Freedom Fighter contribution to India’s rail travel: ১৯৭৭ সালে ভারতের রেলমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর মাধু দাণ্ডাভাতে একটি সাধারণ কিন্তু যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন – দ্বিতীয় শ্রেণীর স্লিপার কোচের কাঠের বেঞ্চগুলোতে দুই ইঞ্চি ফোম যোগ করা। এই সামান্য পরিবর্তন কোটি কোটি সাধারণ ভারতীয়ের রেল যাত্রাকে আরামদায়ক করে তুলেছিল।দাণ্ডাভাতে ছিলেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী, গান্ধীবাদী এবং সমাজতান্ত্রিক নেতা।
তিনি ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত জনতা সরকারের রেলমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা।১৯৭৭ সালের আগে প্রথম শ্রেণীর কামরাগুলোতে আরামদায়ক গদিযুক্ত আসন থাকলেও দ্বিতীয় শ্রেণীর কামরাগুলোতে ছিল শক্ত কাঠের বেঞ্চ। দাণ্ডাভাতে এই বৈষম্য দূর করতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি প্রথম শ্রেণীকে অবনমিত করতে চাই না, বরং দ্বিতীয় শ্রেণীকে উন্নত করতে চাই।”১৯৭৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর মুম্বাই-কলকাতা রুটে প্রথম ফোমযুক্ত আসনের ট্রেন চালু হয়। দাণ্ডাভাতে এই ট্রেনের নাম রাখেন গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে। ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে সব ট্রেনেই দ্বিতীয় শ্রেণীর কামরায় ফোমযুক্ত আসন চালু হয়ে যায়।ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহ লিখেছেন, “এই দুই ইঞ্চি ফোম সম্ভবত অন্য যে কোনো রাজনৈতিক উদ্যোগের চেয়ে বেশি মানুষকে স্বস্তি দিয়েছে।”
ট্রেন দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি: ভারতের রেল ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলি
তিনি আরও লিখেছেন, “ভারতীয় রেলওয়ের সামাজিক ইতিহাস লিখতে গেলে তা দুই ভাগে ভাগ করতে হবে – দাণ্ডাভাতের আগে এবং দাণ্ডাভাতের পরে।”দাণ্ডাভাতের এই উদ্যোগ কোটি কোটি সাধারণ ভারতীয়ের জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। বর্তমানে ভারতীয় রেলওয়ে প্রতিদিন প্রায় ২৩ মিলিয়ন যাত্রী পরিবহন করে। এর অধিকাংশই সাধারণ মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষ। দাণ্ডাভাতের উদ্যোগের ফলে তাদের যাত্রা অনেক আরামদায়ক হয়েছে।
রেলমন্ত্রী হিসেবে দাণ্ডাভাতের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ ছিল:
১. রেল টিকিট সংরক্ষণ ব্যবস্থার কম্পিউটারাইজেশন, যা দুর্নীতি কমিয়ে যাত্রীদের অনিশ্চয়তা দূর করেছিল।
২. কঙ্কণ রেলওয়ের প্রথম পর্যায়ের অনুমোদন।
৩. ৫০০০ কিলোমিটার পুরনো রেললাইন মেরামত বা প্রতিস্থাপন।
৪. রেল ইউনিয়নগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন।
দাণ্ডাভাতে ১৯২৪ সালে মহারাষ্ট্রের আহমেদনগরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি গোয়ার পর্তুগিজ শাসনের বিরুদ্ধে সত্যাগ্রহ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ১৯৭১ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিনি পাঁচবার লোকসভা সদস্য নির্বাচিত হন।দাণ্ডাভাতে শুধু রাজনীতিবিদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন পদার্থবিজ্ঞানী। তিনি মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পরমাণু পদার্থবিজ্ঞান পড়াতেন। তাঁর রাজনৈতিক দর্শন ছিল সমাজতান্ত্রিক, কিন্তু তা ছিল ব্যবহারিক ও প্রগতিশীল।রামচন্দ্র গুহ লিখেছেন, “তাঁর সমাজতন্ত্র ধনীদের বিরুদ্ধে বক্তৃতা দেওয়ার পরিবর্তে দরিদ্রদের জন্য নীতি প্রণয়নে জোর দিত।” এটি দাণ্ডাভাতের ব্যবহারিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক।দাণ্ডাভাতের উদ্যোগ শুধু রেল যাত্রীদের স্বস্তি দেয়নি, এটি ভারতীয় রেলওয়ের আধুনিকীকরণের সূচনা করেছিল। তাঁর পদক্ষেপগুলো পরবর্তী সরকারগুলোকে রেলওয়ের উন্নয়নে অনুপ্রাণিত করেছিল।
দাণ্ডাভাতের জীবন ও কর্ম থেকে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পেতে পারি:
১. ছোট পরিবর্তনও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
২. জনকল্যাণমূলক নীতি গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
৩. সমাজের সকল স্তরের মানুষের কথা বিবেচনা করা উচিত।
৪. রাজনীতি ও প্রশাসনে ব্যবহারিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা প্রয়োজন।দাণ্ডাভাতের জীবন ও কর্ম প্রমাণ করে যে, একজন প্রকৃত জনপ্রতিনিধি কীভাবে সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করতে পারেন। তাঁর উদ্যোগ আজও কোটি কোটি ভারতীয়কে প্রভাবিত করছে।২০০৫ সালের ১২ নভেম্বর দাণ্ডাভাতের মৃত্যু হয়। তাঁর ইচ্ছানুসারে তাঁর দেহ মুম্বাইয়ের জে.জে. হাসপাতালে দান করা হয়। মৃত্যুর পরেও তিনি সমাজের কল্যাণে অবদান রেখে গেছেন।
রেলপথের রক্তাক্ত অধ্যায়: ভারতের পাঁচটি মর্মান্তিক ট্রেন বিপর্যয়
দাণ্ডাভাতের জীবন ও কর্ম আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, রাজনীতি ও প্রশাসন জনগণের কল্যাণের জন্য। তাঁর মতো নেতাদের অনুপ্রেরণায় আমরা আশা করতে পারি যে, ভবিষ্যতেও এমন নেতৃত্ব আসবে যারা সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করবেন।দাণ্ডাভাতের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর স্মৃতিচারণ করা হচ্ছে। তাঁর আদর্শ ও কর্ম নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে বলে আশা করা যায়। তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা একটি ন্যায়সঙ্গত ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে পারি।