মহারাষ্ট্রের উলহাসনগরে বাংলাদেশি পর্ন স্টার রিয়া বর্দেকে জাল ভারতীয় নথিপত্র ব্যবহার করে অবৈধভাবে থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। রিয়া বর্দে, যিনি আরোহী বর্দে এবং বান্না শেখ নামেও পরিচিত, তাকে হিল লাইন পুলিশ স্টেশনের কর্মীরা গ্রেফতার করেছেন।
পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, রিয়া বর্দের মা আঞ্জলি বর্দে (যিনি রুবি শেখ নামেও পরিচিত) বাংলাদেশের বাসিন্দা এবং তিনি তার দুই মেয়ে (রিয়াসহ) এবং ছেলেকে নিয়ে অবৈধভাবে ভারতে বসবাস করছিলেন। রিয়ার মা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হওয়ার দাবি করে অমরাবতীর বাসিন্দা অরবিন্দ বর্দেকে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে তিনি নিজের এবং সন্তানদের জন্য জাল জন্ম শংসাপত্র ও অন্যান্য নথিপত্র জমা দিয়ে ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেন।
পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর সংগ্রাম মালকার, যিনি পুরো ঘটনার তদন্ত করেছেন, জানিয়েছেন যে রিয়ার মা এবং বাবা বর্তমানে কাতারে বসবাস করছেন, আর পুলিশ তার ভাই ও বোনকেও খুঁজছে।
বাংলাদেশি ইউটিউবারের অবৈধ ভারত প্রবেশের ভিডিও ভাইরাল, উদ্বেগ বাড়ল
রিয়া বর্দে রাজ কুন্দ্রার প্রোডাকশনের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং অনেক পর্নোগ্রাফিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি পূর্বে মুম্বাই পুলিশের হাতে অনৈতিক পাচার (প্রতিরোধ) আইনের অধীনে বেশ্যাবৃত্তি সংক্রান্ত একটি মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন।
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে যখন প্রশান্ত মিশ্র নামে রিয়ার এক বন্ধু জানতে পারেন যে সে মূলত বাংলাদেশের বাসিন্দা এবং দেশে অবৈধভাবে বসবাস করছে। তিনি পুলিশকে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন, যার পর পুলিশ তার নথিপত্র তদন্ত করে।
রিয়া বর্দের গ্রেফতারের পাশাপাশি, নবী মুম্বাইয়ের কারাভে গ্রামে আরও সাতজন মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে যারা জাল নথিপত্র ব্যবহার করে অবৈধভাবে ভারতে বসবাস করছিলেন[3]। এনআরআই পুলিশ স্টেশনের একটি দল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কারাভে গ্রামের একটি আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুটি ঘরে থাকা এই মহিলাদের গ্রেফতার করে[3]। অভিযুক্ত মহিলারা গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন এবং অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে বৈধ নথিপত্র ছাড়াই গ্রামে বসবাস করছিলেন।
রিয়া বর্দের নথিপত্র যাচাইয়ের সময় দেখা যায় যে তার জন্ম শংসাপত্র, স্কুল ছাড়ার শংসাপত্র এবং পাসপোর্টে তিনটি ভিন্ন জন্মস্থান উল্লেখ করা হয়েছে – পশ্চিমবঙ্গের উত্তর 24 পরগনা, হুগলি এবং মহারাষ্ট্রের অমরাবতী জেলার আচলপুর।
তদন্তে আরও জানা গেছে যে অভিযুক্তরা একজন সহযোগীর জন্য বাংলাদেশ থেকে স্কুল স্থানান্তরের শংসাপত্র এবং পশ্চিমবঙ্গের উত্তর 24 পরগনা জেলা থেকে জন্ম শংসাপত্র সংগ্রহ করার ষড়যন্ত্র করেছিল। এই নথিপত্র ব্যবহার করে তারা অন্য অভিযুক্তদের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছিল।
অমরাবতীর একজন বাসিন্দা কথিত ভাবে রিয়া এবং তার তিনজন সহযোগীর জন্য জাল নথিপত্র তৈরি করেছিলেন যাতে তারা অবৈধভাবে ভারতে থাকতে পারে। এই মামলায় আরও চারজন অভিযুক্তকে খোঁজা হচ্ছে।
রিয়া বর্দে একজন প্রখ্যাত অ্যাডাল্ট ফিল্ম অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিত। তিনি বিভিন্ন প্রযোজনা সংস্থার সাথে যুক্ত ছিলেন এবং অনেক পর্নোগ্রাফিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। IMDB-এর মতে, তিনি ‘আমরস’ (2023) নামক একটি চলচ্চিত্রে তার কাজের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।
এই ঘটনা ভারতে অবৈধ অভিবাসন এবং জাল নথিপত্র ব্যবহারের চলমান সমস্যার দিকে আলোকপাত করেছে। এটি দেখায় যে কীভাবে কিছু ব্যক্তি দেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করে এবং জাল পরিচয়পত্র ব্যবহার করে বসবাস করছে। এই ধরনের ঘটনা জাতীয় নিরাপত্তা এবং আইনের শাসনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
রিয়া বর্দের গ্রেফতার এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করে যে কীভাবে অবৈধ অভিবাসীরা পরিবার ভিত্তিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে দেশে প্রবেশ করে এবং বসবাস করে। এটি আরও দেখায় যে কীভাবে তারা বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত হয় এবং সমাজে মিশে যায়।
এই ঘটনা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা হিসেবে কাজ করে। এটি প্রমাণ করে যে নথিপত্র যাচাই এবং পরিচয় নিশ্চিতকরণের প্রক্রিয়া আরও কঠোর করা প্রয়োজন। এছাড়াও, এটি দেখায় যে বিভিন্ন রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সংস্থার মধ্যে আরও ভাল সমন্বয়ের প্রয়োজন রয়েছে যাতে এই ধরনের অপরাধ সনাক্ত করা এবং প্রতিরোধ করা যায়।
ভারতীয় পাসপোর্ট: আবেদন প্রক্রিয়া, খরচ ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র
রিয়া বর্দের কেস আরও প্রমাণ করে যে কীভাবে অবৈধ অভিবাসীরা বিনোদন শিল্পের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়। এটি শিল্পের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের জন্য একটি সতর্কতা যে তাদের অভিনেতা এবং কর্মীদের পটভূমি যাচাই করার প্রক্রিয়া আরও কঠোর করা উচিত।
সামগ্রিকভাবে, এই ঘটনা ভারতের অভিবাসন নীতি এবং আইন প্রয়োগ ব্যবস্থার পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। এটি প্রমাণ করে যে অবৈধ অভিবাসন মোকাবেলায় আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে, বিশেষ করে যখন এটি জাতীয় নিরাপত্তা এবং আইনের শাসনের সাথে জড়িত।
রিয়া বর্দের গ্রেফতার এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ একটি বৃহত্তর সমস্যার অংশ মাত্র। এটি দেখায় যে কীভাবে অবৈধ অভিবাসীরা জাল নথিপত্র ব্যবহার করে ভারতীয় নাগরিকত্ব অর্জন করতে এবং দেশের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে সক্ষম হয়। এই ধরনের ঘটনা শুধুমাত্র আইনি সমস্যা নয়, এটি দেশের অর্থনীতি এবং সামাজিক কাঠামোর উপরও প্রভাব ফেলে।
এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে, সরকার এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে অবৈধ অভিবাসন মোকাবেলায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা, নথিপত্র যাচাই প্রক্রিয়া আরও কঠোর করা এবং অবৈধ অভিবাসীদের সনাক্তকরণ ও বহিষ্কারের জন্য নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা।