Sachin Tendulkar initiative: ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজের ট্রফি নতুনভাবে নামকরণের পর মহান ক্রিকেটার শচীন তেন্ডুলকর পাতৌদি পরিবারের উত্তরাধিকার রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। ২০২৫ সালে BCCI এবং ECB যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে পূর্বের ‘পাতৌদি ট্রফি’ এখন ‘অ্যান্ডারসন-তেন্ডুলকর ট্রফি’ নামে পরিচিত হবে। এই পরিবর্তনের পর তেন্ডুলকর প্রথমেই পাতৌদি পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন এবং তাদের আশ্বাস দেন যে তিনি এই মহান ঐতিহ্য বজায় রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।
তেন্ডুলকর তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “পাতৌদি উত্তরাধিকার জীবিত রাখতে হবে। ভারতীয় ক্রিকেটে পাতৌদি পরিবারের অবদান আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। আমি পরিবারের সাথে কথা বলেছি এবং তাদের বলেছি যে আমি এই উত্তরাধিকার জীবিত রাখার জন্য যা কিছু করতে পারি তা করব।” এই বিষয়ে তিনি আরও জানান যে ট্রফি অবসরের সিদ্ধান্ত BCCI এবং ECB-র হাতে ছিল, এবং যখন এই বিষয়ে তাকে অবহিত করা হয়েছিল তখন তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন এই ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য।
পাতৌদি ট্রফির ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবময় এবং তাৎপর্যপূর্ণ। ২০০৭ সালে ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে প্রথম টেস্ট ম্যাচের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই ট্রফি প্রবর্তিত হয়েছিল। এটি পাতৌদি পরিবারের সম্মানে নামকরণ করা হয়েছিল, বিশেষত ইফতিখার আলী খান পাতৌদি এবং তার পুত্র মনসুর আলী খান পাতৌদির স্মরণে। ইফতিখার আলী খান পাতৌদি ছিলেন একমাত্র ক্রিকেটার যিনি ভারত ও ইংল্যান্ড উভয় দেশের হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলেছিলেন।
‘টাইগার’ পাতৌদি নামে পরিচিত মনসুর আলী খান পাতৌদি ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সফল অধিনায়ক হিসেবে বিবেচিত হন। ১৯৬২ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতীয় দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং ৪৬টি টেস্টের মধ্যে ৪০টিতে অধিনায়কত্ব করেছেন। যদিও তার অধিনায়কত্বে দল মাত্র নয়টি ম্যাচ জিতেছিল, তবুও তিনি দলে বিজয়ের আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলেছিলেন। ১৯৬০-এর দশকের শুরুতে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় তার ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়, কিন্তু এই বিশাল প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তিনি খেলা চালিয়ে যান এবং দলের অধিনায়কত্ব করেন।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে ১৯৬৭ সালে তার নেতৃত্বে ভারত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩-১ গোলে জিতে বিদেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের গৌরব অর্জন করে। তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে মোট ২৭৯৩ রান সংগ্রহ করেছেন, যার মধ্যে ৬টি শতক এবং ১৬টি অর্ধশতক রয়েছে। ১৯৬৪ সালে তিনি অর্জুন পুরস্কার এবং ১৯৬৭ সালে পদ্মশ্রী সম্মাননা লাভ করেন।
তেন্ডুলকরের হস্তক্ষেপের ফলে সমাধান বের হয়েছে। ICC চেয়ারম্যান জয় শাহ এবং ECB-র সাথে একাধিক আলোচনার পর ‘পাতৌদি মেডেল অব এক্সিলেন্স’ নামে একটি পদক চালু করা হয়েছে, যা প্রতিটি সিরিজের জয়ী অধিনায়ককে প্রদান করা হবে। তেন্ডুলকর এই বিষয়ে বলেছেন, “আমি জয় শাহ, BCCI এবং ECB-র সাথে কথা বলেছি এবং আমার ভাবনাগুলো শেয়ার করেছি। এরপর আমরা দ্বিতীয় কলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে জয়ী অধিনায়ককে পাতৌদি মেডেল অব এক্সিলেন্স প্রদান করা হবে।”
পূর্বে ভারত যখন ইংল্যান্ড সফরে যেত, তখন পাতৌদি ট্রফির জন্য খেলা হতো। কিন্তু এখন এটি তেন্ডুলকর ও জেমস অ্যান্ডারসন ট্রফি নামে পরিচিত হবে। এই পরিবর্তনে তেন্ডুলকর গর্ব অনুভব করলেও তিনি ভারতের অন্যতম মহান নেতার উত্তরাধিকার সংরক্ষণের বিষয়েও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন।
তেন্ডুলকর ESPNcricinfo-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমার মনে আছে কিছুদিন আগে যখন ECB এবং BCCI পাতৌদি ট্রফি অবসর নিয়েছিল, এবং কয়েক মাস পরে যখন আমাকে জানানো হয়েছিল যে ট্রফিটি আমাদের দুজনার নামে নামকরণ করা হবে, এটা ছিল একটা আনন্দদায়ক বিস্ময়। এর পরেই আমি পাতৌদি পরিবারকে ফোন করেছি এবং তাদের সাথে কথা বলেছি।”
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাতৌদি পরিবারের অবদান অনস্বীকার্য। ইফতিখার আলী খান পাতৌদি ১৯৪৬ সালে ভারতের অধিনায়কত্ব করেছিলেন এবং তিনি ছিলেন ভোপালের শেষ শাসক নবাব। অন্যদিকে তার পুত্র মনসুর আলী খান পাতৌদি ১৯৬৮ সালে উইজডেন ক্রিকেটার অব দ্যা ইয়ার নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি পরবর্তীতে বলিউড অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুরকে বিয়ে করেন এবং তাদের তিন সন্তান – সাইফ আলী খান, সোহা আলী খান এবং সাবা আলী খান।
এই পুরো প্রক্রিয়ায় তেন্ডুলকরের ভূমিকা প্রশংসনীয়। তিনি কেবল নিজের সম্মান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেননি, বরং ভারতীয় ক্রিকেটের ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তার এই উদ্যোগের ফলে পাতৌদি নাম এখনও ভারত-ইংল্যান্ড ক্রিকেট প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাথে জড়িত থাকবে এবং প্রতিটি সিরিজের জয়ী অধিনায়ক এই মহান ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে পাতৌদি মেডেল অব এক্সিলেন্স লাভ করবেন।