Uncontrollable shaking illness Uganda: আফ্রিকার উগান্ডায় নতুন এক ভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ‘ডিঙ্গা ডিঙ্গা’ নামের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে রোগীর শরীর অস্বাভাবিকভাবে কাঁপতে থাকে। বিশেষ করে নারী ও কিশোরীরাই এই ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
ডিঙ্গা ডিঙ্গা ভাইরাস কী?
ডিঙ্গা ডিঙ্গা একটি নতুন ধরনের ভাইরাস যা সম্প্রতি উগান্ডার বুন্ডিবুগিও জেলায় দেখা দিয়েছে। স্থানীয় ভাষায় ‘ডিঙ্গা ডিঙ্গা’ শব্দটির অর্থ হল ‘নাচের মতো শরীর নড়াচড়া করা’। এই নামকরণের কারণ হল, আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে অনিয়ন্ত্রিত কাঁপুনি শুরু হয় যা নাচের মতো দেখায়।
ভাইরাসের উৎপত্তি ও বিস্তার
উগান্ডার চিকিৎসকরা ২০২৩ সালে প্রথমবার ডিঙ্গা ডিঙ্গা রোগের সন্ধান পান। তবে এখনও পর্যন্ত এই ভাইরাসের উৎস বা কীভাবে এটি ছড়াচ্ছে তা জানা যায়নি। স্থানীয় চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা এর কারণ ও প্রতিকার বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
Zika Virus Symptoms & Signs: মশার কামড়ে মৃত্যুর ছোঁয়া, জিকা ভাইরাস নিয়ে উদ্বেগে ভারত
আক্রান্তের লক্ষণ
ডিঙ্গা ডিঙ্গা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা যায়:
- অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত শারীরিক কাঁপুনি
- উচ্চ জ্বর
- নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া
- সারা শরীরে ব্যথা
- মাথা ব্যথা
- শ্বাসকষ্ট
- অত্যধিক দুর্বলতা
- কিছু ক্ষেত্রে দেহ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়া
বিশেষ উদ্বেগের কারণ
এই ভাইরাসটি বিশেষভাবে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কারণ:
- এর লক্ষণগুলি অন্যান্য গুরুতর রোগের সাথে মিলে যায়, যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা, করোনাভাইরাস, ম্যালেরিয়া ও হাম।
- বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারী ও শিশুরাই আক্রান্ত হচ্ছেন।
- আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিজেদের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছেন।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
বুন্ডিবুগিও জেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কিয়িটা ক্রিস্টোফার জানিয়েছেন, ডিঙ্গা ডিঙ্গা রোগের চিকিৎসায় বর্তমানে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান:
- স্থানীয় স্বাস্থ্য দলগুলো এই চিকিৎসা প্রদান করছে।
- এই রোগে এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
- ভেষজ ওষুধ এখনও পর্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়নি।
- সাধারণত রোগীরা এক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন।
গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা এখনও এই ভাইরাস নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা আক্রান্ত রোগীদের থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করছেন। তবে এখনও পর্যন্ত এই ভাইরাসের উৎস এবং কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেননি।
সতর্কতা ও প্রতিরোধ
যদিও এখনও পর্যন্ত ডিঙ্গা ডিঙ্গা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট প্রতিরোধ ব্যবস্থা জানা যায়নি, তবে সাধারণ ভাইরাল সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে:
- নিয়মিত হাত ধোয়া
- মাস্ক পরা
- জনাকীর্ণ স্থান এড়িয়ে চলা
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়া
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভূমিকা
এখনও পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ডিঙ্গা ডিঙ্গা ভাইরাস সম্পর্কে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানা গেছে।
সামাজিক প্রভাব
ডিঙ্গা ডিঙ্গা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব উগান্ডার বুন্ডিবুগিও জেলার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা যেহেতু বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন, তাই এটি সমাজের উপর একটি বড় প্রভাব ফেলছে।
ভবিষ্যৎ গবেষণার দিকনির্দেশনা
ডিঙ্গা ডিঙ্গা ভাইরাস নিয়ে ভবিষ্যতে আরও গভীর গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর মনোনিবেশ করছেন:
- ভাইরাসের জেনেটিক গঠন
- সংক্রমণের পদ্ধতি
- কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি
- সম্ভাব্য টিকা উদ্ভাবন
ডিঙ্গা ডিঙ্গা ভাইরাস একটি নতুন ও অজানা হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত এর প্রাদুর্ভাব সীমিত এলাকায় সীমাবদ্ধ, তবুও এর দ্রুত বিস্তার উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা এই ভাইরাস নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আশা করা যাচ্ছে, শীঘ্রই এর কার্যকর প্রতিরোধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত, জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।