটি শুধু একটি সুন্দর দৃশ্যই নয়, বরং চাঁদের গতিবিধি ও পৃথিবীর সাথে তার সম্পর্ক সম্পর্কে আরও জানার সুযোগ দেয়। এই ধরনের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা মহাকাশ সম্পর্কে নতুন তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।
যদিও হান্টার্স মুন একটি প্রাকৃতিক ঘটনা, এটি মানুষের কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতাকেও উদ্দীপিত করে। কবি, শিল্পী ও লেখকরা প্রায়শই এই ধরনের মহাজাগতিক ঘটনা থেকে অনুপ্রেরণা পান, যা সাহিত্য ও শিল্পকলায় প্রতিফলিত হয়।
এই ধরনের ঘটনা আমাদের মহাবিশ্বের বিশালতা ও রহস্যময়তার কথা মনে করিয়ে দেয়। এটি আমাদের নিজেদের অস্তিত্ব এবং মহাবিশ্বে আমাদের স্থান সম্পর্কে ভাবতে উৎসাহিত করে। একই সময়ে, এটি আমাদের প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার এবং মহাকাশের অদ্ভুত রহস্য সম্পর্কে আরও জানার সুযোগ দেয়।
চাঁদ বনাম চাঁদমালা: মোদি-রাহুলের রাজনৈতিক যাত্রায় কে এগিয়ে?
হান্টার্স মুন দেখার জন্য বিশেষ কোনো যন্ত্রপাতির প্রয়োজন নেই। শুধু একটি পরিষ্কার রাতে খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে এই অসাধারণ দৃশ্য উপভোগ করা যাবে। তবে দূরবীন বা টেলিস্কোপ ব্যবহার করলে চাঁদের পৃষ্ঠের আরও বিস্তারিত দেখা যাবে।
যদিও এই ঘটনা বিশ্বব্যাপী দেখা যাবে, তবে আবহাওয়া ও অবস্থান অনুযায়ী দৃশ্যমানতা পরিবর্তিত হতে পারে। শহরের আলোকসজ্জা থেকে দূরে, গ্রামাঞ্চলে বা পাহাড়ি এলাকায় এই দৃশ্য আরও স্পষ্টভাবে দেখা যাবে। তাই যারা এই অসাধারণ দৃশ্য উপভোগ করতে চান, তাদের উচিত আগে থেকেই পরিকল্পনা করা।
এই ধরনের ঘটনা শুধু জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জন্যই নয়, সাধারণ মানুষের জন্যও উত্তেজনাপূর্ণ। এটি পরিবার ও বন্ধুদের সাথে একসাথে সময় কাটানোর এক চমৎকার সুযোগ। অনেকে এই সময়ে পিকনিক বা আউটডোর পার্টির আয়োজন করেন, যা সামাজিক বন্ধন মজবুত করতে সাহায্য করে।
শিক্ষাগত দৃষ্টিকোণ থেকেও এই ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ। স্কুল ও কলেজগুলি প্রায়শই এই সময়ে বিশেষ কর্মসূচি আয়োজন করে, যেখানে শিক্ষার্থীরা মহাকাশ ও জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কে আরও জানতে পারে। এটি তরুণদের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ বাড়াতে সাহায্য করে।
হান্টার্স মুন শুধু একটি প্রাকৃতিক ঘটনাই নয়, এটি মানবজাতির জ্ঞান, কল্পনা ও সৃজনশীলতার একটি উৎস। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আমরা কতটা ছোট, কিন্তু একই সময়ে আমাদের চারপাশের বিশ্ব কতটা বিস্ময়কর ও রহস্যময়। তাই আসুন, আমরা সবাই মিলে এই অসাধারণ মুহূর্তটি উপভোগ করি এবং মহাবিশ্বের অপার রহস্য নিয়ে ভাবি।