Ritwik Ghatak’s ancestral home demolition: বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের রাজশাহীর পৈতৃক বাড়িটি রাতের আঁধারে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। রাজশাহীর ঘোড়ামারা মহল্লায় মিয়াপাড়ায় অবস্থিত এই বাড়িতেই ঋত্বিক ঘটক তাঁর শৈশব ও কৈশোর কাটিয়েছিলেন।
এই ঘটনাটি ঘটেছে গত ৬ আগস্ট, ২০২৪ সালে।ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, বাড়িটি ভাঙার আগে পাশের হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে বাড়ি ভাঙার কোনো ফুটেজ না থাকে। স্থানীয় চলচ্চিত্র কর্মীদের অভিযোগ, কলেজ প্রশাসনের নির্দেশেই এই ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। তবে কলেজের অধ্যক্ষ দাবি করেছেন যে তাদের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরাই এই কাজ করেছে। বাড়িটি ভাঙার খবর পেয়ে গত ১৪ আগস্ট বুধবার দুপুরে রাজশাহীর চলচ্চিত্র কর্মীরা ঘটনাস্থলে যান।
তাঁরা দেখতে পান যে ৬ আগস্ট দুপুর ১২টা ৪৪ মিনিট পর্যন্ত কলেজের সিসিটিভি চলছিল, কিন্তু তারপর থেকে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় চলচ্চিত্র কর্মীদের সঙ্গে কলেজ কর্তৃপক্ষের বাকবিতণ্ডাও হয়েছে। এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে রাজশাহী জেলা প্রশাসক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ১৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকালে প্রশাসনের আধিকারিকরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং চলচ্চিত্র কর্মী ও কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন।
ঋত্বিক ঘটকের এই বাড়িটি শুধু তাঁর নিজের জীবনের স্মৃতি বহন করে না, এটি বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল। এই বাড়িতে থেকেছেন ঋত্বিক ঘটকের ভাইঝি বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী। এর পাশেই একটি সাধারণ গ্রন্থাগার ছিল, যেখানে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঋত্বিক ঘটক নাট্যচর্চাও করতেন। ঋত্বিক ঘটক রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহী কলেজে পড়াশোনা করেছেন। তাঁর শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের একটি অংশ এই বাড়িতেই কেটেছে। ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের পর তাঁর পরিবার কলকাতায় চলে যায়।
এই ঘটনাটি শুধু একটি ঐতিহাসিক স্থাপনার ধ্বংসই নয়, এটি বাংলা সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্রের ইতিহাসের একটি অমূল্য অংশের ক্ষতি। ঋত্বিক ঘটক বাংলা চলচ্চিত্রের একজন কিংবদন্তি পরিচালক, যিনি ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘সুবর্ণরেখা’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘কোমলগান্ধার’ ইত্যাদি বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন।
Tollywood: উত্তম-যুগের পর বাংলা চলচ্চিত্রের নবজাগরণের রূপকার রঞ্জিত মল্লিক
তাঁর পৈতৃক বাড়ি ধ্বংস হওয়া শুধু বাংলাদেশের নয়, সমগ্র বাংলা সংস্কৃতির জন্য একটি বড় ক্ষতি।এই ঘটনাটি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার দিকে আলোকপাত করেছে। অনেক সাংস্কৃতিক কর্মী ও চলচ্চিত্র প্রেমী এই ঘটনায় গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা দাবি করছেন যে এই ধরনের ঐতিহাসিক স্থানগুলি সংরক্ষণ করা উচিত, যা দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ।এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশের সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি উঠেছে যে তারা যেন এই ধরনের ঐতিহাসিক স্থানগুলি চিহ্নিত করে সেগুলি সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
এছাড়াও, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও উঠেছে।বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক মহলে এই ঘটনাটি গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। অনেকেই মনে করছেন যে এই ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ইতিহাসের প্রতি অবজ্ঞার প্রতিফলন। তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে এই ধরনের ঘটনা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে আগামী প্রজন্ম তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার সুযোগ হারাবে।এই ঘটনাটি শুধু বাংলাদেশের নয়, সমগ্র বাঙালি সমাজের জন্য একটি বড় ক্ষতি। ঋত্বিক ঘটক যেমন বাংলাদেশের, তেমনি ভারতেরও সম্পদ। তাঁর সৃষ্টি দুই বাংলারই মানুষের হৃদয়ে সমান আদৃত।
তাই তাঁর স্মৃতি বিজড়িত এই স্থানটি ধ্বংস হওয়া দুই দেশের সাংস্কৃতিক মহলেই গভীর শোকের সৃষ্টি করেছে।এই ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও চলচ্চিত্র সংস্থা প্রতিবাদ সভা ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। তাঁরা দাবি করছেন যে সরকার যেন এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করে। পাশাপাশি, তাঁরা চাইছেন যে সরকার যেন দেশের অন্যান্য ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলি চিহ্নিত করে সেগুলি সংরক্ষণের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
এই ঘটনাটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য আমাদের সবাইকে সচেতন ও সক্রিয় হতে হবে। শুধু সরকারি উদ্যোগের উপর নির্ভর না করে, সাধারণ মানুষেরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন। আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হলো আমাদের চারপাশের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলি সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সেগুলি সংরক্ষণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা।
পরিশেষে বলা যায়, ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক বাড়ি ধ্বংসের এই ঘটনাটি আমাদের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরেছে – আমরা কি আমাদের অতীতকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করছি? আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য আমরা কতটা সচেতন ও সক্রিয়? এই প্রশ্নগুলির উত্তর খোঁজা এবং সেই অনুযায়ী কাজ করা এখন সময়ের দাবি।