রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (RSS) প্রধান মোহন ভাগবত সম্প্রতি OTT প্ল্যাটফর্মগুলির বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন যে এই প্ল্যাটফর্মগুলি নৈতিক দুর্নীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এগুলির নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন রয়েছে।
ভাগবত তাঁর বক্তব্যে OTT প্ল্যাটফর্মগুলিতে প্রচারিত বিষয়বস্তুকে “আপত্তিকর” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি মনে করেন যে এই ধরনের কন্টেন্ট সমাজের নৈতিক মূল্যবোধকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং বিশেষ করে যুব সমাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
RSS প্রধানের মতে, OTT প্ল্যাটফর্মগুলির জন্য আইনি নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। তিনি বলেন, “এই প্ল্যাটফর্মগুলি নৈতিক দুর্নীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এগুলির নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন রয়েছে।” তিনি আরও যোগ করেন যে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদেরও সচেতন থাকতে হবে যে এটি একটি “দ্বি-ধারযুক্ত তরবারি” এবং এর ব্যবহার দায়িত্বশীলভাবে করা উচিত।
OTT Subscription Savings Tips: খরচ কমানোর গোপন কৌশল [১০০% কার্যকরী]
ভাগবতের এই মন্তব্য ভারতে OTT প্ল্যাটফর্মগুলির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলমান বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বর্তমানে ভারতে OTT প্ল্যাটফর্মগুলি মূলত স্ব-নিয়ন্ত্রিত, যদিও সরকার কিছু নির্দেশিকা জারি করেছে।
২০২১ সালে ভারত সরকার Information Technology (Intermediary Guidelines and Digital Media Ethics Code) Rules 2021 নামে একটি নির্দেশিকা জারি করেছিল। এই নির্দেশিকায় OTT প্ল্যাটফর্মগুলির জন্য একটি ত্রি-স্তরীয় অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা প্রস্তাব করা হয়েছিল।
এই নির্দেশিকা অনুযায়ী:
১. প্রথম স্তরে, প্ল্যাটফর্মগুলি নিজেরাই একটি অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা গঠন করবে।
২. দ্বিতীয় স্তরে, একটি স্ব-নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকবে, যার প্রধান হবেন সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বা অন্য কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তি।
৩. তৃতীয় স্তরে থাকবে সরকার কর্তৃক গঠিত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি (IMC), যা ‘তদারকি ব্যবস্থা’ হিসেবে কাজ করবে।
তবে এই নির্দেশিকা সত্ত্বেও অনেকে মনে করেন যে OTT প্ল্যাটফর্মগুলির জন্য আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন রয়েছে। RSS প্রধানের সাম্প্রতিক মন্তব্য সেই দাবিকেই আরও জোরালো করেছে।
অন্যদিকে, OTT প্ল্যাটফর্মগুলির পক্ষে যুক্তি দেওয়া হয় যে এগুলি ব্যক্তিগত দর্শনের জন্য, সর্বসাধারণের জন্য নয়। তাই এগুলির উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা উচিত নয়। অনেকে মনে করেন যে এর ফলে সৃজনশীলতা ব্যাহত হতে পারে।
Internet and Mobile Association of India (IAMAI) সতর্ক করেছে যে OTT পরিষেবা প্রদানকারীদের উপর লাইসেন্সিং শর্ত আরোপ করলে তা স্টার্টআপগুলির জন্য অতিক্রম করা অসম্ভব বাধা তৈরি করতে পারে। অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ ভারতের জীবন্ত স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, ভবিষ্যতের উদ্ভাবনকে রুদ্ধ করতে পারে এবং বিপ্লবী প্রযুক্তির সম্ভাবনাকে সীমিত করতে পারে।
OTT প্ল্যাটফর্মগুলির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিতর্ক শুধু ভারতেই নয়, বিশ্বব্যাপী চলছে। বিভিন্ন দেশ বিভিন্নভাবে এই বিষয়টি মোকাবেলা করছে। কিছু দেশ কঠোর নিয়ন্ত্রণের পথ বেছে নিয়েছে, আবার কিছু দেশ স্ব-নিয়ন্ত্রণের উপর জোর দিচ্ছে।
বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ
ভারতের ক্ষেত্রে, OTT প্ল্যাটফর্মগুলির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যেও। Telecom Regulatory Authority of India (TRAI) এবং Department of Telecommunications (DoT), Ministry of Communications (MoC) এর সাথে Ministry of Electronics and Information Technology (MeitY) এর মতপার্থক্য রয়েছে যে কে OTT প্ল্যাটফর্মগুলি নিয়ন্ত্রণ করবে।
DoT OTT প্ল্যাটফর্মগুলিকে টেলিকমিউনিকেশন পরিষেবা হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করতে চায় এবং টেলিকম অপারেটরদের মতো নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। অন্যদিকে, IT মন্ত্রণালয় মনে করে যে Allocation of Business Rules অনুযায়ী ইন্টারনেট-ভিত্তিক যোগাযোগ পরিষেবাগুলি DoT এর এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না।
TRAI প্রথমে OTT যোগাযোগ পরিষেবাগুলির জন্য একটি নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরি করার বিরুদ্ধে সুপারিশ করেছিল। কিন্তু পরে তারা তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করেছে এবং কীভাবে এই পরিষেবাগুলি নিয়ন্ত্রণ করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ শুরু করেছে।
২০২২ সালে কেন্দ্রীয় সরকার OTT প্ল্যাটফর্মগুলি নিয়ন্ত্রণের জন্য Information Technology (Intermediary Guidelines and Digital Media Ethics Code) Rules 2021 বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এই নিয়মগুলি মোটামুটিভাবে OTT প্ল্যাটফর্মগুলিকে তাদের কন্টেন্ট সম্পর্কে আরও সতর্ক থাকতে বাধ্য করে।
নিয়মগুলি অনুযায়ী, OTT প্ল্যাটফর্মগুলি নিম্নলিখিত বিষয়গুলি নিশ্চিত করতে হবে:
১. ভারতের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কোনো কন্টেন্ট প্রচার করা যাবে না।
২. দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. বিদেশী রাষ্ট্রগুলির সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
৪. জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করতে পারে এমন কন্টেন্ট প্রচার করা যাবে না।
৫. বিভিন্ন জাতিগত ও ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুশীলন সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।