জয় কিশোর প্রধান নামে একজন ৬৪ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মচারী সম্প্রতি National Eligibility cum Entrance Test (NEET) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এই অসাধারণ কৃতিত্বের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন যে শিক্ষা ও স্বপ্ন পূরণের জন্য কোনো বয়স বড় নয়।
ওড়িশার বাসিন্দা জয় কিশোর প্রধান স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (SBI) থেকে ডেপুটি ম্যানেজার পদে অবসর গ্রহণের পর চিকিৎসা বিজ্ঞান পড়ার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে NEET পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ৪০ বছরের চাকরি জীবনের পর তিনি নতুন করে পড়াশোনা শুরু করেন এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ২০২০ সালে NEET পরীক্ষায় সফলতা অর্জন করেন।
প্রধান তাঁর যমজ কন্যাদের NEET প্রস্তুতি নেওয়া দেখে অনুপ্রাণিত হন। তিনি নিজেও অনলাইন কোচিং প্রোগ্রামে ভর্তি হন এবং পরীক্ষার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। পারিবারিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি পড়াশোনার জন্য প্রচুর সময় ব্যয় করেন।
২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ে NEET পরীক্ষার্থীদের জন্য উচ্চ বয়সসীমা তুলে নেওয়া হয়, যা প্রধানের মতো প্রবীণ পরীক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে। বর্তমানে NEET পরীক্ষার্থীদের জন্য নূন্যতম বয়স ১৭ বছর, কিন্তু কোনো উচ্চ বয়সসীমা নেই।
প্রধানের সাফল্য অনেকের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে। তাঁর গল্প প্রমাণ করে যে জীবনের যে কোনো পর্যায়ে নতুন কিছু শেখা ও নিজের স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব। তিনি বর্তমানে ওড়িশার Veer Surendra Sai Institute of Medical Sciences and Research (VIMSAR)-এ MBBS কোর্সে অধ্যয়নরত।
NEET একটি অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। ২০২৪ সালে প্রায় ২৪ লক্ষ পরীক্ষার্থী NEET-এ অংশগ্রহণ করেছিল। এর মধ্যে ৫৭.২০% ছিল মহিলা পরীক্ষার্থী এবং ৪২.৮০% ছিল পুরুষ পরীক্ষার্থী। মোট ২৩,৩৩,২৯৭ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয় এবং ১৩,১৬,২৬৮ জন উত্তীর্ণ হয়।
প্রধানের সাফল্য প্রমাণ করে যে শিক্ষা ও আত্মউন্নয়নের জন্য কোনো বয়স বড় নয়। তাঁর গল্প থেকে আমরা শিখতে পারি যে দৃঢ় সংকল্প, কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে যে কোনো বয়সে নিজের স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব। প্রধানের মতো ব্যক্তিরা সমাজে একটি ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে দেন যে শিক্ষা ও আত্মউন্নয়নের কোনো শেষ নেই।
এই ধরনের ঘটনা শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। এটি প্রমাণ করে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বয়স নিরপেক্ষভাবে সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকতে হবে। প্রবীণদের জন্যও উচ্চশিক্ষার সুযোগ থাকা উচিত। এছাড়া লাইফলং লার্নিং বা জীবনব্যাপী শিক্ষার ধারণাটিও এর মাধ্যমে জোরদার হয়।
প্রধানের মতো ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা যেতে পারে। যেমন প্রবীণদের জন্য বিশেষ কোচিং ক্লাস, অনলাইন কোর্স ইত্যাদি। এছাড়া তাদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে নতুন প্রজন্মকে শেখানোর সুযোগও তৈরি করা যেতে পারে।
প্রধানের এই সাফল্য আরও অনেককে অনুপ্রাণিত করবে বলে আশা করা যায়। এর ফলে ভবিষ্যতে আরও বেশি প্রবীণ ব্যক্তি উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য এগিয়ে আসতে পারেন। এটি সমাজে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে।
তবে এই ধরনের চ্যালেঞ্জ নেওয়ার আগে কিছু বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন। যেমন – শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, পারিবারিক দায়িত্ব, আর্থিক সামর্থ্য ইত্যাদি। প্রবীণদের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে পড়াশোনা করা কঠিন হতে পারে। তাই নিজের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
সামগ্রিকভাবে, জয় কিশোর প্রধানের গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে জীবনে কখনোই শেখার শেষ নেই। বয়স শুধুই একটি সংখ্যা, যা আমাদের স্বপ্ন পূরণে বাধা হতে পারে না। দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে যে কোনো বয়সে নতুন কিছু শেখা ও নিজেকে প্রমাণ করা সম্ভব। প্রধানের সাফল্য আমাদের সকলকে অনুপ্রাণিত করে এবং প্রমাণ করে যে শিক্ষার কোনো বয়স নেই।