Russell viper dangerous facts:রাসেল ভাইপার দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বিষাক্ত ও মারাত্মক সাপগুলির মধ্যে অন্যতম। এই সাপের কামড় প্রাণঘাতী হতে পারে এবং প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই সাপের দেখা মেলে। রাসেল ভাইপারের বিষ অত্যন্ত শক্তিশালী এবং এর কামড়ে মানুষের শরীরে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়।
রাসেল ভাইপারের বৈশিষ্ট্য
রাসেল ভাইপার একটি বড় আকারের সাপ, যার দৈর্ঘ্য সাধারণত ৪ থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এদের শরীরের রং সাধারণত বাদামি বা হলুদাভ, যার উপর কালো রঙের গোলাকার দাগ থাকে। এই সাপের মাথা ত্রিকোণাকৃতির এবং চোখ ছোট ও গোলাকার।
শারীরিক গঠন:
- দৈর্ঘ্য: ৪-৬ ফুট
- রং: বাদামি বা হলুদাভ, কালো দাগযুক্ত
- মাথা: ত্রিকোণাকৃতির
- চোখ: ছোট ও গোলাকার
রাসেল ভাইপার মূলত রাতের বেলায় সক্রিয় থাকে, তবে শীতকালে দিনের বেলাতেও তাদের দেখা যেতে পারে। এরা সাধারণত একাকী জীবনযাপন করে এবং মাটিতে বসবাস করে। দিনের বেলা এরা সূর্যের আলোয় শরীর গরম করতে পছন্দ করে।
সাপে কামড়ালে প্রাথমিক চিকিৎসা: জীবন বাঁচাতে এই ১০টি পদক্ষেপ অবশ্যই জানুন!
রাসেল ভাইপারের বিষের প্রভাব
রাসেল ভাইপারের বিষ অত্যন্ত শক্তিশালী এবং এর কামড়ে মানুষের শরীরে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। এই সাপের বিষের LD50 মাত্রা (যে পরিমাণ বিষ ৫০% ক্ষেত্রে মৃত্যু ঘটাতে পারে) হল ০.১৩৩ মিলিগ্রাম/কেজি ইন্ট্রাভেনাস, ০.৪০ মিলিগ্রাম/কেজি ইন্ট্রাপেরিটোনিয়াল এবং প্রায় ০.৭৫ মিলিগ্রাম/কেজি সাবকিউটেনিয়াস।
বিষের প্রভাব:
- তীব্র ব্যথা
- রক্তপাত
- কিডনি বিকল
- শ্বাসকষ্ট
- হৃদযন্ত্রের সমস্যা
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, রাসেল ভাইপারের কামড়ে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ২৯% পিটুইটারি গ্রন্থির মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল, যা পরবর্তীতে হাইপোপিটুইটারিজম নামক রোগের কারণ হয়েছিল।
রাসেল ভাইপারের কামড় থেকে বাঁচার উপায়
রাসেল ভাইপারের কামড় থেকে বাঁচতে সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করে আপনি নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন:
সতর্কতামূলক ব্যবস্থা
- সাপের এলাকায় সতর্কতা: যেসব এলাকায় রাসেল ভাইপার দেখা যায়, সেখানে চলাফেরার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করুন।
- লম্বা ঘাস ও ঝোপঝাড় এড়িয়ে চলুন: লম্বা ঘাস বা ঝোপঝাড়ে হাত দেওয়া বা সেখানে চলাফেরা করা থেকে বিরত থাকুন।
- সুরক্ষামূলক পোশাক পরুন: সাপের এলাকায় কাজ করার সময় বুট ও লম্বা প্যান্ট পরুন।
- রাতে আলো ব্যবহার করুন: রাতে চলাফেরার সময় টর্চ বা ফ্ল্যাশলাইট ব্যবহার করুন।
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখুন: আপনার বাড়ি ও আশপাশ পরিষ্কার রাখুন যাতে সাপ আকৃষ্ট না হয়।
কামড়ের পর করণীয়
যদি কোনও ব্যক্তি রাসেল ভাইপারের কামড়ের শিকার হন, তাহলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা উচিত:
- নড়াচড়া কমিয়ে দিন: কামড়ের স্থান নড়াচড়া করবেন না। পায়ে কামড়ালে বসে পড়ুন, হাতে কামড়ালে হাত স্থির রাখুন।
- ক্ষতস্থান পরিষ্কার করুন: সাবান দিয়ে ধীরে ধীরে ক্ষতস্থান ধুয়ে ফেলুন বা ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে দিন।
- আঁটসাঁট জিনিস খুলে ফেলুন: কামড়ের স্থানের কাছে থাকা ঘড়ি, গহনা বা আঁটসাঁট কাপড় খুলে ফেলুন।
- ক্ষতিকর পদ্ধতি এড়িয়ে চলুন: ক্ষতস্থানে ছিদ্র করা, সুই ফোটানো বা মলম লাগানো থেকে বিরত থাকুন।
- দ্রুত চিকিৎসা নিন: ঐতিহ্যগত চিকিৎসক (ওঝা) এর কাছে সময় নষ্ট না করে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যান।
- শান্ত থাকুন: আতঙ্কিত হবেন না। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে রাসেল ভাইপারের অ্যান্টিভেনম পাওয়া যায়।
রাসেল ভাইপারের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ
বাংলাদেশে সম্প্রতি রাসেল ভাইপারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে এই সাপের কামড়ের ঘটনা বেড়েছে। ২০১৮ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে রাসেল ভাইপারের কামড়ে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ১৭টি জেলায় এই সাপের কামড়ের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে।
সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ:
- সেচ ব্যবস্থার উন্নতি
- বছর ভর ফসল উৎপাদন
- ইঁদুরের সংখ্যা বৃদ্ধি
গবেষকরা মনে করছেন, সেচ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে কৃষকরা সারা বছর ধরে ফসল উৎপাদন করতে পারছেন। এর ফলে ইঁদুরের সংখ্যাও বেড়েছে, যা রাসেল ভাইপারের প্রিয় খাদ্য। এভাবে রাসেল ভাইপারের প্রজনন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হয়েছে।
চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়: পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনম কতটা কার্যকর?
রাসেল ভাইপারের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ
রাসেল ভাইপারের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কিছু প্রাণী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এদের মধ্যে রয়েছে:
- নেউল
- গোসাপ
- বনবিড়াল
- ঈগল
- সারস
এই প্রাণীরা রাসেল ভাইপারকে শিকার করে এদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
রাসেল ভাইপার দক্ষিণ এশিয়ার একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক সাপ। এর কামড় প্রাণঘাতী হতে পারে এবং প্রতি বছর অনেক মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে সতর্কতা অবলম্বন করে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই সাপের কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে অ্যান্টিভেনম পাওয়া যায়, যা রাসেল ভাইপারের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের মাধ্যমে রাসেল ভাইপারের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। সচেতনতা ও সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা এই মারাত্মক সাপের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি।