ভারতীয় ক্রিকেটে ২০ জুন তারিখটি বরাবরই বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। এই দিনেই টেস্ট অভিষেক হয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রাহুল দ্রাবিড় এবং বিরাট কোহলির মতো কিংবদন্তিদের। এবার সেই ঐতিহাসিক দিনে ভারতের টেস্ট দলে ৩১৭তম ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক ঘটল তরুণ সাই সুদর্শনের। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লিডসের হেডিংলিতে প্রথম টেস্টে, চেতেশ্বর পূজারার হাত থেকে টেস্ট ক্যাপ গ্রহণ করেন চেন্নাইয়ের এই বাঁহাতি ব্যাটার।
সাই সুদর্শনের অভিষেক ঘিরে প্রত্যাশা ছিল আকাশছোঁয়া। আইপিএল ২০২৫-এ সর্বাধিক রান করে ‘অরেঞ্জ ক্যাপ’ জেতা এই তরুণ ব্যাটার ভারতের টপ অর্ডারে নতুন যুগের সূচনা করতে এসেছেন। তার আগে ভারতের হয়ে তিনটি ওয়ানডে ও একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেট ও আইপিএলে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের সুবাদে নির্বাচকদের নজর কাড়েন সুদর্শন।
এই ম্যাচে ভারতের ব্যাটিং অর্ডারে বড় পরিবর্তন দেখা যায়। অধিনায়ক শুভমান গিল চতুর্থ স্থানে, ঋষভ পন্থ পঞ্চম স্থানে, আর সাই সুদর্শনকে তিন নম্বরে ব্যাট করতে পাঠানো হয়—যে পজিশনটি এক সময় দ্রাবিড় ও পূজারার মতো কিংবদন্তিরা দখল করেছিলেন।
তবে অভিষেক ইনিংসে সুদর্শনের জন্য দিনটি স্বপ্নের মতো শুরু হলেও, বাস্তবতা ছিল কঠিন। ওপেনার কে এল রাহুল ও যশস্বী জয়সওয়াল ৯১ রানের জুটি গড়ে ভালো শুরু এনে দিলেও, তিন নম্বরে নেমে সুদর্শন মাত্র চার বলেই ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকসের বলে উইকেটকিপার জেমি স্মিথের হাতে ক্যাচ দিয়ে শূন্য রানে ফিরে যান। প্রথম বলেই এলবিডব্লিউর আবেদন থেকে বেঁচে গেলেও, আত্মবিশ্বাস খুঁজে পাননি। তার এই দ্রুত বিদায় ভারতীয় সমর্থকদের হতাশ করলেও, ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বলছেন—টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে নতুনদের জন্য চ্যালেঞ্জ বরাবরই বড়।
বিরাট কোহলির ঐতিহাসিক মাইলফলক: টেস্ট সিরিজে ১২,০০০ রান অতিক্রম!
তবুও, সুদর্শনের টেস্ট অভিষেকের তাৎপর্য কম নয়। ২০ জুন তারিখে ভারতের টেস্ট অভিষেকের তালিকায় তিনি ষষ্ঠ ক্রিকেটার। তার আগে এই দিনে অভিষেক হয়েছিল সৌরভ, দ্রাবিড়, কোহলি, অভিনব মুখুন্দ ও প্রবীণ কুমারের। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৯৬ সালে লর্ডসে ১৩১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন, দ্রাবিড় করেছিলেন ৯৫। কোহলির অভিষেক হয় ২০১১ সালে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে।
সাই সুদর্শনের ক্রিকেট-জীবনের শুরুটা একটি ক্রীড়াবিদ পরিবার থেকে। তার বাবা আর. ভরদ্বাজ ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করা অ্যাথলিট, মা উষা ভরদ্বাজ ছিলেন রাজ্যস্তরের ভলিবল খেলোয়াড়4। চেন্নাইয়ের এম. ভেঙ্কটরামণার কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে নজরকাড়া পারফরম্যান্স করেন। ২০২১ সালে তামিলনাড়ু দলে সুযোগ, এরপর আইপিএলে গুজরাট টাইটান্সের হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স, ২০২৩ আইপিএল ফাইনালে দলের অন্যতম ভরসা হয়ে ওঠেন।
ভারতের টেস্ট দলে তার অভিষেক এমন এক সময়ে, যখন কোহলি, রোহিত শর্মা, রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মতো অভিজ্ঞরা অবসর নিয়েছেন। নতুন নেতৃত্বে, নতুন মুখদের নিয়ে ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। সুদর্শনের টেস্ট অভিষেক তাই শুধু ব্যক্তিগত নয়, গোটা দলের জন্যও এক নতুন যুগের সূচনা।
যদিও প্রথম ইনিংসে রান পাননি, তবুও তার প্রতিভা ও সাম্প্রতিক ফর্মের কারণে ক্রিকেট মহলে তার প্রতি প্রত্যাশা অটুট। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ধারাবাহিক সুযোগ পেলে সুদর্শন ভারতের টেস্ট দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন। তার অভিষেকের দিনটি যেমন ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে, ঠিক তেমনই ভবিষ্যতে তার ব্যাটও ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে উঠতে পারে।
সবশেষে বলা যায়, ২০ জুন তারিখটি ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে নতুন করে স্মরণীয় হয়ে থাকল। সৌরভ, দ্রাবিড়, কোহলির পথ ধরে সাই সুদর্শনও টেস্ট ক্রিকেটে পা রাখলেন। প্রথম ইনিংসে না পারলেও, সামনে রয়েছে অনেক সুযোগ—তার প্রতিভা ও পরিশ্রমই ঠিক করে দেবে, তিনি কতটা উজ্জ্বল হতে পারেন ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে।