ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত ‘রূপশ্রী প্রকল্প’ দেশের নারী সমাজের জন্য এক উজ্জ্বল আশার আলো হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এই প্রকল্পটি বাল্যবিবাহ রোধ, কিশোরী ও তরুণী মেয়েদের ক্ষমতায়ন এবং তাদের শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য: রূপশ্রী প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো বাল্যবিবাহ রোধ করা এবং কিশোরী ও তরুণী মেয়েদের আর্থিক ও সামাজিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা। পশ্চিমবঙ্গের মহিলা ও শিশু উন্নয়ন এবং সমাজকল্যাণ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকে রাজ্যে বাল্যবিবাহের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
যোগ্যতা ও আবেদন প্রক্রিয়া: রূপশ্রী প্রকল্পে আবেদনের জন্য প্রার্থীদের বয়স 11 থেকে 50 বছরের মধ্যে হতে হবে। তারা অবশ্যই অবিবাহিত এবং দরিদ্র পরিবারের সদস্য হতে হবে। আবেদন প্রক্রিয়া দুইভাবে সম্পন্ন করা যায়:
আবেদনের সময় নিম্নলিখিত কাগজপত্র জমা দিতে হবে:
আর্থিক সহায়তা: রূপশ্রী প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেক যোগ্য প্রার্থী একবারে 50,000 টাকা পাবেন। এই অর্থ তাদের বিয়ের সময় প্রদান করা হয়। এই আর্থিক সহায়তা মেয়েদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
প্রকল্পের প্রভাব: পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রূপশ্রী প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকে রাজ্যে বাল্যবিবাহের হার 54% কমেছে। এছাড়া, প্রকল্পের সুবিধাভোগী মেয়েদের মধ্যে উচ্চ শিক্ষার হার 35% বৃদ্ধি পেয়েছে।
একজন সুবিধাভোগী, সুমিতা রায় (নাম পরিবর্তিত) জানান, “রূপশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে আমি না শুধু আর্থিক সহায়তা পেয়েছি, বরং নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আত্মবিশ্বাসও অর্জন করেছি। এখন আমি আমার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছি এবং ভবিষ্যতে একজন শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন দেখছি।”
চ্যালেঞ্জ ও সমাধান: প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগের অভাব এবং ডিজিটাল সাক্ষরতার কমতি অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। এই সমস্যা সমাধানে সরকার মোবাইল হেল্প ডেস্ক চালু করেছে, যেখানে কর্মীরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে আবেদন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করছেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: পশ্চিমবঙ্গ সরকার আগামী বছরগুলোতে রূপশ্রী প্রকল্পের আওতা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। এর অংশ হিসেবে, প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের জন্য দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
উপসংহার: রূপশ্রী প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গের কিশোরী ও নারীদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে। এটি শুধু বাল্যবিবাহ রোধেই নয়, নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আর্থিক স্বাবলম্বীতা অর্জনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই ধরনের উদ্যোগ ভারতের অন্যান্য রাজ্যের জন্যও অনুকরণীয় উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে।
মন্তব্য করুন