Rex ট্যাবলেট: এটি কিসের ঔষধ? জানুন এর বিভিন্ন ধরণ, কাজ ও সঠিক ব্যবহার

"Rex" (রেক্স) ট্যাবলেট নামটি কি আপনার প্রেসক্রিপশনে লেখা আছে? যদি থাকে, তবে আপনি হয়তো ইন্টারনেটে জানতে চাইছেন "Rex tablet এর কাজ কি?"। কিন্তু এই প্রশ্নের একটিমাত্র সহজ উত্তর নেই। কারণ…

Avatar

 

“Rex” (রেক্স) ট্যাবলেট নামটি কি আপনার প্রেসক্রিপশনে লেখা আছে? যদি থাকে, তবে আপনি হয়তো ইন্টারনেটে জানতে চাইছেন “Rex tablet এর কাজ কি?”। কিন্তু এই প্রশ্নের একটিমাত্র সহজ উত্তর নেই। কারণ “Rex” কোনো একক ঔষধের নাম নয়, এটি একটি ব্র্যান্ড নাম যা ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করে। একটি “Rex” ট্যাবলেট হতে পারে কফের ঔষধ, অন্যটি হতে পারে অ্যাসিডিটির, আবার কোনোটি হতে পারে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট। তাই আপনার কাছে কোন “Rex” ট্যাবলেটটি আছে, তার কাজ জানতে হলে ঔষধের প্যাকেটের উপর লেখা এর সক্রিয় উপাদান (Active Ingredients) বা জেনেরিক নাম (Generic Name) দেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই আর্টিকেলে আমরা “Rex” নামে বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের ঔষধ, তাদের কাজ, উপাদান এবং সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করবো। এই তথ্য আপনাকে আপনার ঔষধ সম্পর্কে সচেতন হতে সাহায্য করবে, তবে এটি কোনোভাবেই চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়।

“Rex” নামের বিভিন্ন ঔষধ ও তাদের কাজ

যেহেতু “Rex” নামটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, তাই আমরা অনুসন্ধান এবং ফার্মাসিউটিক্যাল ডেটাবেস (যেমন 1mg, PharmEasy, Square Pharmaceuticals) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রধান কয়েকটি “Rex” ব্র্যান্ডের ঔষধের বর্ণনা নিচে দিচ্ছি।

১. কফের ঔষধ হিসেবে Rex (Expectorant/Mucolytic)

বাজারে “Rex” বা “Rexcof” নামে কফ সিরাপ এবং ট্যাবলেট পাওয়া যায়, যা সাধারণত বুকে জমাট বাঁধা কফ তরল করে বের করে আনতে সাহায্য করে।

এর প্রধান উপাদান ও কাজ

এই ধরনের “Rex” ট্যাবলেটে সাধারণত নিম্নলিখিত উপাদানগুলোর মিশ্রণ থাকে:

    • ব্রোমহেক্সিন (Bromhexine): এটি একটি মিউকোলাইটিক (Mucolytic) এজেন্ট। এর প্রধান কাজ হলো শ্বাসনালীতে জমে থাকা ঘন, আঠালো কফ বা শ্লেষ্মা (mucus) পাতলা করে দেওয়া।
  • গুয়াইফেনেসিন (Guaifenesin): এটি একটি এক্সপেক্টোর‍্যান্ট (Expectorant)। এটি শ্বাসনালীর আবরণীকে আর্দ্র করে এবং কফের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, ফলে পাতলা হয়ে যাওয়া কফ কাশির মাধ্যমে সহজে বের হয়ে আসতে পারে।
  • টারবিউটালাইন (Terbutaline): এটি একটি ব্রঙ্কোডাইলেটর (Bronchodilator)। এটি শ্বাসনালীর পেশীগুলিকে শিথিল করে এবং বায়ুপথ প্রশস্ত করে, ফলে শ্বাস নেওয়া সহজ হয়।

এটি কখন ব্যবহৃত হয়?

চিকিৎসকরা সাধারণত নিম্নলিখিত অবস্থাগুলির জন্য এই ঔষধটি সুপারিশ করতে পারেন:

  • ব্রঙ্কাইটিস (Bronchitis): শ্বাসনালীর প্রদাহজনিত রোগ, যাতে প্রচুর কফ তৈরি হয়।
  • অ্যাজমা বা হাঁপানি (Asthma): কফযুক্ত হাঁপানির উপসর্গ উপশমে।
  • এম্পিসেমা (Emphysema): ফুসফুসের একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ, যেখানে কফ জমতে পারে।

এই ধরনের কফের ঔষধ সাধারণত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্বল্প সময়ের জন্য ব্যবহার করা হয

২. অ্যাসিডিটির ঔষধ হিসেবে Rex 20 (Proton Pump Inhibitor)

কিছু কোম্পানি, যেমন PharmEasy-তে তালিকাভুক্ত তথ্য অনুযায়ী, “Rex 20” নামে ট্যাবলেট বাজারজাত করে, যা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ঔষধ।

এর প্রধান উপাদান ও কাজ

এই ঔষধের প্রধান এবং একমাত্র সক্রিয় উপাদান হলো:

  • রাবেপ্রাজল (Rabeprazole) ২০ মিগ্রা: এটি একটি প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (PPI) শ্রেণীর ঔষধ। এর কাজ হলো পাকস্থলীর প্যারাইটাল কোষ থেকে অ্যাসিড (হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড) নিঃসরণ কমানো।

এটি কখন ব্যবহৃত হয়?

“Rex 20” বা রাবেপ্রাজল প্রধানত নিম্নলিখিত পেটের সমস্যাগুলির জন্য ব্যবহৃত হয়:

  • গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD): যা সাধারণত বুকজ্বালা বা অ্যাসিড রিফ্লাক্স নামে পরিচিত।
  • পাকস্থলী বা ডিওডেনাল আলসার (Stomach or Duodenal Ulcers): পেপটিক আলসারের চিকিৎসায় ও প্রতিরোধে।
  • জলিঞ্জার-এলিসন সিন্ড্রোম (Zollinger-Ellison Syndrome): এটি একটি বিরল অবস্থা যেখানে পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিড তৈরি হয়।
  • হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি (H. pylori) সংক্রমণ: অন্যান্য অ্যান্টিবায়োটিকের সাথে একত্রে ব্যবহৃত হয় এই ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করতে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) তাদের প্রয়োজনীয় ঔষধের তালিকায় (Model List of Essential Medicines) পিপিআই ঔষধ যেমন ওমিপ্রাজলকে (রাবেপ্রাজলের মতো একই শ্রেণীর) অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগের চিকিৎসায় এর গুরুত্ব প্রমাণ করে।

৩. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সাপ্লিমেন্ট হিসেবে Rex® (Antioxidant)

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ঔষধ প্রস্তুতকারক স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড (Square Pharmaceuticals Ltd.) “Rex®” নামে একটি ট্যাবলেট তৈরি করে, যা একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট।

এর প্রধান উপাদান ও কাজ

স্কয়ার ফার্মার অফিসিয়াল লিফলেট অনুযায়ী, এই ট্যাবলেটের প্রতিটিতে রয়েছে:

  • বেটা-ক্যারোটিন (Beta-carotene) (ভিটামিন এ): ৬ মিগ্রা
  • ভিটামিন সি (Vitamin C): ২০০ মিগ্রা
  • ভিটামিন ই (Vitamin E): ৫০ মিগ্রা

এই তিনটি উপাদানই শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এদের সম্মিলিত কাজ হলো:

  • অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমানো: শরীরের কোষগুলোকে ফ্রি র‍্যাডিক্যাল (Free Radicals) নামক ক্ষতিকর অণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করা। ফ্রি র‍্যাডিক্যাল দীর্ঘমেয়াদী রোগ, যেমন হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: ভিটামিন সি এবং এ ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
  • ত্বক ও চোখের স্বাস্থ্য: ভিটামিন এ (বেটা-ক্যারোটিন থেকে রূপান্তরিত) এবং ভিটামিন ই ত্বক ও দৃষ্টিশক্তির জন্য উপকারী।

এটি কখন ব্যবহৃত হয়?

চিকিৎসকরা সাধারণত পুষ্টির ঘাটতি পূরণে বা নির্দিষ্ট কিছু রোগের ঝুঁকি কমাতে এটি সুপারিশ করতে পারেন, যেমন:

  • যাদের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নেই।
  • দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা থেকে পুনরুদ্ধারের সময়।
  • অতিরিক্ত অক্সিডেটিভ স্ট্রেসজনিত সমস্যায়।

৪. নার্ভ ও পুষ্টির ঔষধ হিসেবে Rexneuro (B-Complex)

“Rex” নামের সাথে “Neuro” (স্নায়ু সম্পর্কিত) শব্দটি যোগ করে “Rexneuro” নামেও ঔষধ পাওয়া যায়, যা মূলত একটি ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সাপ্লিমেন্ট।

এর প্রধান উপাদান ও কাজ

এই ধরনের ট্যাবলেটে (যেমন Apollo Pharmacy-তে তালিকাভুক্ত Rexneuro-Gold) সাধারণত থাকে:

  • মিথাইলকোবালামিন (Methylcobalamin) (ভিটামিন বি১২): স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতা এবং লোহিত রক্তকণিকা তৈরির জন্য অপরিহার্য।
  • পাইরিডক্সিন (Pyridoxine) (ভিটামিন বি৬): প্রোটিন বিপাক এবং নিউরোট্রান্সমিটার (স্নায়ু সংকেত) তৈরিতে সাহায্য করে।
  • থায়ামিন (Thiamine) (ভিটামিন বি১): কার্বোহাইড্রেটকে শক্তিতে রূপান্তর করতে এবং স্নায়ুর কাজে সাহায্য করে।
  • ফলিক অ্যাসিড (Folic Acid) (ভিটামিন বি৯): নতুন কোষ তৈরি এবং ডিএনএ সংশ্লেষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • আলফা লাইপোইক অ্যাসিড (Alpha-lipoic Acid): এটিও একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা স্নায়ুর ক্ষতি (Neuropathy) কমাতে সাহায্য করতে পারে।

এটি কখন ব্যবহৃত হয়?

  • ভিটামিন বি-এর অভাব: বিশেষ করে বি১২ বা বি৬ এর অভাবে।
  • নিউরোপ্যাথি (Neuropathy): ডায়াবেটিস বা অন্যান্য কারণে হাত-পায়ে ঝিনঝিন করা, অসাড়তা বা স্নায়বিক ব্যথায়।
  • রক্তস্বল্পতা (Anemia): নির্দিষ্ট ধরণের রক্তস্বল্পতার চিকিৎসায় (যেমন মেগালোব্লাস্টিক অ্যানিমিয়া)।
  • সাধারণ দুর্বলতা বা ক্লান্তি: পুষ্টির ঘাটতিজনিত কারণে হলে।

৫. অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে Rex 150 MG (Antibiotic)

কিছু অনলাইন ফার্মেসি (যেমন Lybrate) “Rex 150 MG Tablet” নামে একটি ঔষধ তালিকাভুক্ত করে, যার প্রধান উপাদান হতে পারে রক্সিথ্রোমাইসিন (Roxithromycin)

এর প্রধান উপাদান ও কাজ

  • রক্সিথ্রোমাইসিন (Roxithromycin) ১৫০ মিগ্রা: এটি একটি ম্যাক্রোলাইড অ্যান্টিবায়োটিক। এর কাজ হলো ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ সৃষ্টিকারী জীবাণুর বৃদ্ধি রোধ করা বা তাদের মেরে ফেলা।

এটি কখন ব্যবহৃত হয়?

এটি একটি প্রেসক্রিপশন-ভিত্তিক অ্যান্টিবায়োটিক যা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়, যেমন:

  • শ্বাসনালীর সংক্রমণ: ফ্যারিনজাইটিস (গলা ব্যথা), টনসিলাইটিস, সাইনুসাইটিস।
  • ফুসফুসের সংক্রমণ: নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস।
  • ত্বক ও নরম টিস্যুর সংক্রমণ।

গুরুত্বপূর্ণ দ্রষ্টব্য: অ্যান্টিবায়োটিক কখনোই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়। কোর্স সম্পন্ন না করলে বা ভুল কারণে খেলে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স (Antibiotic Resistance) তৈরি হতে পারে, যা ভবিষ্যতে সাধারণ সংক্রমণকেও দুরারোগ্য করে তুলতে পারে।

পুষ্টির ঘাটতি: একটি গভীর বিশ্লেষণ

যেহেতু “Rex” ব্র্যান্ডের অধীনে বিভিন্ন ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট (যেমন বি-কমপ্লেক্স এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট) পাওয়া যায়, তাই পুষ্টির ঘাটতির বিষয়টি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।

ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের গুরুত্ব

ভিটামিন বি গ্রুপে মোট আটটি ভিটামিন রয়েছে (বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, বি৭, বি৯, বি১২)। এগুলো জলে দ্রবণীয় (water-soluble), অর্থাৎ শরীর এগুলো জমা করে রাখতে পারে না (বি১২ বাদে), তাই প্রতিদিন খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করা প্রয়োজন।

ভিটামিন বি-এর প্রধান কাজ:

  • শক্তি উৎপাদন: খাদ্য (কার্বোহাইড্রেট) থেকে শক্তি তৈরিতে সাহায্য করে।
  • স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্য: নিউরোট্রান্সমিটার তৈরিতে এবং স্নায়ু কোষের সুরক্ষায় (মায়েলিন শীথ) ভিটামিন বি১২ এবং বি৬ এর ভূমিকা অপরিসীম।
  • লোহিত রক্তকণিকা গঠন: বি১২ এবং বি৯ (ফোলেট) স্বাস্থ্যকর লোহিত রক্তকণিকা তৈরির জন্য অপরিহার্য, যা শরীরে অক্সিজেন পরিবহন করে।
  • ডিএনএ সংশ্লেষণ: নতুন কোষ তৈরির প্রক্রিয়ায় বি৯ গুরুত্বপূর্ণ।

দক্ষিণ এশিয়ায় ভিটামিন বি-এর অভাব

দক্ষিণ এশিয়া, বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশে ভিটামিন বি১২-এর অভাব একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা।

যাদের ভিটামিন বি১২-এর অভাবের ঝুঁকি বেশি:

  • নিরামিষাশী (Vegetarians/Vegans): কারণ বি১২ প্রধানত প্রাণীজ খাদ্যে (মাংস, মাছ, ডিম, দুধ) পাওয়া যায়।
  • বয়স্ক ব্যক্তি: বয়স বাড়ার সাথে সাথে পাকস্থলীর অ্যাসিড কমে যাওয়ায় বি১২ শোষণ ক্ষমতা কমে যায়।
  • হজমের সমস্যা: যাদের ক্রোন’স ডিজিজ (Crohn’s disease) বা সিলিয়াক ডিজিজ (Celiac disease) আছে।
  • অ্যাসিডিটির ঔষধ (PPI) ব্যবহারকারী: যারা দীর্ঘমেয়াদে রাবেপ্রাজল (যেমন Rex 20) বা ওমিপ্রাজলের মতো ঔষধ খান, তাদের পাকস্থলীর অ্যাসিড কমে যাওয়ায় বি১২ শোষণ ব্যাহত হতে পারে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের (ভিটামিন এ, সি, ই) ভূমিকা

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হলো সেইসব অণু যা কোষের ক্ষতি রোধ করে। আমাদের শরীর যখন শক্তি উৎপাদন করে বা পরিবেশগত দূষণের (যেমন ধোঁয়া) সংস্পর্শে আসে, তখন “ফ্রি র‍্যাডিক্যাল” তৈরি হয়। এই ফ্রি র‍্যাডিক্যালগুলো কোষের ডিএনএ, প্রোটিন এবং চর্বির ক্ষতি করে, যাকে “অক্সিডেটিভ স্ট্রেস” বলা হয়।

  • ভিটামিন ই: কোষের ঝিল্লিকে (cell membrane) রক্ষা করে।
  • ভিটামিন সি: রক্তে এবং কোষের ভিতরের তরলে কাজ করে এবং ভিটামিন ই-কে পুনরায় সক্রিয় করতে সাহায্য করে।
  • বেটা-ক্যারোটিন (ভিটামিন এ): এটিও কোষের ঝিল্লি রক্ষায় কাজ করে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ (NIH), ইউএসএ অনুযায়ী, যদিও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল ও সবজি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তবে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রহণ নির্দিষ্ট কিছু রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে কিনা তা নিয়ে গবেষণা মিশ্র। উচ্চ মাত্রার বেটা-ক্যারোটিন সাপ্লিমেন্ট ধূমপায়ীদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে বলেও প্রমাণ রয়েছে। তাই সাপ্লিমেন্ট সবসময় চিকিৎসকের পরামর্শে নেওয়া উচিত।

অ্যাসিডিটি ও পিপিআই (PPI) ঔষধ

“Rex 20” (রাবেপ্রাজল) যে শ্রেণীর ঔষধ (PPI), তা বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ঔষধগুলির মধ্যে অন্যতম।

পিপিআই কিভাবে কাজ করে?

পাকস্থলীর গায়ে লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র ‘প্রোটন পাম্প’ থাকে, যা খাবার হজম করার জন্য অ্যাসিড তৈরি করে। পিপিআই ঔষধগুলি এই পাম্পগুলিকে সরাসরি ব্লক করে দেয়, ফলে অ্যাসিড উৎপাদন প্রায় ৯০% পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে সতর্কতা

যদিও পিপিআই ঔষধগুলি জিইআরডি (GERD) এবং আলসারের চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর, তবে আমেরিকান ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সংস্থাগুলি দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার (সাধারণত এক বছরের বেশি) নিয়ে কিছু সতর্কতা দিয়েছে:

  • ভিটামিন বি১২-এর অভাব: যা আমরা আগেই আলোচনা করেছি।
  • ম্যাগনেসিয়ামের অভাব: রক্তে ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা কমে যেতে পারে।
  • হাড়ের ফ্র্যাকচার: দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে হাড়ের ঘনত্ব কমে হিপ, কবজি বা মেরুদণ্ডে ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি কিছুটা বাড়তে পারে।
  • কিডনি সমস্যা: কিছু গবেষণায় দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে ক্রনিক কিডনি ডিজিজের (CKD) ঝুঁকি দেখা গেছে।

এই কারণেই চিকিৎসকরা সাধারণত সর্বনিম্ন কার্যকরী ডোজে এবং স্বল্পতম সময়ের জন্য পিপিআই ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

কিভাবে বুঝবেন কোনটি আপনার “Rex” ট্যাবলেট?

এখন পর্যন্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, শুধুমাত্র “Rex” নামটি জানা যথেষ্ট নয়। আপনার ঔষধটি সঠিকভাবে চেনার জন্য:

১. ঔষধের স্ট্রিপ বা বক্স পরীক্ষা করুন: নামের ঠিক নিচেই ছোট অক্ষরে এর সক্রিয় উপাদান (Composition) লেখা থাকে। যেমন: “Rabeprazole 20mg” বা “Bromhexine, Guaifenesin…” বা “Beta-carotene, Vitamin C, Vitamin E”।

২. প্যাকেটের ভেতরের লিফলেট পড়ুন: প্রতিটি ঔষধের বাক্সে একটি তথ্যমূলক লিফলেট থাকে, যেখানে এর কাজ, মাত্রা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি বিস্তারিত লেখা থাকে।

৩. ফার্মাসিস্টকে জিজ্ঞাসা করুন: ঔষধ কেনার সময় ফার্মাসিস্টের কাছ থেকে এর কাজ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন।

৪. চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন: যিনি আপনাকে ঔষধটি প্রেসক্রাইব করেছেন, তিনিই আপনার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে এর প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন।

সাধারণ সতর্কতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

যেহেতু “Rex” বিভিন্ন প্রকারের ঔষধ, তাই এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও সম্পূর্ণ আলাদা।

ঔষধের ধরণ সম্ভাব্য সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
Rex (কফের ঔষধ) বমি বমি ভাব, পেট খারাপ, ডায়রিয়া, মাথা ঘোরা, বুক ধড়ফড় (টারবিউটালাইনের জন্য)।
Rex 20 (অ্যাসিডিটি) মাথাব্যথা, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব।
Rex (অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট) সাধারণত সুসহনীয়। তবে উচ্চ মাত্রায় বেটা-ক্যারোটিনে ত্বক হলুদাভ হতে পারে (ক্যারোটেনোডার্মা), উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি-তে পেট খারাপ বা কিডনি পাথর হতে পারে।
Rexneuro (বি-কমপ্লেক্স) সাধারণত নিরাপদ। তবে কিছু ক্ষেত্রে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া, পেট খারাপ বা ডায়রিয়া হতে পারে।
Rex 150 (অ্যান্টিবায়োটিক) পেট ব্যথা, ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব, র্যাশ, লিভারের সমস্যা (বিরল)।

গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: যেকোনো ঔষধেই গুরুতর অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া (র‍্যাশ, চুলকানি, মুখ ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট) দেখা দিলে তা গ্রহণ করা বন্ধ করে অবিলম্বে হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।

উপসংহার

“Rex tablet এর কাজ কি?”—এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে আপনার কাছে কোন “Rex” ট্যাবলেটটি আছে তার উপর। এটি কফ, অ্যাসিডিটি, ভিটামিনের অভাব বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঔষধ হতে পারে। ঔষধের ভুল ব্যবহার উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করতে পারে। তাই, যেকোনো ঔষধ সেবনের আগে সর্বদা ঔষধের প্যাকেটে থাকা উপাদান তালিকা পড়ুন এবং আপনার চিকিৎসকের নির্দেশাবলী কঠোরভাবে মেনে চলুন। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্যের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বা এনএইচএস (NHS, UK) এর মতো নির্ভরযোগ্য উৎসের সাহায্য নিন।

সতর্কীকরণ: এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র তথ্যগত উদ্দেশ্যে লেখা। “Rex” (রেক্স) একটি ব্র্যান্ড নাম যা বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন ঔষধের জন্য ব্যবহার করে। আপনার নির্দিষ্ট ঔষধের কাজ, মাত্রা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জানতে অবশ্যই একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিন বা ঔষধের প্যাকেটে থাকা উপাদান তালিকা (Composition) দেখুন।

About Author
Avatar

আমাদের স্টাফ রিপোর্টারগণ সর্বদা নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন যাতে আপনি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সর্বশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ খবর পেতে পারেন। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রতিশ্রুতি আমাদের ওয়েবসাইটকে একটি বিশ্বস্ত তথ্যের উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।তারা নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্টিংয়ে বিশ্বাসী, দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক প্রতিবেদন তৈরিতে সক্ষম

আরও পড়ুন