বাংলাদেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ধর্ষণের ঘটনা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে, যা দেশজুড়ে উদ্বেগ ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এই পরিস্থিতির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছে ছাত্র-ছাত্রীরা। বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া এই অপরাধের ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও আইনশৃঙ্খলার অবনতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে।
গত মার্চ মাসের শুরু থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার গোপীনাথপুরে ৩ মার্চ দুই বোন জুতি বেগম (২৫) ও স্মৃতি আক্তারকে (১৫) ধর্ষণের পর হত্যার চেষ্টা করা হয়। এই ঘটনায় অভিযুক্তরা শিশু স্মৃতিকে শ্বাসরোধ করে মারার চেষ্টা করে। একইভাবে, ফরিদপুরে ৮ মার্চ একটি চার বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ১৩ বছরের এক কিশোরকে আটক করা হয়। এ ছাড়া মাগুরায় একটি আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। এসব ঘটনার প্রতিবাদে ৯ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ’ গঠন করে শিক্ষার্থীরা দুটি দাবি উত্থাপন করেছে—অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
বিষয়টির গভীরতা বোঝার জন্য আরও তথ্যের দিকে নজর দিলে দেখা যায়, বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এই ঘটনাগুলোর অন্যতম কারণ হতে পারে। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা-রাজশাহী রুটে একটি বাসে ডাকাতির পাশাপাশি নারী যাত্রীদের ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় বাসটি প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ডাকাতদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে দেশে অন্তত ৩৯টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ১০টি ঘটনায় কোনো মামলাই দায়ের হয়নি। এই পরিসংখ্যান দেশের আইনি ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং অপরাধীদের নির্ভয়তার চিত্র তুলে ধরে।
প্রতিবাদের সুর আরও জোরালো হয়েছে যখন ছাত্ররা রাজপথে নেমেছে। ঢাকায় ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ নামে একটি গণপদযাত্রার আয়োজন করা হয়, যদিও পুলিশের বাধা ও লাঠিচার্জে তা ব্যাহত হয়। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, সরকারের উদাসীনতা এবং দুর্বল প্রশাসনের কারণেই ধর্ষকরা এভাবে অপরাধ করে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনাগুলো নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হচ্ছে। অনেকে বলছেন, ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত ‘নতুন বাংলাদেশ’ এখন ধর্ষকদের ‘স্বর্গরাজ্য’ হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলার দাবি জোরালো হচ্ছে।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, বাংলাদেশে এখন এমন একটা সময় চলছে, যেখানে নারী ও শিশুরা নিরাপদ নয়। একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় মানুষের মনে ভয় আর রাগ দুটোই জমছে। ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তায় নেমে সরকারের কাছে জবাব চাইছে, কিন্তু পুলিশের বাধা আর অপরাধীদের ধরতে না পারায় পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। বিশ্বস্ত সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, এই সমস্যা শুধু আইনের দুর্বলতা নয়, সমাজের মনোভাব আর সরকারের নিষ্ক্রিয়তারও ফল। তাই ছাত্রদের এই প্রতিবাদ কেবল রাস্তায় নয়, সবার মনে একটা বড় প্রশ্ন জাগিয়েছে—এই ‘নতুন’ বাংলাদেশ কি সত্যিই নতুন কিছু দিতে পারবে?
মন্তব্য করুন