Root canal vs tooth extraction comparison: দাঁতের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে প্রায়শই দুটি বিকল্প দেওয়া হয় – রুট ক্যানাল বা দাঁত তুলে ফেলা। কিন্তু কোন পদ্ধতিটি বেছে নেওয়া উচিত?
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে প্রথমে দুটি পদ্ধতির সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে জানা দরকার।রুট ক্যানাল হল একটি প্রক্রিয়া যেখানে দাঁতের ভিতরের সংক্রমিত অংশ পরিষ্কার করে সেখানে বিশেষ পদার্থ ভরে দেওয়া হয়। এর ফলে দাঁতটি সংরক্ষণ করা যায়। অন্যদিকে দাঁত তোলা হল সম্পূর্ণ দাঁতটিকে অপসারণ করা। দুটি পদ্ধতিরই কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে।রুট ক্যানালের সুবিধা হল এতে আসল দাঁতটি সংরক্ষণ করা যায়। এর ফলে চর্বণ ক্ষমতা ঠিক থাকে এবং মুখের আকৃতিও অপরিবর্তিত থাকে। তবে এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া যা দক্ষ চিকিৎসকের প্রয়োজন হয়। এছাড়া এর খরচও বেশি।অন্যদিকে দাঁত তোলা একটি সহজ ও কম খরচের প্রক্রিয়া।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করুন ৭ দিনে – বিশেষজ্ঞদের গোপন টিপস ফাঁস!
কিন্তু এতে দাঁত হারানোর ফলে চর্বণ ক্ষমতা কমে যেতে পারে এবং পাশের দাঁতগুলো সরে যেতে পারে। তাই অনেক সময় কৃত্রিম দাঁত লাগানোর প্রয়োজন হয় যা আরও খরচ বাড়ায়।গবেষণায় দেখা গেছে, রুট ক্যানালের সাফল্যের হার ৮৫% থেকে ৯৭% পর্যন্ত। অর্থাৎ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি কার্যকর। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি ব্যর্থ হতে পারে যেমন যদি সংক্রমণ পুরোপুরি দূর না হয় বা দাঁত ঠিকমত সিল না করা হয়।দাঁত তোলার পর সাধারণত ৩-৪ দিন ব্যথা থাকে। কিন্তু রুট ক্যানালের পর ব্যথা কম হয় এবং দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়। তবে রুট ক্যানালের পর দাঁতটি দুর্বল হয়ে যায় বলে ক্রাউন লাগানো প্রয়োজন হয়।জাপানে করা একটি বড় গবেষণায় দেখা গেছে, রুট ক্যানালের পর জটিলতার হার মাত্র ১০%। বয়স্ক রোগী এবং গভীরভাবে আটকে থাকা দাঁতের ক্ষেত্রে জটিলতার ঝুঁকি বেশি থাকে।
অক্সফোর্ডের বিশিষ্ট দন্ত চিকিৎসক ডা. আমির মির্জাই বলেন, “বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা দাঁত সংরক্ষণের চেষ্টা করি। তাই যদি সম্ভব হয় তবে রুট ক্যানালই প্রথম পছন্দ। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রে আলাদাভাবে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।”তিনি আরও বলেন, “যদি দাঁতটি খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা সংক্রমণ খুব বেশি ছড়িয়ে পড়ে তবে দাঁত তোলাই শ্রেয় হতে পারে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দাঁত তোলার ঝুঁকি বেশি থাকলে রুট ক্যানালই করা হয়।”American Association of Endodontists এর মতে, রুট ক্যানাল দীর্ঘমেয়াদে কম খরচের হয়। কারণ এতে আসল দাঁত থেকে যায় বলে পরে কৃত্রিম দাঁত লাগানোর প্রয়োজন হয় না। তারা বলেন, “কৃত্রিম দাঁত লাগানো একটি জটিল ও ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া যা কয়েক মাস সময় নিতে পারে।
“East Coast Endodontics এর মতে রুট ক্যানালের আরও কিছু সুবিধা হল:
- ব্যথা দূর করে
- তাপমাত্রা সংবেদনশীলতা কমায়
- অন্যান্য দাঁতে সংক্রমণ ছড়ানো রোধ করে
- দ্রুত ও সহজে করা যায়
- দাঁতের স্থানচ্যুতি রোধ করে
তবে রুট ক্যানালের কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। যেমন:
- সব ব্যাকটেরিয়া দূর না হলে পুনরায় চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে
- দাঁত দুর্বল হয়ে যায় বলে ভেঙে যেতে পারে
- কিছু গ্রুপের মতে এটি শরীরের অন্যান্য অসুস্থতার কারণ হতে পারে (যদিও এর প্রমাণ কম)
অন্যদিকে দাঁত তোলার ঝুঁকি আরও বেশি। যেমন:
- হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া
- পাশের দাঁত সরে যাওয়া
- ভবিষ্যতে আরও দাঁত হারানোর সম্ভাবনা বাড়ে
হার্ট ভালো রাখার তিন মূল মন্ত্র।
New Haven Dental Group এর মতে, “বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রুট ক্যানাল দাঁত তোলার চেয়ে ভাল বিকল্প। তবে যদি দাঁতটি খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে তোলাই শ্রেয়।”সুতরাং দেখা যাচ্ছে, রুট ক্যানাল ও দাঁত তোলা – দুটি পদ্ধতিরই কিছু সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসকরা রুট ক্যানালকেই অগ্রাধিকার দেন। কারণ এতে আসল দাঁতটি সংরক্ষণ করা যায়।তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করে রোগীর অবস্থার উপর। দাঁতের ক্ষতির মাত্রা, সংক্রমণের পরিমাণ, রোগীর বয়স ও স্বাস্থ্য, আর্থিক সামর্থ্য ইত্যাদি বিবেচনা করে চিকিৎসক সঠিক পদ্ধতি নির্বাচন করেন।
তাই যদি আপনার দাঁতে সমস্যা হয় তবে অবশ্যই একজন দক্ষ দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তিনি আপনার অবস্থা পরীক্ষা করে সবচেয়ে উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি সুপারিশ করবেন। নিজে থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। কারণ প্রতিটি ক্ষেত্রই আলাদা এবং একই পদ্ধতি সবার জন্য উপযোগী নাও হতে পারে।মনে রাখবেন, দাঁতের যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্রাশ করা, ফ্লস করা এবং দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত। এতে অনেক সমস্যা এড়ানো যায় এবং দাঁত দীর্ঘদিন সুস্থ থাকে। তবে কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এতে চিকিৎসা সহজ হয় এবং দাঁত হারানোর ঝুঁকি কমে।