Community banking in Bangladesh: পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক বাংলাদেশের একটি সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংক যা গ্রামীণ অর্থনীতি ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান যা ২০১৪ সালের ৮ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর প্রধান লক্ষ্য হলো গ্রামীণ দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা এবং তাদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা।
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক একটি সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংক হিসেবে পরিচালিত হয়। এর সম্পূর্ণ মালিকানা বাংলাদেশ সরকারের হাতে রয়েছে। ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়, যা দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে এর কার্যক্রম তদারকি করে।ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ১৫ জন সদস্য রয়েছে। এর মধ্যে ৮ জন সরকার কর্তৃক মনোনীত হন, আর বাকি ৭ জন সদস্য নির্বাচিত হন প্রশাসনিক বিধি অনুযায়ী সদস্য শেয়ার হোল্ডারদের প্রতিনিধি হিসেবে। সরকার কর্তৃক নিযুক্ত পরিচালকদের মধ্য থেকে একজন চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।
রেশন কার্ড পাওয়ার বয়স সীমা: ১৮ বছর পূর্ণ হলেই আবেদন করা যাবে
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মূলধন কাঠামো
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ১০০০ কোটি টাকা এবং প্রাথমিক পরিশোধিত মূলধন ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে:
- ৫১% মূলধন সরকারের
- ৪৯% মূলধন প্রকল্পের আওতায় গঠিত ঋণ গ্রহীতা শেয়ার হোল্ডারদের
অনুমোদিত মূলধন ১০০ টাকা মূল্যমানের ১০ কোটি শেয়ারে বিভক্ত।
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সেবাসমূহ
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক মূলত গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সেবা প্রদান করে থাকে। এর প্রধান সেবাসমূহ হল:
- ক্ষুদ্রঋণ প্রদান
- সঞ্চয় জমা গ্রহণ
- কৃষি ঋণ
- ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ঋণ
- আর্থিক সাক্ষরতা কার্যক্রম
ব্যাংকটি বিভিন্ন প্রকারের ঋণ প্রদান করে থাকে। নিম্নে কয়েকটি প্রধান ঋণ প্রকল্পের বিবরণ দেওয়া হল:
ঋণের ধরন | সর্বনিম্ন পরিমাণ (টাকা) | সর্বোচ্চ পরিমাণ (টাকা) | সুদের হার |
---|---|---|---|
ক্ষুদ্র ঋণ (পিএসবি) | ৫০,০০০ | ১,০০,০০০ | ৮% |
কর্মসৃজন ঋণ | ১০,০০০ | ৫০,০০০ | ৫% |
কর্মসৃজন ঋণ-২ | ১০,০০০ | ৫০,০০০ | ৪% |
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কার্যক্রম ও লক্ষ্য
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য হল গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন। এর জন্য ব্যাংকটি নিম্নলিখিত কার্যক্রম পরিচালনা করে:
- গ্রাম সংগঠন সৃজন
- সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদান
- তহবিলের জোগান
- ঋণদান
- সঞ্চয়ে উৎসাহিত করা
- কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা
- ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উন্নয়নে অর্থায়ন
ব্যাংকটি “একটি বাড়ি একটি খামার” প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করা, তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের বিস্তৃতি
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক বাংলাদেশের সকল জেলার প্রতিটি উপজেলায় তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রতিটি উপজেলা চত্বরে ব্যাংকের একটি করে শাখা রয়েছে। এছাড়াও প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে এবং গ্রামে ব্যাংকের সমিতিভিত্তিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ঋণ নীতিমালা
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক তার সদস্যদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ঋণ প্রদান করে থাকে। ব্যাংকের ঋণ নীতিমালা অনুযায়ী, প্রধানত তিন ধরনের ঋণ প্রদান করা হয়:
- উদ্যোক্তা ঋণ: সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত
- মধ্যম উদ্যোক্তা ঋণ: ৫০,০০১ থেকে ৩,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত
- বিশেষ উদ্যোক্তা ঋণ: ৩,০০,০০০ থেকে ১০,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত
ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শর্ত রয়েছে, যেমন:
- ঋণগ্রহীতাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে
- শাখার অধিক্ষেত্রের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে
- বয়স ১৮-৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে
- সুস্থ্য ও সবল হতে হবে
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের বর্তমান নেতৃত্ব
বর্তমানে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের নেতৃত্বে রয়েছেন:
- চেয়ারম্যান: মোঃ আকরাম-আল-হোসেন
- ব্যবস্থাপনা পরিচালক: শেখ মোঃ জামিনুর রহমান
শেখ মোঃ জামিনুর রহমান ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। তার বর্তমান মেয়াদ ২০২৬ সালের ৭ এপ্রিল পর্যন্ত।
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক তার লক্ষ্য অর্জনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে:
- গ্রামীণ এলাকায় ব্যাংকিং সেবার প্রসার
- আর্থিক সাক্ষরতা বৃদ্ধি
- ঋণ ফেরতের হার বাড়ানো
- প্রযুক্তিগত উন্নয়ন
এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে:
- ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা চালু
- মোবাইল ব্যাংকিং সম্প্রসারণ
- আর্থিক শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার
- নতুন ঋণ প্রকল্প চালু
সরকার মহিলাদের জন্য ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋণ দিচ্ছে – জানুন কীভাবে পাবেন এই সুযোগ
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি একটি সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংক হিসেবে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য ব্যাংকিং সেবা সহজলভ্য করে তুলেছে। ব্যাংকটির কার্যক্রম দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে অবদান রাখছে। তবে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে যা মোকাবেলা করে ব্যাংকটিকে আরও কার্যকর ও দক্ষ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে।