কলকাতার রাজপথে আবারও উত্তাল পরিস্থিতি। পুজোর আনন্দের মাঝেই স্বাস্থ্য পরিষেবায় দেখা দিয়েছে চরম সংকট। আর.জি. কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একজন মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় বিচার দাবি করে আমরণ অনশনে বসেছেন ৬ জন জুনিয়র ডাক্তার। শনিবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া এই অনশন চলবে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত।
গত ৯ আগস্ট আর.জি. কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একজন মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়। এই ঘটনার পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তাররা আন্দোলন শুরু করেন। প্রায় ৪২ দিন ধরে চলা এই আন্দোলনের পর গত ২১ সেপ্টেম্বর তারা আংশিকভাবে কাজে ফিরে আসেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় আবার তারা পূর্ণ কর্মবিরতি শুরু করেন ১ অক্টোবর থেকে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় জুনিয়র ডাক্তাররা তাদের পূর্ণ কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন। কিন্তু সেই সঙ্গে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন তাদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য। এই সময়সীমা শেষ হওয়ার পর শনিবার সন্ধ্যায় ৬ জন জুনিয়র ডাক্তার আমরণ অনশনে বসেন কলকাতার এস্প্ল্যানেড এলাকায়।
ভারতে ডাক্তারদের আন্দোলন: চরম অবহেলা ও নিরাপত্তাহীনতার বিরুদ্ধে ফেটে পড়া ক্ষোভ
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিষ হালদার জানিয়েছেন, “আমরা সরকারকে ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছিলাম আমাদের দাবিগুলি পূরণ করার জন্য। কিন্তু কোনও সাড়া না পাওয়ায় আমরা আমরণ অনশন শুরু করেছি।”
1. আর.জি. কর হাসপাতালের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত
2. হাসপাতালগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা
3. সমস্ত মেডিক্যাল কলেজে “threat culture” বন্ধ করা
4. স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব এন.এস. নিগমকে অপসারণ করা
5. পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিল ও পশ্চিমবঙ্গ হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডে দুর্নীতির তদন্ত
অনশনরত ডাক্তাররা জানিয়েছেন, যতক্ষণ না তাদের দাবিগুলি পূরণ করা হচ্ছে, ততক্ষণ তারা অনশন চালিয়ে যাবেন। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত অনশন চালানোর হুমকিও দিয়েছেন তারা।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে পুজোর সময় যখন দুর্ঘটনা ও অসুস্থতার ঘটনা বেড়ে যায়, তখন এই ধরনের কর্মবিরতি ও অনশন সাধারণ মানুষের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে সূত্রের খবর, উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক চলছে এই সমস্যার সমাধানের জন্য।
তৃণমূল সরকারকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম, নাহলে আমরণ অনশন! হুঁশিয়ারি জুনিয়র
এদিকে, বিরোধী দলগুলি এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। বিজেপি নেতা সুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, “রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ করা উচিত।”
তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, “সরকার জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। কিন্তু এভাবে হঠাৎ করে অনশন শুরু করা ঠিক নয়।”
চিকিৎসক সংগঠনগুলিও এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য শাখার সভাপতি ডাঃ সুশান্ত রায় বলেছেন, “আমরা জুনিয়র ডাক্তারদের দাবির সঙ্গে একমত। কিন্তু অনশনের পথে না গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা উচিত।”
এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। কলকাতার বাসিন্দা সুমন দাস বলেছেন, “আমার বাবা হার্টের রোগী। হঠাৎ অসুস্থ হলে কোথায় নিয়ে যাব বুঝতে পারছি না। সরকার ও ডাক্তারদের দ্রুত একটা সমাধান বের করা উচিত।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ অভিজিত চৌধুরী বলেছেন, “জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি যথার্থ। কিন্তু এভাবে হাসপাতাল বন্ধ রাখলে সাধারণ মানুষ মারা যাবে। উভয় পক্ষকে আপস করে একটা সমাধান বের করতে হবে।”
এই পরিস্থিতিতে সকলের চোখ এখন সরকারের দিকে। জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মেনে নেওয়া হবে, নাকি কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। তবে যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যার সমাধান না হলে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা মারাত্মক সংকটের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।